রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় যঁারা আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৫ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ১১ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৩১ জন মারা গেছেন, হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৫ জন।
এসব রোগীর চিকিৎসা সহায়তা দিতে চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় এসেছে এবং তাঁরা বার্ন ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছেন। দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়েই এসব দেশ চিকিৎসক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। মানবতার সেবায় তাদের এই অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগ শিশু, যাদের চিকিৎসাসেবার বিষয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবে শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কম। প্রাপ্তবয়স্করা যতটা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেন, তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। বিমান দুর্ঘটনায় আহতরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। তঁারা বড় ধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। এ অবস্থায় শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসা জরুরি।
গতকাল বৃহস্পতিবার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের তিন দিন পার হলেও তিন শিক্ষার্থী ও দুই অভিভাবক এখনো নিখোঁজ আছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা গেছে, তাদের বেশির ভাগের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় কয়েকজনের লাশ হস্তান্তর করা যায়নি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষায় তারা পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে। আমরা আশা করি, পরিবারের কাছে অতি শিগগিরই লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে।
মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেলের প্রধান কর্তব্য হলো হতাহত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করা এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। অভিভাবকেরা তঁাদের সন্তানদের খুঁজে না পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ নম্বর ভবনে অভিযোগ জানানোর কথাও বলা হয়েছে।
বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। যঁারা মারা গেছেন, তঁাদের আর আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। যঁারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তঁাদের সুচিকিৎসা দেওয়া এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
চিকিৎসার কাজে দেশের সেরা চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি চিকিৎসকদের যুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চয়ই আশাব্যঞ্জক। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আগুনে পোড়া রোগীদের বিষয়টি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। দুর্ঘটনার পর সরকার আহতদের চিকিৎসাসেবায় যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই উদ্যোগে যাতে ভাটা না পড়ে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।
সবশেষে একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আগুনে পোড়া রোগীদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। এ কারণে হাসপাতালে বহিরাগতদের প্রবেশ পুরোপুরি রহিত করা প্রয়োজন। এমনকি স্বজনদের প্রবেশেও কঠোর বিধিনিষেধ থাকা বাঞ্ছনীয়; যাতে রোগীদের অহেতুক বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে না হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ম ন ব ধ বস ত র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
আহতদের চিকিৎসা দিয়ে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসকরা
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহতদের বিশেষ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান শেষে দেশে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসক দল।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং সফদরজং হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত চার সদস্যের দলটি ঢাকা ছেড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশনায় গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশে আসে এই চিকিৎসক দল।
গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে বহু মানুষ হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই ভারত বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
ঢাকায় অবস্থানকালে ভারতীয় চিকিৎসক দলটি জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে। তারা মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসায় কারিগরি পরামর্শ প্রদান করেন এবং জটিল কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত বিনিময় করেন।
ভারতীয় চিকিৎসকরা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গৃহীত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ইনস্টিটিউটের বার্ন কেয়ার ইউনিট ও ক্রিটিক্যাল কেস ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের দক্ষতার প্রশংসা করেন তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে ভারত আরো চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে ভারতীয় হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ দেওয়া হবে।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, দেশটির মেডিকেল টিমের এই সফর দুই দেশের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও সহানুভূতির চিরন্তন বন্ধনের প্রতিফল।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী