খুলনার কয়রা উপজেলা দেশের অন্যতম নদীভাঙনপ্রবণ এলাকা। কয়রার লক্ষাধিক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সরাসরি ভুক্তভোগী। প্রথম আলোর খবরে এসেছে, উপজেলাটির মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আচমকাই ভেঙে যায় সুরক্ষা বেষ্টনী হিসেবে থাকা বেড়িবাঁধ। ধসে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে আতঙ্কিত মানুষ ছুটে গিয়ে দেখেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে দুই শ মিটারের মতো বাঁধ নদীতে তলিয়ে গেছে। এবার ভাঙন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নয়, বরং ঘটেছে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার ফলে। 

প্রায় এক মাস আগেই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি। অভিযোগ আছে, প্রকৃত মেরামতের বদলে সামান্য বালুর বস্তা ফেলে দায়সারা ডাম্পিং করা হয়। প্রথম ধাপের সেই ছোট ফাটল থেকেই যে বড় বিপদের সংকেত মিলেছিল, কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেছে। ফল হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতের জোয়ারে সেই দুর্বল অংশ ভয়াবহ ভাঙনে রূপ নেয়। গ্রামবাসী রিংবাঁধ নির্মাণে ঝাঁপিয়ে না পড়লে পুরো লোকালয় লোনাপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। 

এ অঞ্চলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এখন নিজেই বড় দুর্যোগে পরিণত হচ্ছে। কোথাও সিসি ব্লক না বসানো, কোথাও মাটি ভরাট অসম্পূর্ণ রাখা, আবার কোথাও কেবল বালুর বস্তা ফেলে রেখে যাওয়ার মতো কাজ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার পরিচায়ক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ বিলম্ব বা বালু-মাটির সংকট দেখিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তা জনগণের দুর্ভোগ ও ঝুঁকি কমায় না। দুর্যোগপ্রবণ উপকূলে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার চেয়ে বড় যুক্তি আর কিছু হতে পারে না। 

আমরা আশা করি, মাটিয়াভাঙ্গাসহ আশপাশের সব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মানসম্মত সিসি ব্লক বসানো, সঠিকভাবে মাটি ভরাট এবং ঢাল সংরক্ষণ জরুরি ভিত্তিতে নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও গুণগত মান রক্ষায় স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অগ্রগতি মূল্যায়নও জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্থায়ী পর্যবেক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সামান্য ফাটলও দ্রুত শনাক্ত ও মেরামত করা যায়। 

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলীয় অঞ্চল ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার ঘনঘটা বিবেচনায় বাঁধ ব্যবস্থাপনাকে কেবল উন্নয়ন প্রকল্প না দেখে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্যোগের পর তড়িঘড়ি মেরামতের বদলে আগে থেকেই ঝুঁকি নিরূপণ ও প্রতিরোধমূলক স্থায়ী সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। কারণ, উপকূলের এসব বাঁধ কেবল মাটির কাঠামো নয়, উপকূলবাসীর জীবন, জীবিকা ও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষার প্রধান ভরসা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প ব যবস থ উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট, ময়মনসিংহ নাকি অন্য কোনো দল—কারা হবে চ্যাম্পিয়ন

আরও একবার শিরোপার হাতছানি সিলেট বিভাগের সামনে। জাতীয় ক্রিকেট লিগের গত আসরেই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবারও শেষ রাউন্ডের ম্যাচে বরিশাল বিভাগের মুখোমুখি হওয়ার আগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে দলটি। এই ম্যাচ জিতলে এবারের জাতীয় লিগের ট্রফিটাও যাবে তাদের ঘরে। হেরে গেলে বা ম্যাচ ড্র করলে শুরু হবে পয়েন্ট তালিকার জটিল হিসাব–নিকাশ।

এমন ‘বাঁচা–মরার’ ম্যাচে সিলেটের জন্য ধাক্কা হয়ে এসেছে চোট ও ব্যক্তিগত কারণে তিন পেসার রেজাউর রহমান, খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের খেলতে না পারা। তবে তাঁদের অভাব পূরণ করার সামর্থ্য বাকি পেসারদের আছে বলে মনে করেন সিলেটের কোচ রাজিন সালেহ। প্রথম আলোকে কাল তিনি জানালেন দলের সাফল্যের রহস্যও, ‘তরুণ অথবা সিনিয়র, আমাদের দলের প্রতিটা খেলোয়াড় নিবেদিত। আমাদের দলের ভেতরের যে পরিবেশ, প্রতিটা ছেলেই সিলেটকে ধারণ করে।

শেষ রাউন্ডে সিলেটের পা হড়কালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে জোরালো হবে ময়মনসিংহের। ঢাকা মেট্রোর পরিবর্তে এবারের আসরেই প্রথমবারের মতো জাতীয় লিগে খেলছে ময়মনসিংহ। মাত্র এক দিনের অনুশীলনেই দলটিকে টুর্নামেন্ট খেলতে নামতে হয়েছিল।

শীর্ষে থাকা সিলেটের চেয়ে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে শেষ রাউন্ডে রাজশাহীর বিপক্ষে খেলতে নামবে ময়মনসিংহ। দলটির এবারের যাত্রা নিয়ে কোচ নাজমুল হোসেন বলেন, ‘হোটেলে ও মাঠে অনুশীলনের সময় একসঙ্গে বেশি সময় কাটিয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ধন তৈরির চেষ্টা করেছি। ওদের ভালো ও খারাপ সময়ে সমর্থন দিয়েছি। দলের এ বন্ধনটাই আমাদের শক্তি।’

এই দুই দলের বাইরেও ৬ ম্যাচে দুটি করে জয় পাওয়া রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশালের সামনেও শিরোপা জয়ের সুযোগ আছে। রোমাঞ্চ নিয়ে তাই অপেক্ষায় জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ড।

এনসিএলের পয়েন্ট তালিকা

পয়েন্টের হিসাব :

ম্যাচ জিতলে ৮ পয়েন্ট

ড্র করলে প্রতি দল ২ পয়েন্ট

টাই করলে প্রতি দল ৪ পয়েন্ট

বোনাস পয়েন্ট হিসাব:

ইনিংস ব্যবধানে জিতলে ১ পয়েন্ট

১০ উইকেটে জিতলে ১ পয়েন্ট

পরপর দুই ম্যাচ জিতলে ১ পয়েন্ট

টানা ৩ ম্যাচ জিতলে ২ পয়েন্ট

টানা ৪ ম্যাচ জিতলে ৩ পয়েন্ট

টানা ৫ ম্যাচ জিতলে ৪ পয়েন্ট

টানা ৬ ম্যাচ জিতলে ৫ পয়েন্ট

পয়েন্ট সমান হলে কী দেখা হবে?

* সবচেয়ে বেশি জয়

*সবচেয়ে কম হার

*সমান হওয়া দলের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে কে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে

*প্রতিপক্ষের বেশি উইকেট নিতে পেরেছে কোন দল

*সবচেয়ে বেশি রান করেছে কারা

শেষ রাউন্ডে কে কার মুখোমুখিআরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়াতেও ১ হাজার রান, যে রেকর্ডে রুটের ওপরে শুধুই একজন০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ