জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমরা বলেছিলাম, এক নতুন বাংলাদেশ লাগবে। এক নতুন বন্দোবস্ত লাগবে। পুরোনো সিস্টেমে, পুরোনো আইনে আমরা আর এ বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেব না। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর নানান শক্তি আবার চেষ্টা করছে পুরোনো সিস্টেমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।’

আজ শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপারে এনসিপির উদ্যোগে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষে আয়োজিত পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আমরা যখন রাজপথে নেমেছিলাম, আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছে। বোনেরা নির্যাতিত হয়েছে। আমরা এই বাংলাদেশকে আর পুরোনো পথে ফেরত নিতে দেব না।’

বিচারব্যবস্থার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আকাশচুম্বী। তরুণেরা কর্মসংস্থান, জনগণ অর্থনৈতিক মুক্তি, মানবিক মর্যাদা, ডিজিটাল স্বাধীনতার জন্য রাজপথে নেমেছিল। আমরা হয়তো সেই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র পেয়েছি। আমরা এখনো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, কর্মসংস্থানের দাবি পূরণ করতে পারিনি।’

পথসভার আয়োজন করে এনসিপি মৌলভীবাজার জেলা শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন এনসিপির মৌলভীবাজারের প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সচিব প্রীতম দাশ প্রমুখ। পথসভায় কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম, অনেক দাবি ছিল। কিন্তু সব স্বপ্নকে নির্বাসনে পাঠিয়ে একমাত্র দাবিতে রূপান্তর করে ফেলা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, আমরা নির্বাচন চাই। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করা শক্তি, ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করা শক্তি। কিন্তু বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে। এই নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না।’

কয়েক দিন পরপর ন্যায্য মজুরির জন্য চা–শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক জানান, শ্রীলঙ্কায় চা-শ্রমিকেরা সাড়ে ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান। ভারতে পান ৪২০ টাকা দৈনিক মজুরি। বাংলাদেশে পান ১৭৯ টাকা। এই টাকায় একজন শ্রমিক কীভাবে জীবন যাপন করে? কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে বাংলাদেশ কামনা করি, সেখানে যাতে চা-শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায়, সন্তানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। চা-শ্রমিক, খাসিয়াসহ সকল জাতির অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিবিসির একটি রিপোর্ট দেখলাম হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে, যেখানে পুলিশ হত্যাকে প্রমিনেন্ট করে তোলা হচ্ছে। এই পুলিশ হত্যার দায় আমাদের অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ৩ আগস্ট আমরা এক দফার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছিলাম আমাদের এই লড়াইটা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। শেখ হাসিনার পুলিশ, ছাত্রলীগ, সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি চালিয়ে, বর্বরোচিত হামলা করে আমাদের অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতা বাধ্য হয়েছিলাম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। লাঠি হাতে তুলে নিতে। বাধ্য হয়েছিলাম ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে। আমরা স্পষ্ট করেছিলাম, এই লড়াইটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র, ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই।’

পথসভার আগে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি পদযাত্রা শুরু করা হয়। পদযাত্রাটি কোর্ট রোড, শাহ মোস্তফা সড়ক হয়ে বেরিরপারে পথসভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়। পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মহসিন অডিটোরিয়ামে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিকে অনভিপ্রেত, অগণতান্ত্রিক এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য বিপজ্জনক আখ্যায়িত করেছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, যে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে জাতীয় পার্টি অতীতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল, সেই জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে? বিষয়টি বিস্ময়কর ও দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টির এই অংশের মহাসচিবের বাসভবনে জরুরি মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, জাতীয় পার্টি তার জন্মলগ্ন থেকেই জনগণের অধিকার, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারক ও বাহক। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জাতীয় পার্টি কখনোই কোনো রাজনৈতিক অপরাধে জড়িত হয়নি বা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়নি, যার কারণে দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়; বরং দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাধীনতার পর দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, গ্রাম থেকে শহরে উন্নয়ন ছড়িয়ে দেওয়া, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ইতিহাস জাতীয় পার্টির রয়েছে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি যোগ করেন, কাউকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এবং জনগণের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেয়।

সভায় জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান, সরদার শাহজাহান, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. বেলাল হোসেন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • পটুয়াখালীতে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন
  • বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ