নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে পুষ্টিহীনতায় ছয় মাসে ৬৫২ শিশুর মৃত্যু: এমএসএফ
Published: 26th, July 2025 GMT
নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৬৫২টি শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা গেছে। বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় এসব শিশুর প্রয়োজনীয় যত্ন নিশ্চিত করা যায়নি। প্রধানত এ কারণেই তারা মারা গেছে বলে জানিয়েছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)।
চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থাটি গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, উত্তর নাইজেরিয়ায় বর্তমানে পুষ্টিহীনতার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
আফ্রিকার দেশটির এ অঞ্চল আগে থেকেই সশস্ত্র বিদ্রোহে জর্জরিত। বর্তমানে অঞ্চলটিতে শিশুদের পুষ্টিহীনতার সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে গত ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় শিশুদের মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ও প্রাণঘাতী পুষ্টিহীনতা ২০৮ শতাংশ বেড়েছে।
এমএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের শুরু থেকে আমাদের পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬৫২ শিশু মারা গেছে। কারণ, সময়মতো তারা প্রয়োজনীয় সেবা পায়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের বৈদেশিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তের কারণে দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা তহবিলে বড় রকমের কাটছাঁট হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাইজেরিয়ার জীবনযাত্রার ব্যয় ও সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধির ঘটনা। এতে করে দেশটির উত্তরে চরম সংকটময় পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
এমএসএফের নাইজেরিয়ার প্রতিনিধি আহমেদ আলদিখারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আসা সহায়তাও কমে গেছে। এ কারণে অপুষ্টির শিকার শিশুদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই সংকটের প্রকৃত মাত্রা সব পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে গেছে।
অপুষ্টির হাত থেকে অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী নারীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এমএসএফ ৭৫০ জন মায়ের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে অংশ নেওয়াদের অর্ধেকের বেশি মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ১৩ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।
জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির নাইজেরিয়ার প্রধান ডেভিড স্টিভেনসনের তথ্যমতে, দেশটির প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ বর্তমানে তীব্র খাদ্যসংকটে রয়েছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ডব্লিউএফপি সতর্ক করে বলেছে, মারাত্মক অর্থসংকটের কারণে জুলাইয়ের (চলতি মাসের) শেষ নাগাদ তারা নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৩ লাখ মানুষকে দেওয়া সব জরুরি খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ষ ট হ নত ন ইজ র য় র দ শট র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।