বাংলাদেশকে আর পুরোনো পথে ফেরত নিতে দেব না: নাহিদ ইসলাম
Published: 26th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমরা বলেছিলাম, এক নতুন বাংলাদেশ লাগবে। এক নতুন বন্দোবস্ত লাগবে। পুরোনো সিস্টেমে, পুরোনো আইনে আমরা আর এ বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেব না। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর নানান শক্তি আবার চেষ্টা করছে পুরোনো সিস্টেমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।’
আজ শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপারে এনসিপির উদ্যোগে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষে আয়োজিত পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আমরা যখন রাজপথে নেমেছিলাম, আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছে। বোনেরা নির্যাতিত হয়েছে। আমরা এই বাংলাদেশকে আর পুরোনো পথে ফেরত নিতে দেব না।’
বিচারব্যবস্থার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আকাশচুম্বী। তরুণেরা কর্মসংস্থান, জনগণ অর্থনৈতিক মুক্তি, মানবিক মর্যাদা, ডিজিটাল স্বাধীনতার জন্য রাজপথে নেমেছিল। আমরা হয়তো সেই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র পেয়েছি। আমরা এখনো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, কর্মসংস্থানের দাবি পূরণ করতে পারিনি।’
পথসভার আয়োজন করে এনসিপি মৌলভীবাজার জেলা শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন এনসিপির মৌলভীবাজারের প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সচিব প্রীতম দাশ প্রমুখ। পথসভায় কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম, অনেক দাবি ছিল। কিন্তু সব স্বপ্নকে নির্বাসনে পাঠিয়ে একমাত্র দাবিতে রূপান্তর করে ফেলা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, আমরা নির্বাচন চাই। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করা শক্তি, ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করা শক্তি। কিন্তু বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে। এই নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না।’
কয়েক দিন পরপর ন্যায্য মজুরির জন্য চা–শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক জানান, শ্রীলঙ্কায় চা-শ্রমিকেরা সাড়ে ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান। ভারতে পান ৪২০ টাকা দৈনিক মজুরি। বাংলাদেশে পান ১৭৯ টাকা। এই টাকায় একজন শ্রমিক কীভাবে জীবন যাপন করে? কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে বাংলাদেশ কামনা করি, সেখানে যাতে চা-শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায়, সন্তানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। চা-শ্রমিক, খাসিয়াসহ সকল জাতির অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিবিসির একটি রিপোর্ট দেখলাম হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে, যেখানে পুলিশ হত্যাকে প্রমিনেন্ট করে তোলা হচ্ছে। এই পুলিশ হত্যার দায় আমাদের অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ৩ আগস্ট আমরা এক দফার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছিলাম আমাদের এই লড়াইটা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। শেখ হাসিনার পুলিশ, ছাত্রলীগ, সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি চালিয়ে, বর্বরোচিত হামলা করে আমাদের অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতা বাধ্য হয়েছিলাম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। লাঠি হাতে তুলে নিতে। বাধ্য হয়েছিলাম ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে। আমরা স্পষ্ট করেছিলাম, এই লড়াইটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র, ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই।’
পথসভার আগে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি পদযাত্রা শুরু করা হয়। পদযাত্রাটি কোর্ট রোড, শাহ মোস্তফা সড়ক হয়ে বেরিরপারে পথসভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়। পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মহসিন অডিটোরিয়ামে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনে সচেতনভাবে এগোচ্ছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনে বিএনপি সচেতনভাবে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘জনগণের যেটা প্রয়োজন, যুগের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তনগুলো আনা দরকার, রাষ্ট্রকাঠামোর যে পরিবর্তন আনা দরকার, সে বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন। সচেতনভাবেই সামনের দিকে এগোচ্ছি।’
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ‘পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু এবং পদ্মা ব্যারাজ এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে তিনি সাতবার ফিজিবিলিটি স্টাডি (প্রস্তাবিত প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং বাস্তবতার মূল্যায়ন) হলেও এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে না পারাকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এ জন্য রাজনৈতিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন। এটি তখনই তৈরি হবে, যখন জনগণের মধ্য থেকে এ দাবি উঠে আসবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনেক আগেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর অঙ্গীকার করেছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বহু অংশ ছেড়ে মানুষ চলে যাচ্ছে। বাসের উপযোগী আর থাকছে না। পরবর্তী সরকারগুলো শুধু নয়, জনগণেরও এ বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ থাকা উচিত।
পরবর্তী সরকারগুলোকে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। আজ একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। অভূতপূর্ব ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল। সেই ঐক্যকে সামনে নিয়ে আমরা সবাই যদি মূল বিষয়গুলোকে সামনে আনতে পারি, চিন্তার ঐক্য যদি থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা সফল হব।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সবকিছুই নির্ভর করবে মানুষের ওপর। ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশের মানুষ পারে। সেটি একাত্তর সালে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি চব্বিশেও তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের পালস আমি বুঝি। দেশের মানুষ উন্নতি চায়, ওপরে উঠতে চায়, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।’
আয়োজক কমিটির সভাপতি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।