ভুয়া বা ভুল তথ্য এবং অপতথ্যের এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি হলো—প্রশ্ন করার অভ্যাস ও তথ্য যাচাইয়ের দক্ষতা। পাশাপাশি অনলাইনে পাওয়া যেকোনো কনটেন্ট (আধেয়) শুরুতেই সন্দেহের চোখে দেখতে হবে; প্রথম দেখাতেই পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাবে না।

অনলাইনে দ্রুত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের কৌশল শেখাতে প্রথম আলো বন্ধুসভার বিশেষ কর্মশালায় এ কথা বলেন বক্তারা। আজ শুক্রবার ‘কোয়েশ্চেন এভরিথিং ইউ সি অনলাইন: ট্রেইনিং অন কুইক ফ্যাক্ট-চেকিং অ্যান্ড ভেরিফিকেশন (অনলাইনে যা দেখবেন, প্রশ্ন করবেন: তথ্য যাচাই পদ্ধতিবিষয়ক প্রশিক্ষণ)’ শিরোনামে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। দেশি-ফুডসের পৃষ্ঠপোষকতায় ও ডিসমিসল্যাবের সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে কর্মশালা চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিকের সঞ্চালনায় প্রথম সেশনে ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ বিষয়ে আলোচনা করেন ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কোনো ভুল তথ্যকে যদি সঙ্গে সঙ্গে সঠিক না করেন তাহলে এই তথ্যকে একসময় মানুষ সত্যি মনে করবে। এখন সেই ব্যবসা তত বড়, যে ব্যবসায় তথ্য বেশি। যাদের কাছে তথ্য বেশি তারা এগিয়ে যায়। যাচাই করার সক্ষমতা বর্তমানে অনেক বেশি জরুরি হয়ে গেছে। যেকোনো তথ্যে দেখবেন সূত্র উল্লেখ আছে কি না। সূত্র না থাকলে তথ্য সঠিক মনে করা যাবে না।’

স্বাগত বক্তব্যে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রশ্ন করতে হবে। তথ্য সত্য কি না, যাচাই করতে হবে। জগৎটা এখন অনেক বেশি তথ্যের।’

তথ্যের সত্যতা যাচাই, ছবি যাচাই এবং অনলাইন আর্কাইভিং বিষয়ে আলোচনা করেন ডিসমিসল্যাবের গবেষণা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। কীভাবে মুহূর্তেই নির্দিষ্ট বিষয়ের তথ্য, ছবি, ভিডিও, তথ্য প্রকাশের তারিখ ও ডকুমেন্ট ফাইল খুঁজে বের করতে হবে; মোবাইলে রিভার্স ইমেজ সার্চ, ছবির মেটা ডেটা যাচাই কীভাবে করা যাবে এবং এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন এআই টুলের ব্যবহার বিষয়ে হাতে–কলমে সেশন পরিচালনা করেন তিনি।

আর এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবি ও ভিডিও কীভাবে যাচাই করা যাবে; কোনটা এআই ভিডিও, কোনটা বাস্তব—কীভাবে শনাক্ত করা যাবে এবং এআই চিহিৃতকরণ কয়েকটি টুলের ব্যবহার দেখান ডিসমিসল্যাবের আরেকজন গবেষণা কর্মকর্তা আহমেদ ইয়াসীর আবরার।

অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের উপদেষ্টা উত্তম রায় বলেন, ‘অনলাইনে কোনো কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই রিঅ্যাক্ট করা যাবে না। যাচাই করতে হবে, সময় নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’

ডিসমিসল্যাব ও দেশি-ফুডসকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘আমাদের একটি বড় সমস্যা হলো জেনে না জেনে অপতথ্যের প্রচার করা। অনেকের মধ্যেই ডিজিটাল শিক্ষা খুবই কম। এর কারণ হলো প্রযুক্তি অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। কোনটা এআই, কোনটা সত্য—তা যাচাই করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তাই অনলাইনে যা কিছুই দেখবেন, সবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করবেন।’

দেশি-ফুডসের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজের রহমান ও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা রুপা খাতুন। বন্ধুসভার সঙ্গে থাকতে পেরে প্রথম আলো ও বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানান মাহফুজের রহমান। অংশগ্রহণকারীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তিনি।

দেশি-ফুডসের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’, ‘আইইএলটিএস ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা’, ‘গ্রাফিক ডিজাইন’সহ এ নিয়ে চারটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হলো। পুরো আয়োজনের সমন্বয় করেছেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের প্রশিক্ষণ সম্পাদক সামছুদ্দোহা সাফায়েত। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল য চ ই কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নেসলের প্রথম ‘গাট হেলথ সামিট’: অংশ নিলেন দেশ-বিদেশের গবেষক, বিশেষজ্ঞ

নেসলে বাংলাদেশের আয়োজনে নিউট্রিশন সায়েন্সের অগ্রগতি ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘দ্য গাট নেক্সাস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৪ ও ৫ নভেম্বর রেডিসন ব্লু ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের ২৫০ জনের বেশি গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। গাট মাইক্রোবায়োমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও মানুষের সার্বিক সুস্থতার সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরাই ছিল সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।

মানুষের পেটে থাকা ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ বা উপকারী জীবাণুগুলো হজমশক্তি থেকে শুরু করে মানসিক সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসহ অসংখ্য উপকারী ভূমিকা রাখে। ওই ওয়ার্কশপে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সেশন, প্রেজেন্টেশন, ইন্টারঅ্যাকটিভ আলোচনা এবং হাতে–কলমে শেখার নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অংশগ্রহণকারীরা এসবের মাধ্যমে গাট হেলথ–সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আধুনিক গবেষণা ও বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেন।

বিশেষজ্ঞের মতামত এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

আন্তর্জাতিক আলোচকদের মধ্যে ছিলেন শ্রীলঙ্কার অধ্যাপক ড. শামান রাজেন্দ্রজিথ। তিনি শিশুদের গাট মাইক্রোবায়োটার বিকাশ এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হজমজনিত সমস্যার মতো ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে প্রাথমিক জীবনে সঠিক মাইক্রোবায়োম প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

শামান রাজেন্দ্রজিথ বলেন, ছোটবেলা থেকে সঠিক মাইক্রোবায়োম গড়ে উঠলে জীবনের নানা পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়।

নেদারল্যান্ডসের অধ্যাপক ড. মার্ক এ বেনিঙ্গা অনুষ্ঠানে শিশুদের কলিক সমস্যা এবং গাটের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার ওপর তাঁর গবেষণা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন। বেনিঙ্গা বলেন, ব্যাকটেরিয়ার সুষম উপস্থিতি বিঘ্নিত হলে শিশুদের পেটে অস্বস্তি, ব্যথা অনুভব হয়। ফলে শিশুদের কান্নার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সঠিক প্রোবায়োটিক গ্রহণে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।

বাংলাদেশিদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিবিষয়ক বাস্তবতা সামনে রেখে বক্তব্য দেন আইসিডিডিআরবির অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেন। তিনি গাটবান্ধব খাবার, প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক ও সিনবায়োটিক গ্রহণের সুবিধা এবং শিশুদের পুষ্টি উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বায়োটিকস যুক্ত হলে হজমশক্তি ও সার্বিক সুস্থতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, যা জীবনমানকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নত করতে সহায়তা করবে।’

গবেষণা ও প্রদর্শনী

কর্মশালায় গাট হেলথ–সম্পর্কিত আধুনিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বিভিন্ন সায়েন্টিফিক প্রদর্শনী করা হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা প্রোবায়োটিক ও সিনবায়োটিকের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সরাসরি পরিদর্শনের সুযোগ পান, যা নেসলে বাংলাদেশের গবেষণানির্ভর নিউট্রিশনবিষয়ক উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি আরও স্পষ্ট করে।

কর্মশালাটির সার্বিক বিষয়বস্তু এবং সহযোগিতামূলক মনোভাব ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে এবং বাস্তব চিত্র সামনে এনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নেসলে বাংলাদেশ পুষ্টিবিষয়ক শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা আরও সুদৃঢ় করেছে।

জনস্বাস্থ্যের প্রতি অঙ্গীকার

এই উদ্যোগটি নেসলে নিউট্রিশন ইনস্টিটিউটের বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে, যা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী গাট হেলথ–সম্পর্কিত এডুকেশনকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। গবেষণা ও জ্ঞানচর্চামূলক প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের মাধ্যমে নেসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং বিজ্ঞাননির্ভর সমাধানের মাধ্যমে আরও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেসলের প্রথম ‘গাট হেলথ সামিট’: অংশ নিলেন দেশ-বিদেশের গবেষক, বিশেষজ্ঞ
  • তরুণ পেশাজীবীদের জন্য জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি, করুন আবেদন