ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে’ জ্বালানি সরবরাহ দিতে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন
Published: 5th, December 2025 GMT
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে’ জ্বালানি তেল সরবরাহ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ শুক্রবার নয়াদিল্লির রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ ঘোষণা দেন। এর আগে তাঁরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ‘উষ্ণ অভ্যর্থনার’ জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান পুতিন। এরপর মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে “গঠনমূলক” এবং “বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে” আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা “নিয়মিত” ফোনালাপ করি।’
নিজেদের মধ্যে হওয়া চুক্তিগুলোকে ‘আকর্ষণীয়’ বলে মন্তব্য করেন পুতিন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নতুন চুক্তির বিষয়গুলো জানানো হয়। পুতিনের সফরকে কেন্দ্র করে এবার দুই দেশের বাণিজ্য ও কৃষি খাতের সম্পর্ক জোরদার করতে একাধিক চুক্তি হয়েছে। চুক্তির দর-কষাকষি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পুতিন। দুই দেশের বাণিজ্যে নিজেদের জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ায় নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। ভারতের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণেও সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন পুতিন।
তেল প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে’ জ্বালানি সরবরাহ করতে প্রস্তুত রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ভারতের ওপর চাপ রয়েছে। ওয়াশিংটনের অভিযোগ—জ্বালানি কেনার মাধ্যমে মস্কোকে কিয়েভের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে নয়াদিল্লি। এ অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে শাস্তি হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
পুতিন দুই দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন। পালাম বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানান। আজ রাত ৯টার দিকে তিনি ভারত ত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন উদ্যোক্তারা: জিইডির প্রতিবেদন
নতুন ব্যবসা চালু করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন বহু উদ্যোক্তা। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
জিইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন যদি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করে এবং নতুন সরকার এসে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাবে।
জিইডির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ দেখিয়েছে জিইডি। জিইডি বলছে, একদিকে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত স্থানীয় চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভালো অবস্থায়
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বেড়েছে, যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান ভালো হওয়ার বড় কারণ।
জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বহির্বাণিজ্যের সূচকে অস্থিরতা ছিল। রপ্তানি আয়ের সূচকও ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয়ে পতন দেখা যায়। তবে অক্টোবরে এই সূচকের অবস্থানে উন্নতি দেখা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির সূচকে বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ধীরগতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। এর কারণ খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা ও আমদানি করা পণ্যের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার বড় কারণ হচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ৪৭ শতাংশ
খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম। আর মাছ ও মাংসের ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে পর্যাপ্ত মৌসুমি সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম কম ছিল। তাই সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সবজি।