অনলাইন ক্যাটালগ ও ই-কমার্সের শরিয়া দৃষ্টিকোণ
Published: 6th, December 2025 GMT
ফিকহবিদদের পরিভাষায় ‘অনুপস্থিত পণ্যের বিক্রয়’ হলো এমন পণ্যের বেচাকেনা, যা বিক্রেতার মালিকানাধীন এবং বাস্তবে অস্তিত্বশীল, কিন্তু চুক্তির মজলিসে (বৈঠকে) ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই তা চোখে দেখতে পাচ্ছে না। এ প্রকার বিক্রয় ‘অবিদ্যমান বস্তুর বিক্রয়’ থেকে ভিন্ন। কারণ, এ ক্ষেত্রে পণ্যটি অস্তিত্বশীল ও বিক্রেতার মালিকানাধীন, কিন্তু দৃষ্টির আড়ালে বা অনুপস্থিত।
বিক্রীত পণ্য নির্ধারণের সাধারণ নীতিমালাফিকহি মতপার্থক্য আলোচনার আগে অনুপস্থিত পণ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নীতিমালা সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক:
১.
শারীরিক ইঙ্গিত বা ইশারা: ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে বিক্রীত পণ্যকে সংজ্ঞায়িত ও নির্দিষ্ট করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় হলো শারীরিক ইঙ্গিত বা ইশারা। যদি পণ্যটি চুক্তিকারী উভয়ের সামনে উপস্থিত থাকে এবং ইশারার মাধ্যমে ক্রেতা তা দেখে ও নিশ্চিত হয়, তবে সেই বিক্রয় অবশ্যই ‘লাজিম’ বা বাধ্যতামূলক হয়।
২. বর্ণনা প্রসঙ্গে নিয়ম: মনে রাখতে হবে। উপস্থিত পণ্যের বর্ণনা ততটা জরুরি নয়, কিন্তু অনুপস্থিত পণ্যের বর্ণনা মূল্যবান।
উপস্থিত পণ্যে: যদি বিক্রেতা উপস্থিত একটি পণ্যের দিকে ইশারা করে, কিন্তু এমন একটি বর্ণনা দেয়, যা ক্রেতার দেখা বস্তুর বিপরীত (যেমন একটি লাল কাপড় দেখিয়ে বলল এটি নীল), আর ক্রেতা তা দেখে সন্তুষ্ট হয়, তবে পরবর্তীকালে ক্রেতা বর্ণনার ভিত্তিতে দাবি করতে পারে না। কেননা, সে যা দেখে সন্তুষ্ট হয়েছে, তা–ই গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বর্ণনা নিরর্থক।
অনুপস্থিত পণ্যে: যদি পণ্য অনুপস্থিত থাকে, তবে তা হয় ‘বায়-সালাম’ (অগ্রিম বিক্রয়) পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার মাধ্যমে, অথবা স্থান উল্লেখ করে বিক্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বর্ণনা অত্যন্ত মূল্যবান এবং যদি পণ্য বর্ণনার সঙ্গে না মেলে, তবে ক্রেতার জন্য ‘খিয়ারু ফাওয়াতিল ওয়াস্ফ’ বা ‘বর্ণনা ছুটে যাওয়ার কারণে বাতিল করার অধিকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. পণ্যের প্রকারভেদ (জিন্স) ও গুণের (ওয়াস্ফ) ভুল
পণ্যের প্রকারভেদে ভুল: যদি বিক্রেতা ‘আমি আপনার কাছে এই ঘোড়া বিক্রি করলাম’ বলে একটি উটের দিকে ইশারা করে, তবে বিক্রয় বাতিল হবে। কারণ, নাম (জিন্স) গণ্য হবে। জিন্সের পার্থক্য পণ্যটিকে অবিদ্যমানের পর্যায়ে নিয়ে আসে। কাফি (রহ.) স্পষ্ট বলেছেন, যদি বিক্রিতে জিন্সের নাম উল্লেখ না করা হয় (যেমন আমি একটি কাপড় বিক্রি করলাম বলে চুপ থাকে), তবে সর্বসম্মতিক্রমে বিক্রয় অবৈধ।
অস্পষ্ট গুণ বা বিশেষণে ভুল: যদি এমন কোনো গুণ যা সরাসরি দৃষ্টি দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না (যেমন গরুটি বেশি দুধ দেয়), তা চুক্তিতে শর্ত করা হয় এবং পরবর্তীকালে তার বিপরীত প্রমাণিত হয়, তবে ক্রেতার জন্য বিকল্পের অধিকার (খিয়ার) থাকে, যদিও পণ্যটি চুক্তির মজলিসে উপস্থিত থাকে।
আরও পড়ুনরিজিক কমে যাওয়ার ৩ কারণ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩অনুপস্থিত পণ্য বিক্রয়ের বিধান: ফিকহি মতপার্থক্যঅনুপস্থিত পণ্য বিক্রয়ের বিষয়ে ফিকহবিদেরা প্রধানত দুটি দিকে বিভক্ত:
প্রথম অভিমত: অনুপস্থিত পণ্য বিক্রয় জায়েজ। এটাই জুমহুর বা অধিকাংশ ফকিহ্র মত। হানাফি, মালেকি, হাম্বলি (প্রকাশ্য মতে) এবং শাফেঈ মাজহাবের পূর্বের (কাদিম) মতে এই বিক্রয় জায়েজ। তবে এর সঙ্গে বিভিন্ন শর্ত ও বিস্তারিত নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে:
হানাফি: শর্তহীনভাবে জায়েজ। খিয়ারুর রুইয়া (দেখার পর বাতিলের অধিকার) প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রেতা দেখার পর চাইলে গ্রহণ করতে পারে বা বাতিল করতে পারে। যদি ক্রেতা দেখার আগেই মারা যায়, তবে উত্তরাধিকারীর জন্য এই অধিকার থাকে না এবং চুক্তি বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। (ইবনে নুজাইম, আল-বাহরুর রায়েক্ব, ৬/৫-৭, বৈরুত: দারুল কিতাবিল ইসলামি, ১৯৯৭)
মালেকি: নির্দিষ্ট বর্ণনার ভিত্তিতে জায়েজ। ১. পণ্য যেন অতিরিক্ত কাছে না থাকে (যা সহজেই দেখা সম্ভব)। ২. পণ্য যেন অতিরিক্ত দূরে না থাকে (যা হস্তান্তরের আগেই পরিবর্তনের আশঙ্কা থাকে)। ৩. বিক্রেতাকে অবশ্যই সালামের মতো বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে। যদি বর্ণনার সঙ্গে না মেলে, তবে ক্রেতার খিয়ারুল খালাফ (বর্ণনা ছুটে যাওয়ার কারণে বাতিলের অধিকার) থাকবে। (আল-কুরতুবি, আল-জামি’লি আহকামিল কুরআন, ৩/৩১০, কায়রো: দারুল কুতুবিল মিসরিয়্যাহ, ১৯৩৮)
হাম্বলি: বিস্তারিত বর্ণনার ভিত্তিতে জায়েজ। শুধু যদি বর্ণনা না মেলে, তবেই ক্রেতার বাতিল করার অধিকার থাকবে। বর্ণনা মিলে গেলে বিক্রয় বাধ্যতামূলক। (হানাফিদের মতের বিপরীতে, যারা মিললেও খিয়ার দেন)। (ইবনে কুদামা, আল-মুগনি, ৪/১৪৭-১৪৮, রিয়াদ: মাকতাবাতুল কায়রো, ১৯৬৮)
দ্বিতীয় অভিমত: অনুপস্থিত পণ্য বিক্রয় জায়েজ নয়। এটি শাফেঈ মাজহাবের নতুন (জাদিদ) ও প্রসিদ্ধ মত এবং ইমাম আহমাদের থেকেও একটি বর্ণনা রয়েছে।
শাফেয়ি মাজহাব: এই বিক্রয় সহিহ নয়, এমনকি যদি বিস্তারিত বর্ণনাও দেওয়া হয়। ইমাম শাফেঈ (রহ.) মজনিকে (তাঁর ছাত্র) বলেছেন, ‘এ ধরনের কোনো বিক্রয়ই জায়েজ নয়। কারণ, বর্ণনাভিত্তিক বিক্রয় তখনই জায়েজ হয়, যখন তা বিক্রেতার পক্ষ থেকে গ্যারান্টিযুক্ত হয়।’ এর কারণ হলো, বিক্রয়টি গ্বারাআর (অনিশ্চয়তা বা ধোঁকা) নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। কারণ, পণ্যটির দৃশ্যমানতা অনিশ্চিত।
শাফেয়ি ব্যতিক্রম: তাঁরা শুধু একটি ক্ষেত্রে জায়েজ বলেছেন, যখন পণ্যটি ‘আল-বারনামাজ’ (তালিকা বা ক্যাটালগ) বা ‘আল-উন্মুজাজ’ (নমুনা) অনুসারে বিক্রি হয় এবং শর্ত থাকে যে এই নমুনা বিক্রয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে (যেমন ‘আমি আপনাকে এই ঘরের গম বিক্রি করলাম, আর এটি তার নমুনা’)।
হাম্বলি (অপ্রসিদ্ধ মতে): ‘আল-মুগনি’ গ্রন্থের লেখক হাম্বলি মাজহাবের ইমাম আহমদ (রহ.) থেকে একটি অসহিহ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যা এ বিক্রয়কে নিষিদ্ধ করে। আল-মারদাভি এ বর্ণনাকে মাজহাবের সঠিক মত বলে গণ্য করেছেন।
আরও পড়ুনখাদিজা (রা.) কী ধরনের ব্যবসা করতেন০৩ জুলাই ২০২৩দলিলের আলোচনা ও পর্যালোচনা১. ‘গ্বারার’ (অনিশ্চয়তা/ধোঁকা) সম্পর্কিত হাদিসের আলোচনা:
নিষেধকারীদের দলিল: তাঁরা ‘গ্বারার’ (অনিশ্চয়তা) থেকে নিষেধকারী হাদিসকে দলিল হিসেবে পেশ করেন, যেহেতু পণ্য দেখা যাচ্ছে না, তাই এতে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
পর্যালোচনা: এই যুক্তি দুর্বল। কারণ, যদি পণ্যটির বর্ণনা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়, তবে গ্বারার দূর হয়ে যায়। তখন পণ্যটি যেন দেখা পণ্যের মতোই নিশ্চিত হয়। শরিয়তের বিভিন্ন নস (আয়াত/হাদিস) প্রমাণ করে যে বর্ণনা (ওয়াস্ফ) দেখার স্থান দখল করতে পারে।
২. ‘তোমার নিকট যা নেই, তা বিক্রি করো না’ হাদিসের আলোচনা:
নিষেধকারীদের দলিল: তাঁরা এই হাদিসকে (লা তাবি’মা লাইসা ‘ইনদাকা) দলিল হিসেবে পেশ করেন এই যুক্তিতে যে অনুপস্থিত পণ্য বিক্রেতার ‘কাছে নেই’।
পর্যালোচনা: এই হাদিস অনুপস্থিত পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, যা বিক্রেতার মালিকানাধীন। হাদিসে ‘কাছে নেই’ দ্বারা মালিকানা ও হস্তান্তরের সক্ষমতা বোঝানো হয়েছে, চুক্তির মজলিসে শারীরিক উপস্থিতি নয়। যে ব্যক্তি অনুপস্থিত পণ্যের মালিক, সে বলতে পারে যে বস্তুটি তার ‘কাছে আছে’, যা সে মালিক নয়, এমন বস্তুর ক্ষেত্রে বলতে পারে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৭৩)
৩. ‘খেজুরের ভেতরের আঁটির বিক্রয়ের’ ওপর কিয়াসের আলোচনা:
নিষেধকারীদের দলিল: তাঁরা অনুপস্থিত পণ্যকে খেজুরের ভেতরের আঁটি বিক্রয়ের সঙ্গে কিয়াস (তুলনা) করেন, যা দৃষ্টির বাইরে।
পর্যালোচনা: এটি ‘কিয়াসে মা’আল-ফারিক’ (পার্থক্য সত্ত্বেও কিয়াস)। কারণ, অনুপস্থিত পণ্যটি মালিকানাধীন ও বর্ণিত, যা খেজুরের ভেতরের আঁটির মতো সম্পূর্ণ অজ্ঞাত বা অ-বিদ্যমান বস্তুর সমতুল্য নয়।
৪. অনুমোদনকারীদের দলিলের সমালোচনা
অনুমোদনকারীদের দলিল হিসেবে পেশ করা খিয়ারুর রুইয়া–সম্পর্কিত হাদিসগুলো (আবু হুরায়রা ও মাকহুলের হাদিস) মুহাদ্দিসদের ঐকমত্যে দুর্বল এবং দলিলের জন্য যথেষ্ট নয় বলে সমালোচনা করা হয়েছে।
প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতউল্লিখিত দলিল ও পর্যালোচনা শেষে জুমহুরের (অধিকাংশের) মতটিই প্রাধান্য পায়, যা বিস্তারিত বর্ণনার ভিত্তিতে অনুপস্থিত পণ্য বিক্রয়কে জায়েজ বলে। এর কারণসমূহ হলো:
এই মতের অনুকূল দলিলের শক্তিমত্তা।
নিষেধকারীদের দলিলগুলোর যৌক্তিক পর্যালোচনা ও খণ্ডন।
বর্ণনার পর্যাপ্ততা: একটি নিখুঁত বর্ণনা একটি এলোমেলো দেখার চেয়েও অনেক বেশি সত্য হতে পারে। অতএব বর্ণনা (ওয়াস্ফ) অজ্ঞতা দূরীকরণে দেখার স্থান দখল করে।
সমসাময়িক প্রয়োগজুমহুরের বৈধতার মতামতের ভিত্তিতে আধুনিক উপায়ে অনুপস্থিত পণ্য বিক্রয়ের নিম্নলিখিত দিকগুলো শরিয়া পরিপালন করে:
১. ইলেকট্রনিক বর্ণনা ও ক্যাটালগ: ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে (যেমন অ্যামাজন, নুন) প্রদর্শিত ছবি ও পণ্যের বিবরণ হলো ‘আল-বারনামাজ’ বা ক্যাটালগের সমতুল্য। যদি ছবি ও বিবরণ নিখুঁত হয় এবং পর্যবেক্ষণজনিত চরম অজ্ঞতা দূর করে, তবে তা দেখার স্থান দখল করে এবং এই বিক্রয় জায়েজ।
২. যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিক্রয় (ফোন/ইন্টারনেট/টিভি): এই ক্ষেত্রে মৌখিক বা দৃশ্যমান (স্ক্রিনের মাধ্যমে) বর্ণনার ওপর নির্ভর করা হয়। যদি বর্ণনাটি চরম অজ্ঞতা দূর করতে যথেষ্ট হয়, তবে এই বিক্রয় বৈধ।
৩. ব্র্যান্ড বা ট্রেডমার্ক (Branding): ট্রেডমার্ক পণ্যের গুণমান ও প্রকারের একটি অন্তর্নিহিত বর্ণনা হিসেবে বিবেচিত হয়, যার ওপর ক্রেতা নির্ভর করে। এটিও গ্বারার (অনিশ্চয়তা) কমাতে সাহায্য করে।
৪. স্থাবর সম্পত্তি ও গাড়ি বিক্রয়ের বর্ণনা: জমি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রকৌশল নকশা বা গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে বিস্তারিত প্রযুক্তিগত বর্ণনা অনুপস্থিত পণ্যের বর্ণিত বিক্রয়ের বিধানের আওতায় পড়ে।
সূত্র: ইসলাম অনলাইন ডট নেট
আরও পড়ুনজীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ ত দল ল র অন শ চ হ ম বল র বর ণ উল ল খ প রক র র জন য বস ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সংখ্যালঘু প্রার্থী বাড়াতে পারে জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী এর আগে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলের নেতাদের বাইরে কাউকে প্রার্থী করেনি। জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম রুকন পদধারী নেতারা ছিলেন। এবার সেখানে দলটি কিছুটা শিথিল অবস্থান নিয়েছে। ভিন্নধর্মাবলম্বীদেরও এবার প্রার্থী করছে জামায়াত।
জামায়াতে ইসলামী এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক ধাপে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। গত সপ্তাহে তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। এর মধ্যে একটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের সূত্র বলছে, আরও কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আলোচনা চলছে। অন্তত একটি আসনে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনায় আছে, সেই আসনটি কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) হতে পারে। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা (পদ স্থগিত) ফজলুর রহমান, যিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য–কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব থেকে আলোচনায় রয়েছেন।
কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে, যেটি খুলনা-৫ আসনে পড়েছে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে।জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে যখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হয়, তখন বেশির ভাগ দলের মতো জামায়াতও গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে। তখন থেকেই অন্য ধর্মের অনুসারীদের জামায়াতের প্রার্থী করার সুযোগ তৈরি হয়।
আরও পড়ুনবিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে এখনো সমঝোতার সুযোগ দেখছে এনসিপি ২ ঘণ্টা আগেজামায়াতের এই নেতা বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাদের পরামর্শ, জরিপের ফলাফলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরপর জয়ের সম্ভাব্যতা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি আসনে একইভাবে প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যাঁর যাঁর সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন।হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রথম প্রার্থীজামায়াতে ইসলামী যে তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে খুলনা-১ আসনের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে। তিনি জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি। এর আগে আসনটিতে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। গত বুধবার আবু ইউসুফের বদলে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত।
কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে, যেটি খুলনা-৫ আসনে পড়েছে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। এসব সমাবেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষও ছিলেন সরব।
কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াত প্রার্থী করেছে তাঁর নিজ এলাকার বাইরের বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে। এই আসন ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ নামে ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত একবার ছাড়া প্রতিবারই এখানে হিন্দু প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অনেকের ধারণা, সেই হিসাব থেকে কৃষ্ণ নন্দীকে বেছে নিয়েছে জামায়াত।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যেই নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজে ফিরতে চায় বিএনপি ৪ ঘণ্টা আগেএ ছাড়া গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে জামায়াতের নতুন প্রার্থী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ–এর সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অলিউল্লাহ নোমান বেশ কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন। এ আসনে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে।
এর বাইরে লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে আগের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও লালমনিরহাট জেলার আমির মো. আবু তাহের। এর আগে প্রাথমিকভাবে রংপুর মহানগর শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. হারুন অর রশীদকে মনোনয়ন দিয়েছিল জামায়াত।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যাঁর যাঁর সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন। সে জন্য যেসব দল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে চায়, তাদের দলে সব সম্প্রদায়ের লোক থাকতে হবে। জামায়াত সব ধর্মের লোকদের বিষয়ে সচেতন। সময়ের চাহিদা ও জন–আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে এবার প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী কিছু বিষয়কে বিবেচনা করেছে।
চূড়ান্ত হয়নি আসন সমঝোতা‘এক আসনে এক প্রার্থী’—এই নীতি নিয়ে নির্বাচনে আসন সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে জামায়াতসহ আট দল। অপর দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। কোন আসনে কাকে প্রার্থী করলে জয়ী হতে পারেন, সে বিষয়ে জরিপ করছে দলগুলো। ওই জরিপের ভিত্তিতে জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দলগুলোর আসনভিত্তিক জরিপ চলতি সপ্তাহে শেষ হতে পারে। এরপর কোন দলের কোন নেতাকে কোন আসনে জামায়াত ছাড় দেবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া সম্ভাব্য এই নির্বাচনী সমঝোতায় আরও কয়েকটি দলকে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচিতে থাকা দলগুলোর একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ৮ ডিসেম্বর আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন লিয়াজোঁ কমিটিতে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করা দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।