মিরপুরের সবুজ গালিচা আর গ্যালারির গর্জন—সব এখন পেছনে। ইমরুল কায়েসের ঠিকানা এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি। ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক জয়ের নায়ক তিনি। একসময়ের নির্ভরযোগ্য ওপেনার। পরে জীবনের ‘ইনিংস’টা মোড় নিয়েছেন অন্যদিকে। তবে ঠিকানা বদলালেও ক্রিকেটপ্রেম কমেনি এতটুকু। বরং প্রবাসে বসেই আঁকছেন নতুন স্বপ্ন, বুনছেন নতুন দিনের পরিকল্পনা।

সম্প্রতি সিডনিতে বসে ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে শুনিয়েছেন তাঁর বর্তমান জীবনের গল্প। কথা বলেছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর ক্রিকেট নিয়ে তাঁর আজন্ম আবেগের কথা।

আরও পড়ুনক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার ধ্বংস করছে, অভিযোগ ইমরুলের০৬ আগস্ট ২০২৪

ইমরুল কায়েস নামটা শুনলেই অনেকের মনে একটা দীর্ঘশ্বাস জাগে। ঘরোয়া লিগে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েও জাতীয় দলে ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। অনেক সময় থেকেছেন উপেক্ষিতও। ১০ বছরের বেশি তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বয়স। সব মিলিয়ে খেলেছেন ৩৯ টেস্ট, ৭৮ ওয়ানডে আর ১৪ টি-টোয়েন্টি। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুই সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে ৩৪৯ রান করেছিলেন, যা বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের তিন ম্যাচের সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড।

ইমরুল কায়েসের ঠিকানা এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমর ল ক য় স

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করেছিলেন ‘অঁদ্রে মালবো’

বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে যেসব বিদেশি নাগরিক কাজ করেছিলেন ফরাসি ঔপন্যাসিক অঁদ্রে মালরো তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন মোটা দাগে উপনিবেশবাদ বিরোধী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে বাঙালির ওপর নারকীয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক- বাহিনী। পাকিস্তানিদের সেই হত্যাযজ্ঞের খবর বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যায়। ফরাসি ঔপন্যাসিক অঁদ্রে মালরো ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করে একটি বিবৃতি দেন। শুধু তা-ই নয়, বাঙালিদের পক্ষে গঠিত মুক্তিবাহিনীর একটি ইউনিটের তিনি দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

১৮ সেপ্টেম্বরের এ বিবৃতিতে মালরো বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর আগেও মালরো স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে সম্মুখসমরে লড়াই করেছিলেন বিপ্লবীদের পক্ষে। এবার তিনি একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড তৈরি করার আহ্বান জানান। ২২ অক্টোবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মালরো বলেন, ‘‘ফাঁকা বুলি আওড়াবার অভ্যাস আমার নেই...ট্যাংক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমার আছে। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর অধীনে একটি ট্যাংক ইউনিটে অংশগ্রহণে আমি অটল।’’ এমনকি ফরাসি নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করা যদি সম্ভব না হয়, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এ নিয়ে একের পর এক বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। 

আরো পড়ুন:

শীতেও শরীর ঘামে? করণীয় জেনে নিন

ফিলিস্তিনি বিয়েতে ‘জাফ’ সহ আরও যা যা  হয়

অঁদ্রে মালবো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে চিঠি লেখেন। তিনি পাকিস্তানিদের যুদ্ধ বন্ধ করতে আহ্বান জানাতে বলেন এবং তাদের সাহায্য দেওয়া বন্ধ করতে বলেন। সে সময় অনেক ফরাসি যুবক অঁদ্রে মালবোর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাকে চিঠি লেখেন। যদি শেষ পর্যন্ত তিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আসতে পারেননি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ফ্রান্সে গিয়ে মালরোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি তার সঙ্গে দেখা করবেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবেন’’। 

অঁদ্রে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও বিশ্ব জনমত গঠনে যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা অসামান্য্ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মালরো বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন অঁদ্রে মালবো। ১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে অঁদ্রে স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান এ ছাড়া শাহীন স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্লোগানে স্লোগানে তাকে বরণ করে নিয়েছিলেন। আবেগাপ্লুত মালরো একটি শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।  বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন অঁদ্রে মালবো।

সেই সফরে অঁদ্রে মালবো প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারপর যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে। তাকে দেওয়া হলো একটি রুপার নৌকা। 
১৯৭৩ সালের ২২ এপ্রিল অঁদ্রে মালরোর সম্মানে বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ওই সমাবর্তনে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার উপাধি প্রদান করা হয়।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ