টিউশনির টাকায় বিসিএসের প্রস্তুতি; ৪৩-এ শিক্ষা, ৪৪-এ পররাষ্ট্র ক্যাডার
Published: 8th, July 2025 GMT
মো. সোহেল রানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী। পারিবারিক অবস্থা ভালো না থাকায় টিউশনির টাকায় নিয়েছেন বিসিএস প্রস্তুতি, হয়েছেন পররাষ্ট্র ক্যাডার। তার এই অর্জন অসংখ্য প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশেষ করে পরিবারের প্রতি তার গভীর দায়বদ্ধতা এবং নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন।
নওগাঁর মহাদেবপুরে বেড়ে ওঠা সোহেল তার বাবা-মা এবং দুই বোনসহ পাঁচজনের ছোট পরিবারে সবার ছোট। মহাদেবপুরের জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ২০১৪ সালে, যখন তার বাবা আকস্মিকভাবে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান। বাবার অসুস্থতা তাদের পরিবারকে কঠিন আর্থিক সংকটে ফেলে দেয়। তখন থেকেই সোহেলকে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে টিউশনির পথ বেছে নিতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই সোহেলকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বাবা তো অন্ধ, পরিবারের অবস্থাও ভালো ছিল না। টিউশন করিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। এমনকি পাঁচটা টিউশনও করেছি। রাজশাহীতে টিউশন পাওয়া যায় না সহজে, টাকার পরিমাণও কম। তারপরও অনেক খুঁজে ম্যানেজ করেছি।” পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনির চাপ সামলানো ছিল তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
আরো পড়ুন:
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার ৫ বছর পর মুক্তি পেলেন খুবির দুই শিক্ষার্থী
তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করার দাবি শিক্ষার্থীদের
তবে সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল স্নাতক শেষ করার পরের তিন-চার বছর, যখন তিনি বেকার ছিলেন। এই সময়ে সমাজের নানা কটু কথা তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিত। তিনি বলেন, “অনেকে অনেক কথা বলেছে। আত্মীয়-স্বজনরা বলতেন, কি ব্যাপার? পড়াশোনা শেষ, চাকরি কবে করবে? তখন কিছু বলতে পারিনি। বলতাম চেষ্টা করছি, দোয়া রাখবেন। পরিবার থেকেও শুনতে হয়েছে যে, সবাই চাকরি করে, তুই কী করিস?”
এই বেকারত্ব তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। পরীক্ষার জন্য বারবার ঢাকা যাওয়া এবং বই কেনার খরচ জোগাতেও তাকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার প্রতি ততটা মনোযোগী না হলেও, স্নাতক শেষে তার বন্ধুরা তাকে চাকরির প্রস্তুতির পরামর্শ দেন। ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তিনি রাজশাহীতে ফিরে পুরোদমে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেন। প্রস্তুতির সময়ও তাকে টিউশন করাতে হয়েছে, যা তার প্রস্তুতির জন্য দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা কেড়ে নিত।
অনেকবারই তার মনে হয়েছে যে তার পক্ষে বিসিএস পাশ করা সম্ভব নয়। প্রিলি বা অন্যান্য পরীক্ষায় ভালো ফল না এলে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। বন্ধু-বান্ধবরা যখন চাকরি পাচ্ছিল বা বিদেশ যাচ্ছিল, তখন নিজের কিছু না হওয়াটা তাকে কষ্ট দিত।
সোহেলের অনুপ্রেরণা ছিল মূলত অন্যদের সাফল্য। তিনি বলেন, “বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখতাম অনেকে প্রথম হচ্ছে, অনেক সিনিয়ররা চাকরি পাচ্ছে। এগুলো দেখে নিজেকে মোটিভেট করতাম যে, ওরা পারলে আমি কেন পারব না। এটা ভেবেই পড়াশোনা করেছি, রিজিকে থাকলে পারব, ইনশাআল্লাহ।” প্রিলি বা রিটেনের আগে তিনি দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন বলে জানান।
৪৩তম বিসিএসে সোহেল শিক্ষা ক্যাডার পেয়ে নওগাঁর সাপাহার সরকারি কলেজে যোগদান করেন। আর গত ৩০ জুন প্রকাশিত ৪৪তম বিসিএসের ফলাফলে তিনি পররাষ্ট্র ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, যা তার দীর্ঘদিনের সংগ্রামের এক সার্থক পরিণতি।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সোহেল বলেন, “অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই অনেক খুশি। বাবা-মা অনেক খুশি। আমার স্ত্রীও অনেক খুশি। সবার থেকে ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।”
একজন রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে সোহেলের এখন প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে পররাষ্ট্রবিষয়ক কাজগুলো, বিশেষ করে প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাকরি, নিয়োগ ও যাতায়াত সহজ করা এবং বিদেশে গিয়ে যেন তারা সহজে কাজ পান, তা নিশ্চিত করতে চান।
তার এই সফলতার পেছনে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। সোহেল তার বন্ধুদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতেন এবং একসঙ্গে পড়াশোনা ও কোচিং করতেন। বাবা-মায়ের দোয়ার কারণেই তিনি আজ এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন বলে জানান।
যারা আগামীতে বিসিএস দিতে আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্যে সোহেলের বার্তা অত্যন্ত স্পষ্ট- “ডেডিকেশন থাকতে হবে, ফোকাস থাকতে হবে। সরকারি চাকরি, বিসিএস বা ব্যাংক জব যদি কেউ করতে চায়, সেই মোতাবেক আগাতে হবে। অবশ্যই কোনো পিছুটান থাকা যাবে না। এখন যে কম্পিটিশন, দিনে অবশ্যই ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হবে।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব স এস পরর ষ ট র প রস ত ত ট উশন র অন ক খ ব স এস পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত