নোয়াখালীতে ২৪৩টি বিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। তিন দফা দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ নোটিশ দেওয়া হয়।

কারণ দর্শানোর নোটিশে পৃথকভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাত নাসিমা হাবীবা সই করেন। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষকদের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। সন্তোষজনক উত্তর না পেলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশও করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘২ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেননি। বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা দায়িত্বহীন আচরণ। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও জেলার ৯টি উপজেলার বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির কথা বলে শিক্ষকেরা পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজে পরীক্ষা নিতে চাইলে তাঁকে মারতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগও উঠেছিল সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষককে কক্ষে তালা দিয়ে বন্দী করে রাখার ঘটনাও ঘটে।

শুধু তা–ই নয়। বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে প্রাথমিকে শিক্ষকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জেলার আটজন শিক্ষক নেতাকে ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাত নাসিমা হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগও তিনি পেয়েছেন। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান শিক্ষকেরা পরীক্ষা নিতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নাজেহালের শিকার হয়েছেন। এসব অভিযোগে এক হাজারের বেশি শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নোয়াখালী সদরের কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.

শামছুদ্দীন মাসুদ এ প্রসঙ্গে আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকেরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে, অর্থাৎ অর্থ মন্ত্রণালয় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটির বাস্তবায়নে কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্মসূচি পালন করার অধিকার শিক্ষকদের রয়েছে। আমরা চাই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয় শিক্ষকদের ওপর জারি করা কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র কর মকর ত শ ক ষকক পর ক ষ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চা–বাগানে শৈশব: মাইকেল স্টোরিয়ারের বাংলাদেশ–যাত্রা

চা-বাগানের অনেক গল্প দলিল-দস্তাবেজে থাকে। আবার অনেক গল্প টিকে থাকে স্মৃতির ভেতর—চা-কারখানার গন্ধে, শৈশবের কোনো ঘুমপাড়ানি গানে বা সেই আয়ার মুখে, যিনি একসময় ছোট্ট ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ঘুরতেন।

এ লেখা মাইকেল স্টোরিয়ারের। ৫০ বছর পর তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসার গল্প।

হঠাৎ জানতে পারলাম, ডানকানের পুরোনো প্ল্যান্টার জিম স্টোরিয়ারের ছেলে মাইকেল আলীনগর চা-বাগানে এসেছেন। তাঁর বাবা ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এখানে ম্যানেজার ছিলেন। মাইকেল তখন মাত্র আট বছর বয়সে দেশ ছেড়েছিলেন। চা-ইতিহাসে আমার আগ্রহ আছে, তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম, তাঁর বাবা সম্পর্কে একটি ছোট লেখা লিখব। কিন্তু কথা বলতে বলতে গল্পটি আরও গভীর হয়ে উঠল।

মাইকেল তখন বাংলাদেশ ঘুরছিলেন। তিনি জন্মেছিলেন ১৯৬২ সালে, ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। অনেক বছর পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরে এসে তাঁর ভেতরে নানা আবেগ জেগে উঠেছিল। ফোনে বললেন, এই সফরটা তাঁর কাছে ‘অবিশ্বাস্য রকম আবেগপূর্ণ’। মানুষ যেভাবে তাঁর মা–বাবাকে মনে রেখেছেন আর যেসব বাগানে তিনি ছোটবেলায় দৌড়াতেন, এসবই তাঁকে বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

এরপর এল সবচেয়ে ছোঁয়াচে মুহূর্তটি।

আলীনগরে এক নারী এলেন, দূর পথ পাড়ি দিয়ে।

তিনি ছিলেন মাইকেলের ছোটবেলার আয়া।

মাইকেল স্টোরিয়ার ও ছোটবেলায় তাঁকে দেখভাল করা আয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ