চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, নীলফামারীতে সারসংকটে বিপাকে কৃষক
Published: 5th, December 2025 GMT
নীলফামারীতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় সারসংকটে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। অনেকে সরকারি মূল্যে সার না পেয়ে দ্বিগুণের বেশি মূল্যে খোলাবাজার থেকে সার সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে গতকাল বিসিআইসি সার পরিবেশক মেসার্স ময়েজ উদ্দিনের দোকানে দেখা যায় সার নিতে আসা কৃষকদের সারি। ওই ইউনিয়নের সিতারপাঠ গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘হামাক মারি ফেলাছে বাপোরে। দুই দিন থাকি ঘুরায়ছে, হামাক লাগে ৩ বস্তা টিএসপি সার, হামাক দেয়ছে হাফ বস্তা (২৫ কেজি)।’
একই ইউনিয়নের কিছামত দোগাছি গ্রামের রবিনাথ রয় (৫৫) বলেন, ‘তিন বিঘা জমিত ভুট্টা, দুই বিঘা জমিত আলু আবাদ করব। তিন দিন থাকি ঘুরছি টিএসপি, এমওপি, ড্যাব নেওয়ার জন্য। একটাও পাইছি না। বাইরত দাম বেশি, তারপরও পাওয়া যায়ছে না।’
দুহুলীপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল ওহাব বলেন, ‘আমি এবার ছয় বিঘা জমিতে আলু লাগাব, দুই বিঘায় ভুট্টা। এ জন্য আমার ৭ বস্তা টিএসপি ও ৪ বস্তা এমওপি সার দরকার। কিন্তু এমওপি একদম নেই। টিএসপি ২৫ কেজি দেওয়ার কথা। তা-ও পাব কি না, জানি না।’
টুপামারী ইউনিয়নের কান্দুরার মোড় এলাকায় মেসার্স প্রামাণিক ট্রেডার্সের প্রতিনিধি সাইফ আল হাসান বলেন, ‘আমাদের ডিলারশিপ নেই। আমরা বাইরে থেকে বেশি দামে সার সংগ্রহ করে খোলাবাজারে বিক্রি করি। কিন্তু বাজারে সার না থাকায় দাম বেশি।’ তাঁরা প্রতি বস্তা টিএসপি ২ হাজার ৯০০ টাকা, এমওপি ২ হাজার ২০০ ও ইউরিয়া ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
একই সময়ে জেলার জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ উপজেলায়ও সারসংকটের খবর পাওয়া গেছে। জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের বালাপুকুর গ্রামের কৃষক একাব্বর আলী (৫৫) বলেন, ‘আমি তিন দিন ধরে ধরনা দিয়েও এক বস্তা সার জোগাড় করতে পারিনি। আজ-কাল করে সময় দেয়; কিন্তু সার পাওয়া যায় না।’
এদিকে ডোমার উপজেলার গোমনাতি ইউনিয়নের আমবাড়ি বাজারে বিসিআইসি সার পরিবেশক রেহানা পারভীনের আরবি এন্টারপ্রাইজে গতকাল সার না পেয়ে দোকান ভাঙচুর করেছে ৫০০ থেকে ৭০০ ব্যক্তি। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) নীলফামারী জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সারসংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বিএফএর নীলফামারী জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় কৃষকদের চাহিদামতো সার দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এই মুহূর্তে ইউরিয়া সারের কোনো ঘাটতি নেই। টিএসপি ও এমওপি সারের চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর ছয় উপজেলায় বিএডিসির ১৩০ জন ও বিসিআইসির ৭৪ জন সার পরিবেশক আছেন। গত নভেম্বরে ৮ হাজার ৬২ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন। ১ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টন টিএসপির চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ১ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ৪ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন এমওপি সারের বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ২ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন। পাঁচ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন ড্যাব সারের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ৪ হাজার ২৩ মেট্রিক টন।
একইভাবে চলতি ডিসেম্বর মাসে ৯ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে ৬ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন। ১ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন টিএসপি চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে ৮৬৭ মেট্রিক টন। ৫ হাজার ২১০ মেট্রিক টন এমওপি সারের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ২ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। ৬ হাজার ১১০ মেট্রিক টন ড্যাবের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ৫ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র র চ হ দ র ব পর ত বর দ দ ম ল ছ ম ট র ক টন ক ষকদ র সরবর হ উপজ ল ইউর য় ট এসপ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন উদ্যোক্তারা: জিইডির প্রতিবেদন
নতুন ব্যবসা চালু করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন বহু উদ্যোক্তা। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
জিইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন যদি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করে এবং নতুন সরকার এসে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাবে।
জিইডির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ দেখিয়েছে জিইডি। জিইডি বলছে, একদিকে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত স্থানীয় চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভালো অবস্থায়
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বেড়েছে, যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান ভালো হওয়ার বড় কারণ।
জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বহির্বাণিজ্যের সূচকে অস্থিরতা ছিল। রপ্তানি আয়ের সূচকও ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয়ে পতন দেখা যায়। তবে অক্টোবরে এই সূচকের অবস্থানে উন্নতি দেখা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির সূচকে বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ধীরগতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। এর কারণ খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা ও আমদানি করা পণ্যের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার বড় কারণ হচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ৪৭ শতাংশ
খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম। আর মাছ ও মাংসের ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে পর্যাপ্ত মৌসুমি সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম কম ছিল। তাই সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সবজি।