৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে: মির্জ
Published: 10th, July 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে পোশাকশিল্প মাটিতে শুয়ে পড়বে, দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) আয়োজনে ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন জানি না। যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন ছিল। তবে সময় বোধহয় এখনও চলে যায়নি। আমাদের শিল্প যেন বেঁচে থাকে, কর্মসংস্থান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়—এই বিষয়টা সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংস্কার গভীরভাবে জড়িত। সংস্কার তো আমাদের মজ্জায়, সংস্কার আমাদের রক্তে, আমাদের জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। তাই আজকে যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে—এটা আমি মনে করব যে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এটা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা সংস্কার চাই না, সংস্কার রুখে দিচ্ছি। তাহলে এর চেয়ে বড় সত্যের অপরাধ তো আর কিছু হতে পারে না।’’
ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি মিটিংয়ে আমাদের প্রতিনিধি দল গেছে, আমাদের মতামত সংস্কার কমিটিগুলোর সামনে তুলে ধরেছি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘জুলাই সনদের প্রথম যখন কথা উঠল, তখনই আমরা আমাদের মতামত দিয়ে দিয়েছি। গতকাল রাতেও আবার মতামতপত্র দিয়েছি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’’
সীমান্ত হত্যা ও পুশইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনো হালকা ব্যাপার নয়। প্রতিদিন সীমান্তে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সুতরাং বিষয়টাকে আরও গুরুত্ব সহকারে জনমত সৃষ্টি করার ব্যাপারে গণমাধ্যমে নিয়ে আসার দরকার। সরকার যেন এ বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়।’’
নির্বাচন নিয়েও বিএনপি মহাসচিব এ সময় মন্তব্য করেন। তিনি ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজটা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি যে, এই নির্বাচন যেন সকলের কাছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়।’’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে: মির্জা ফখরুল
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচিত সরকারই একমাত্র দেশ চালাবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।’
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনে প্রত্যেকটি বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়েছে। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়। নির্বাচনের জন্য এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে তো। মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় সংসদের মাধ্যমে। এগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্রে উত্তরণের দিকে যাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, ইলিয়াস আলীসহ ১৭০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এগুলো বলা প্রয়োজন।
বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, এমন খবর পত্রিকায় এসেছে উল্লেখ করে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাঁর দল তিন দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, তাঁদের জন্ম সংস্কারের জন্য। আজ যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে, তাহলে এটি অন্যায়ভাবে বলা হবে।
জুলাই সনদের কথা প্রথম যখন উঠল, তখনই বিএনপি সরকারকে মতামত দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরকারের তরফ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে আমরা পুরো মতামত দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সামান্য লেখাপড়া করেছি। আপনারা শব্দের মারপ্যাঁচ করে কোথায়, কোনদিকে নিয়ে যেতে চান, সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা তিনবার সরকার চালিয়েছি।’
আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায় সরকার, বিবেচনা করছে বিএনপি৮ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ট্যারিফের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। এই সময় এখনো পার হয়ে যায়নি।
সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, পুশইনকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সরকারকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। জনমত সৃষ্টি করা দরকার। সরকার যেন ভারতের সঙ্গে দর–কষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। এ ছাড়া পানির হিস্যার বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে। পানি বণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি এ কে এম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুনডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ ২০ ঘণ্টা আগে