শীতের পোশাক বেচাকেনা এখনো জমেনি
Published: 6th, December 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে এখনো শীতের গরম কাপড় বিক্রি জমে ওঠেনি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে শীতের তীব্রতা কম। সে কারণে খুচরা পর্যায়ে গরম পোশাকের চাহিদা কম। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বেচাকেনাতেও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত শীতের তীব্রতা কম। তাই বেচাকেনায় একধরনের মন্দা ভাব চলছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। আবার নির্বাচনের আগে শীতের পোশাক বিতরণ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত এ বছর শীতের পোশাকের ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা বিক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বঙ্গবাজার ও গুলিস্তানে শীতের পোশাকের একাধিক বড় পাইকারি বাজার আছে। পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আছে আলাদা পাইকারি বাজার। এ ছাড়া মিরপুর, সাভার ও গাজীপুরেও শীতের পোশাকের বাজার আছে। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড—সব মিলিয়ে শীতকেন্দ্রিক পোশাকের মৌসুমি ব্যবসা এক হাজার কোটি টাকার ওপরে।
স্বল্পমেয়াদি ব্যবসাশীতের পোশাকের মৌসুমি ব্যবসা মোটামুটি তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের। এই মৌসুম শুরু হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে, চলে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত। তবে শীতের তীব্রতার কারণে এই সময় কমবেশি হতে পারে। গত সপ্তাহে রাজধানীর একাধিক পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা কম্বল, জ্যাকেট, চাদর, সোয়েটারসহ শীতের বিভিন্ন পোশাক দোকানে তুলেছেন। কিন্তু ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে অবস্থিত পারিজাত মার্কেটে আছে দুই শতাধিক কম্বল বিক্রির দোকান। এই ব্যবসায়ীদের সংগঠন বৃহত্তম কম্বল সমিতির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত বেচাকেনার পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। শীত কম থাকায় বেচাকেনায় গতি নেই। আবার জাতীয় নির্বাচনের আগে সাধারণত বেচাকেনা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার সে আমেজ এখনো শুরু হয়নি।
রাজধানীর বঙ্গবাজার ও গুলিস্তানে কয়েক শ দোকানে শীতের পোশাক বিক্রি হয়। বঙ্গবাজার–সংলগ্ন এনেক্সকো টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায় কম্বল বিক্রি করে—এমন দোকান আছে ৪৫টি। এ ছাড়া ওই ভবনেরই পঞ্চম ও চতুর্থ তলায় আছে জ্যাকেট, ওভারকোট, সোয়েটার, জুতা ও চাদর বিক্রির শতাধিক দোকান।
এনেক্সকো টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায় কম্বল বিক্রির দোকান ফয়সাল গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মাহবুব আলম বলেন, এবার শীত দেরিতে আসছে। সে জন্য গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেচাকেনায় গতি কম। বর্তমানে দৈনিক ১ থেকে ২ হাজার পিছ কম্বল বিক্রি হচ্ছে। শীত বাড়লে দিনে ৪ থেকে ৫ হাজার পিছ কম্বল বিক্রি হয়।
দরদাম কেমনবিক্রেতারা জানান, শীত মৌসুমে অন্যতম বিক্রিত পণ্য হলো কম্বল। ব্যক্তিপর্যায়ের ক্রেতা ছাড়াও ত্রাণ হিসেবেও অনেকে কম্বল কিনে থাকেন। দেশে তৈরি ও আমদানি করা (চীনা)—এ দুই ধরনের কম্বল কিনতে পাওয়া যায়। পাইকারিতে দেশি কম্বল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এগুলো ত্রাণের কম্বল হিসেবেই বেশি পরিচিত। শীতপ্রবণ এলাকায় বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ধরনের কম্বল বেশি বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে সাধারণ মানের চীনা কম্বল বিক্রি হয় ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। মান ভালো হলে দাম আরও বেশি হয়।
গুলিস্তানের এনেক্সকো টাওয়ারে কম্বল কিনতে আসেন বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমান। তিনি খুলনার দিঘলিয়ায় গ্রামের প্রতিবেশীদের দেওয়ার জন্য ৪৩ পিছ কম্বল কিনেছেন। প্রথম আলোকে মফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ মানের কম্বল দিলে তা এক বছরের বেশি ব্যবহার করা যায় না। আবার শীতও সেভাবে মানে না। সে জন্য এবার কিছুটা ভালো মানের কম্বল নিয়েছেন, যাতে অন্তত তিন থেকে চার বছর ব্যবহার করা যায়।
ক্রেতাদের মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, হুডি প্রভৃতি পোশাকেরও ভালো চাহিদা রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, পাতলা ও মোটা—এ দুই ধরনের জ্যাকেট বিক্রি হয়। এর মধ্যে পাতলা জ্যাকেট প্রতি পিছ ৪৫০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং মোটা জ্যাকেট প্রতি পিছ দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। ওভারকোটের দাম দুই হাজার টাকার আশপাশে। শিশুদের জ্যাকেটের দাম এক থেকে দেড় হাজার টাকা। হুডির দাম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া মাফলার ১২০ থেকে ২৫০ টাকা, টুপি ৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের সোয়েটার ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাদর বা শালের মধ্যে কাশ্মীরি শালের চাহিদা বেশি। এসব শালের দাম এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া চীনা শাল ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং দেশি চাদর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এনেক্সকো টাওয়ারের হিমেল জ্যাকেট কালেকশনের বিক্রেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে সারা বছরেই মাইনাসের (শীতপ্রধান দেশের উপযোগী) পণ্য বিক্রি হয়। যত ভিসা হবে, তত বিক্রি বাড়বে। দেশে শীত পড়লে আমাদের বেচাকেনা আরও কিছুটা বাড়ে। জুতা থেকে শুরু করে টুপি পর্যন্ত সব পোশাক রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে রাতে
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়ার তারিখ আবারো পেছানো হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে লন্ডন নেওয়ার সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে শনিাবর (৬ ডিসেম্বর) রাতে সিদ্ধান্ত দেবে মেডিকেল বোর্ড।
আজ সকালে বিএনপির মির্ডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের দেওয়া তথ্য ছাড়া অনুমানভিত্তিক বা অন্য কারো তথ্য দিয়ে চেয়ারপারসনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নিউজ না করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।
গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি নেতা ও চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে না। দেশটি জার্মানির একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে। যেটি শনিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছাতে পারে।
শুক্রবার গণমাধ্যমকে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এয়ারক্র্যাফটের সমস্যা আছে, একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাত থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাও ভালো না। এই অবস্থায় যাত্রার তারিখ বদল করা হয়েছে।”
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়। গত রবিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তার চিকিৎসায় দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
ঢাকা/রায়হান/ইভা