প্রবাসী আয় সংগ্রহে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ তালিকায় আগের মতোই যথারীতি শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর—এই ১১ মাসের প্রবাসী আয়ের তথ্য পর্যালোচনায় এই চিত্র পাওয়া গেছে।

ইসলামী ও অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী আয় সংগ্রহের দিক থেকে আগে থেকেই ভালো অবস্থানে ছিল। নতুন করে প্রবাসী আয় আহরণে বড় চমক দেখিয়েছে কৃষি ব্যাংক। প্রবাসী আয় সংগ্রহের বাজারে যুক্ত হয়ে ব্যাংকটি ভালো সাফল্যও পেয়েছে। কৃষি ব্যাংকের এ সাফল্যের পেছনে ভূমিকা রেখেছে করোনাকালেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা, দেশজুড়ে ব্যাংকটির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ও সেবার মান বৃদ্ধি। সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানি এই ব্যাংকের মাধ্যমেও হওয়ায় ব্যাংকটিতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও তৈরি হয়েছে। ফলে প্রবাসী আয় দিয়ে ডলারের চাহিদা পূরণ করছে ব্যাংকটি। এখন যা ব্যাংকটির আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১০ ব্যাংকের মাধ্যমেই এসেছে ২ হাজার ৬৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত ১১ মাসে দেশে আসা প্রবাসী আয়ের ৭০ শতাংশই এনেছে ১০টি ব্যাংক। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক এনেছে ৫৫৩ কোটি ডলার। এরপরই রয়েছে কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২৭৭ কোটি ডলার।

এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬৫ কোটি ডলার। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক এনেছে ১৯৭ কোটি ডলার, ব্র্যাক ব্যাংক ১৯১ কোটি ডলার, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৬০ কোটি ডলার, সোনালী ব্যাংক ১৪৫ কোটি ডলার। রূপালী, সিটি ও পূবালী ব্যাংক এনেছে যথাক্রমে ১১০ কোটি, ৮৪ কোটি ও ৭৯ কোটি ডলার।

কৃষি ব্যাংক যেভাবে শীর্ষ তালিকায়
সারা দেশে কৃষি ব্যাংকের রয়েছে ১ হাজার ৩৮টি শাখা ও ৫টি উপশাখা। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের দেশজুড়ে এত বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা নেই। এ জন্য দেশের অন্য ব্যাংক ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফএস) আগে কৃষি ব্যাংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রবাসী আয় বিতরণ করত। এর বিপরীতে অল্প কিছু মাশুল পেত ব্যাংকটি। ২০১৮ সালে আলী হোসেন প্রধানিয়া ব্যাংকটির এমডি হিসেবে যোগ দিয়ে এই নেটওয়ার্ক নিজেদের কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নেন। এ জন্য বিদেশি অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ব্যাংকটি।

পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখাগুলোতে টাকার প্রবাহ বাড়াতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) সঙ্গে চুক্তি করে। ফলে এনজিওগুলো বিনা মাশুলে তাদের সংগ্রহ করা অর্থ কৃষি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে পারছে। নিজেদের ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর করতে পারছে।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময় ব্যাংকটি সব শাখা খোলা রেখে প্রবাসী আয় বিতরণ করে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যেও ব্যাংকটি জনপ্রিয়তা পায়। উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে সাব এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ব্যাংকটি। ফলে পুরো দেশে প্রবাসী আয়ের সেবা দিতে পারছে।

এদিকে ডলার–সংকটের সময় সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার জন্য কৃষি ব্যাংককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংকটিতে ডলারের চাহিদা তৈরি হয়। এখন প্রতি মাসে ২০-২৫ কোটি ডলার সরকারি আমদানির দায় পরিশোধ করছে ব্যাংকটি। এতে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা থেকে আয়। গত অর্থবছরে এই খাত থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আয় করেছে কৃষি ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে এক হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি প্রবাসীদের জন্য একাধিক সঞ্চয় স্কিম চালু করেছে। এতে জমা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, কৃষিঋণ দিয়ে লোকসান করছে কৃষি ব্যাংক। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা করে লোকসান কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান ছিল ৬ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।  

যাদের থেকে বেশি আয় পাচ্ছে
প্রবাসীরা বিদেশের অর্থ স্থানান্তর প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসে টাকা জমা দেন। দেশের ব্যাংকগুলো সেই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে। ব্যাংকগুলো নিজেদের ব্যাংকের বাইরে যেসব অর্থ সংগ্রহ করে, তা দিনে দিনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে পাঠিয়ে দেয়। কৃষি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাচ্ছে মালয়েশিয়ার মার্চেন্ট্রেড থেকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ ও রিয়া মানি, মালয়েশিয়ার সিবিএল মানি ও এনবিএল মানি, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যের এনইসি মানি, দক্ষিণ আফ্রিকার হোম রেমিট ও যুক্তরাজ্যের ইজেড রেমিট থেকে বেশি আয় সংগ্রহ করছে।

কৃষি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ও হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,‘আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত এক হাজারের বেশি শাখা। আগে গ্রাহকেরা মূলত গোপন পিন নম্বর ব্যবহার করে প্রবাসী আয় গ্রহণ করতেন। এখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ায় গ্রাহকেরা নিজের হিসাবে সরাসরি টাকা জমা নিতে পারছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টায় এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে চুক্তির ফলে সেবা আরও সহজ হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন টওয় র ক প রব স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, দেশে সুফল কম

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে। কিন্তু দেশে কমেছে সামান্যই; বরং বেশি দাম রাখার কারণে সরকারের কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মুনাফা বেড়েছে।

বিপিসি গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ছিল ৩ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (২০২৪ সালের মার্চ) বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের (ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিন) দাম নির্ধারণ শুরু হয়। ভর্তুকি থেকে সরে আসে ওই সরকার। তখন ‘অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের’ কারণে অর্থনীতি সংকটে পড়েছিল।

বিপিসি জ্বালানি তেল থেকে শুধু বড় অঙ্কের মুনাফাই করছে না, সরকারের আয়ও অনেক। জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক–কর আরোপ করে সরকার প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। আরও পড়ুনবাড়ল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম৩০ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২৪ সালের মার্চে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বা ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের ব্যারেলপ্রতি (১৫৯ লিটার) দর ছিল ৮৫ মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। গত অক্টোবরে এই দর নেমেছে ৬৪ ডলারের কাছাকাছিতে। ফলে তখনকার তুলনায় দর এখন ২৫ শতাংশ কম। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, এ সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। সরকার ডিজেলের দাম কমিয়েছে ৪ শতাংশের মতো।

বিপিসি জ্বালানি তেল থেকে শুধু বড় অঙ্কের মুনাফাই করছে না, সরকারের আয়ও অনেক। জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক–কর আরোপ করে সরকার প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। বিপিসির নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুল্ক–কর বাবদ সরকারের আয় ছিল ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।

বিপিসি বছরে প্রায় ৬৮ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। এর মধ্যে ৬২ শতাংশ পরিবহন ও ১৫ শতাংশ কৃষি খাতে ব্যবহার করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে পরিবহন ভাড়া ও কৃষির উৎপাদন খরচ অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে অন্যান্য কারণে বাড়ে দ্রব্যমূল্য। ফলে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে না পেরে, ধনী ও সচ্ছলদের কাছ থেকে যথেষ্ট কর আদায় করতে না পেরে এবং বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বিপাকে থাকা বিগত সরকার রাজস্ব আয়ের জন্য জ্বালানি তেলের মতো খাতকে বেছে নিয়েছিল। সে অবস্থার পরিবর্তন তেমন একটা হয়নি।আরও পড়ুনবিশ্ববাজারে তেলের দাম বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে, দেশে কমে না কেন২৭ নভেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে তা এখনো ৮ শতাংশের বেশি। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশ পারেনি। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম কমালে পরিবহন ভাড়া ও উৎপাদন খরচ কমানোর সুযোগ তৈরি হতো। এতে মানুষ সুফল পেত। জ্বালানি তেল একটি কৌশলগত পণ্য। এর ব্যবসা সরকারের হাতে রাখা হয় মুনাফা নয়, বরং নিরাপত্তা ও জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে। যদিও বিগত সরকার একে আয়ের বড় উৎস বানিয়ে ফেলেছিল। এখনো সেটাই চলছে।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে না পেরে, ধনী ও সচ্ছলদের কাছ থেকে যথেষ্ট কর আদায় করতে না পেরে এবং বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বিপাকে থাকা বিগত সরকার রাজস্ব আয়ের জন্য জ্বালানি তেলের মতো খাতকে বেছে নিয়েছিল। সে অবস্থার পরিবর্তন তেমন একটা হয়নি।

অবশ্য জ্বালানি তেলে মুনাফা করলেও বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে বড় ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিগত সরকারের সময় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাশুল দিতে হচ্ছে। এ সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি। জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর ক্ষেত্রে যুক্তি হলো, দাম কমালে প্রতিবেশী দেশে তেল পাচারের শঙ্কা থাকে। আবার বিপিসির মুনাফার টাকা দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নও করা হয়।

বিপিসির মুনাফা কারও বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং উন্নয়নকাজে বিনিয়োগের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন শোধনাগার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বিপিসি অর্থায়ন করবে।মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বিপিসির মুনাফা কারও বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং উন্নয়নকাজে বিনিয়োগের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন শোধনাগার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বিপিসি অর্থায়ন করবে।

বিপিসির নতুন শোধনাগারের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। তখন তারা লোকসানে ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে মুনাফা শুরু করে বিপিসি। গত এক দশকে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে করপোরেশনটি। এর মধ্যে শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরে তারা লোকসান করে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, প্রকল্প এখন পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

২০২৪ সালেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল। আর এখন এটি নেমে এসেছে ৬২ থেকে ৬৪ ডলারে।আরও পড়ুনতেল চুরি বন্ধে জ্বালানি বিভাগের ৩ নির্দেশনা২৮ অক্টোবর ২০২৫বিশ্ববাজারে দাম কমেছে

জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রির একমাত্র সরকারি কোম্পানি বিপিসি। এর অধীনে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে তিনটি কোম্পানি ডিলারদের মাধ্যমে তেল বিক্রি করে।

বিগত কয়েক বছরে জ্বালানি তেলের দামে বড় রকমের উত্থান-পতন দেখেছে বিশ্ব। করোনা মহামারির প্রভাবে তেলের দাম ব্যাপক হারে কমে যায়। ২০২০ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে ৪২ মার্কিন ডলার। পরের বছর অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলের বাজার।

তেলের দামে বড় উল্লম্ফন ঘটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ২০২২ সালে তেলের গড় দাম ব্যারেলে ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ১৩৯ ডলার পর্যন্ত। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দামও বাড়তে থাকে। ওই বছর আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ওই মাসে মাত্র ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ দাম কমানো হয়েছিল (প্রতি লিটারে কমেছিল ৫ টাকা)। এরপর প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, পেট্রল ১২৫ টাকা এবং অকটেন বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়।

২০২৪ সালেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল। আর এখন এটি নেমে এসেছে ৬২ থেকে ৬৪ ডলারে।

বাজারদরের কথা বললেও তা এড়িয়ে সুবিধামতো মূল্য নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়ের সূত্র তৈরি করা হয়েছে। সূত্রে ৯টি জায়গায় দুর্বলতা জানানোর পর বর্তমান সরকার দুটি সংশোধন করেছে। তাই বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ভোক্তা বাড়তি দামে কিনছে, আর বিপিসি মুনাফা করছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক

দেশে এখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১০৪ টাকা, পেট্রল ১২০ টাকা এবং অকটেন ১২৪ টাকা। সবশেষ এ মাসেই প্রতি লিটারে ২ টাকা করে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেই সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। তেল কেনার পর দেশে আসতে এক মাস সময় লেগে যায়। গত ২১ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দামের গড় কর দেশে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ওই সময় বিশ্ববাজারে দাম বর্তমানের চেয়ে বেশি ছিল।

অবশ্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত বছর নভেম্বরেও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিল, বাজারদর অনুযায়ী নির্ধারণ করলে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব। উল্লেখ্য, একটি সূত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার মাসে মাসে দাম নির্ধারণের কথা বলেছিল। যদিও সেই সূত্রের পুরোটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারদরের কথা বললেও তা এড়িয়ে সুবিধামতো মূল্য নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় সমন্বয়ের সূত্র তৈরি করা হয়েছে। সূত্রে ৯টি জায়গায় দুর্বলতা জানানোর পর বর্তমান সরকার দুটি সংশোধন করেছে। তাই বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ভোক্তা বাড়তি দামে কিনছে, আর বিপিসি মুনাফা করছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, তেল পাচারের যুক্তি হাস্যকর। সীমান্তের অজুহাতে দেশের ভোক্তাকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই।

বিপিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতা কমাতে পারলে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যাবে।আরও পড়ুনতেল চুরি শুরু জাহাজ থেকে, বিজ্ঞান জানে চোরেরা২০ অক্টোবর ২০২৫বিপিসির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষার দাবি

অকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে সব সময় মুনাফা করে বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দেশের একমাত্র শোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ৬ লাখ টন ডিজেল, বাকিটা আমদানি করতে হয়।

বিপিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতা কমাতে পারলে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যাবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দশক আগেই বিপিসির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষার দাবি তোলা হয়েছে। আজও তা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ার নিয়ম হলো সরকার সেবা দেবে, মুনাফা করবে না। অথচ শুল্ক–করের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব নিয়েও উন্নয়নে বিনিয়োগ করে না সরকার। বিনিয়োগের নামে বাড়তি মুনাফা করছে বিপিসি।’

আরও পড়ুন‘তেল চুরি’, ব্রাজিল বাড়ি ও তাঁদের আয়েশি জীবন১৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পণ্য রপ্তানি টানা চার মাস কী কারণে কমছে
  • বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিক্রি করে মুনাফা করছে খনি, কিনে লোকসানে বিদ্যুৎেকন্দ্র
  • বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, দেশে সুফল কম