জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা দেশের সংষ্কার চেয়েছি, বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি। কিন্তু এই সকল জনদাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একটি পক্ষ। যারা পুরাতন বন্দোবস্তকে টিকিয়ে রাখতে রাখতে চায়, যারা চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসকে টিকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু আমরা বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের পরে এত মানুষের জীবনদানের পরেও তারা যদি মনে করে পুরাতন রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখবে, এটা এত সহজ হবে না।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনও বাকি আছে, এখনও তাদের গণজোয়ার রয়েছে। যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তাদেরকে কেনার ক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।

শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহীদ আসিফ চত্বরে এক পথসভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। জুলাই পদযাত্রার ১২তম দিনে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা পৌঁছায় পদযাত্রা। সেখানে এনসিপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানান।

একটি রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তারা ভেবেছিল ২/৩টা আসন দেখিয়ে, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার লোভ দেখিয়ে তারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কিনে নেবে। কিন্তু যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তাদেরকে কেনার ক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।’

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট আমরা বলেছিলাম, আসুন জাতীয় সরকার করি, দেশটাকে পুর্র্নগঠন করি, সকল বিভাজন সবকিছুর উর্দ্ধে গিয়ে দেশকে নতুন করে গড়ে তুলি কিন্তু তারা আমাদের সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। তারা বলেছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে, আবার বলেছে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। ক্ষমতার ভাগবাটোয়া ছাড়া দেশ সংস্কারের কোনো বিষয়ে তাদের সমর্থন পাওয়া যায়নি। আমরা বলেছিলাম আমরা দেশের ভিতরে শত্রু তৈরি করতে চাই না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পুনর্গঠন করতে চায়। আমরা এখনও বলছি, নির্বাচনী ভাগবাটোয়ারা নয়, দেশ সংস্কারে আমাদের দরজা এখনও খোলা আছে। যদি এবার দরজা বন্ধ হয়, তবে জনগন আপনাদের আর ক্ষমা করবে না।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের সঞ্চলনায় পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ডা.

তাসনুবা জাবিন, মেসবাহ কামাল, ডা. মনিরুজ্জামান, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। 

পথসভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারীসহ অন্যান্য নেতারা।

তীব্র গরম ও প্রচণ্ড রোদ্র উপেক্ষা করে নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়ে শহীদ আসিফ চত্বরে পৌঁছালে সমাবেশস্থল স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

এ সময় নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আপনারা উপকূল এলাকার বাসিন্দা। ঘূর্ণিঝড় ও নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও এই দেশের উপকূলকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অব্যবস্থাপনা, যাতায়াত ব্যবস্থার অবস্থাপনা আমরা জানি। সাতক্ষীরাবাসী এখনও রেললাইনের সুযোগ পায় না, কোনো রেল সংযোগ ৫৪ বছরেও সাতক্ষীরায় এসে পৌঁছায়নি।

তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কী সাতক্ষীরায় রেললাইন চাই? সাতক্ষীরায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি চাই? স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি চাই?’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত উচিয়ে এতে সমর্থন জানান। এ সময় নাহিদ আরও বলেন, ‘আমাদের জলবায়ু আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের সুন্দরবন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সাতক্ষীরার মানুষ মাটির মানুষ, আপনাদের জলবায়ু নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে। আপনারা নাগরিক পার্টির সঙ্গে থাকবেন, চাঁদাবাজদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’

প্রচন্ড গরমের কারণে অনুষ্ঠানে নেতাদের বক্তব্য সীমিত করে পদযাত্রা, অফিস উদ্বোধনসহ অন্যান্য কর্মসুচি বাদ দিয়ে তারা বাগেরহাট জেলার উদ্দেশে সাতক্ষীরা ত্যাগ করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম ন হ দ ইসল ম র জন ত ক ব যবস থ এনস প র আম দ র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

হাসিনা সরকার আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করেছিল: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার গুম করেছিল, কিন্তু জনগণের দোয়ায় আমি আবার ফিরে এসেছি। প্রায় ১৪ বছর পর মুক্ত পরিবেশে আপনাদের সামনে কথা বলতে পারছি।’

আজ বুধবার দুপুরে পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের বনকানন এলাকায় এক পথসভায় এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি কক্সবাজার-১ আসনের (চকরিয়া-পেকুয়া) দলীয় প্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার নিজ সংসদীয় এলাকায় পাঁচ দিনের সফরে আসেন।

সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ সকাল ১০টার দিকে পেকুয়ার সিকদারপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা–মায়ের কবর জিয়ারত করে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। তাঁর জনসংযোগে মানুষের ঢল নামে। গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে সড়কের দুই পাশে নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।

বেলা ১১টায় পেকুয়ার সাঁকোরপাড় স্টেশনে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত পথসভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ধানের শীষ দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতীক। তিনি অসুস্থ। আমরা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করছি।’

দ্বিতীয় দিনের সফরে সালাহউদ্দিন আহমদ সাঁকোরপাড় স্টেশন, শিলখালীর জারুলবনিয়া, মাঝেরঘোনা, এতিমখানা, কাছারীমোড়া, বারবাকিয়া বাজার, টৈটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা, বনকানন, টৈটং বাজার ও রাজাখালীর আরবশাহ বাজারে গণসংযোগ করেন। এ সময় অন্তত ১০টি পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

টৈটং ইউনিয়নের বনকানন এলাকায় জনসংযোগের সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘২০০৮ সালে আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রীকে আপনারা বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছিলেন। এ জন্য আমি আজীবন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই ঋণ আমি প্রাণ দিয়েও শোধ করতে পারব না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। এখনো ভোটাধিকার পুরোপুরি প্রয়োগ করতে না পারলেও অদূর ভবিষ্যতে তা সম্ভব হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই দেশ, এই দেশের মানুষ আমার প্রাণের অংশ। আপনাদের ভালোবাসায় সারা জীবন আবদ্ধ থাকতে চাই। আল্লাহ আবার সেবা করার সুযোগ দিলে সেটিই হবে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোটাররা মুক্ত পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেন উপস্থিত জনতার কাছে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং তারেক রহমান একটি গণতান্ত্রিক দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

পথসভায় উপস্থিত ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ, পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন, পেকুয়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কামরান জাদিদ, পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটে আওয়ামী দোসরদের সুযোগ দিলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও
  • হাসিনা সরকার আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করেছিল: সালাহউদ্দিন আহমদ