ভারতে ফেরত পাঠানো হলো অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে
Published: 5th, December 2025 GMT
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ‘পুশ ইন’ করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়। তবে সোনালী বিবির স্বামীকে ফেরত নেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে চার সপ্তাহের মধ্যে সোনালী বিবিদের ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলা থেকে কাজের সন্ধানে সোনালী বিবি ও তাঁর পরিবার দিল্লি গিয়েছিল। গত জুন মাসে বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের ধরা হয়। তারপর সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। গত ২০ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আলীনগর থেকে সোনালী বিবি, তাঁর স্বামী, সন্তানসহ ভারতের ছয় নাগরিককে আটক করে পুলিশ। ওই ছয় ভারতীয় নাগরিক হলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ধিতোরা গ্রামের দানিশ শেখ (২৮), তাঁর স্ত্রী সোনালী বিবি (২৬), তাঁদের ৮ বছর বয়সী ছেলে এবং সুইটি বিবি (৩৩) ও তাঁর ১৬ ও ৬ বছর বয়সী ছেলে। তাঁদের মধ্যে সোনালী বিবি অন্তঃসত্ত্বা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ জানান, ওই ছয়জনের মধ্যে সোনালী বিবির স্বামী দানিস শেখসহ বাকি চারজনকে ফেরত নেয়নি বিএসএফ।
বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পুশ ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তাঁর ৮ বছরের সন্তানকে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.
হস্তান্তর শেষে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশ ইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশ ইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
২০ আগস্ট ওই ছয় ভারতীয়কে আটকের পর দুটি শিশু ছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১ ডিসেম্বর আদালত ওই চারজনকে জামিন দেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে রাত আটটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তাঁরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলা এলাকার বাসিন্দা সোনালী বিবির আত্মীয় ফারুক হোসেনের জিম্মায় তাঁদের জামিন দেওয়া হয়। তবে জামিনে মুক্তির দেড় ঘণ্টা পর ওই দিনই রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
ভারতীয় নাগরিক হওয়ার যাবতীয় প্রমাণ সাপেক্ষে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট সোনালী বিবিদের ফেরত আনার নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তেমন উদ্যোগী হচ্ছিল না। এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মানবিক কারণে সোনালী বিবিদের দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দেন। গত বুধবার সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতির কথা জানান। এরপর আজ শুক্রবার সোনালী বিবি ও তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে নিল ভারত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ ব এসএফ প শ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে সুখীরাম উরাং (২৫) নামের বাংলাদেশি এক তরুণ নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুখীরামের বাড়ি কর্মধার মুরইছড়া বস্তি এলাকায়।
স্থানীয় লোকজনের বরাতে কুলাউড়া থানা-পুলিশ জানায়, সুখীরাম বেলা দেড়টার দিকে মুরইছড়া সীমান্তের ১ হাজার ৮৪৪ ও ১ হাজার ৮৪৫ নম্বর মূল সীমান্তখুঁটি এলাকায় গরু চরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তাঁর পিঠে গুলি লাগলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে সুখীরাম মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মুরইছড়া সীমান্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৬ ব্যাটালিয়নের আওতায় পড়েছে। এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাটি শুনেছেন। সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ মারা যেতে পারেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।