নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৬৫২টি শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা গেছে। বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় এসব শিশুর প্রয়োজনীয় যত্ন নিশ্চিত করা যায়নি। প্রধানত এ কারণেই তারা মারা গেছে বলে জানিয়েছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)।

চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থাটি গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, উত্তর নাইজেরিয়ায় বর্তমানে পুষ্টিহীনতার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

আফ্রিকার দেশটির এ অঞ্চল আগে থেকেই সশস্ত্র বিদ্রোহে জর্জরিত। বর্তমানে অঞ্চলটিতে শিশুদের পুষ্টিহীনতার সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে গত ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় শিশুদের মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ও প্রাণঘাতী পুষ্টিহীনতা ২০৮ শতাংশ বেড়েছে।

এমএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের শুরু থেকে আমাদের পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬৫২ শিশু মারা গেছে। কারণ, সময়মতো তারা প্রয়োজনীয় সেবা পায়নি।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের বৈদেশিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তের কারণে দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা তহবিলে বড় রকমের কাটছাঁট হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাইজেরিয়ার জীবনযাত্রার ব্যয় ও সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধির ঘটনা। এতে করে দেশটির উত্তরে চরম সংকটময় পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

এমএসএফের নাইজেরিয়ার প্রতিনিধি আহমেদ আলদিখারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আসা সহায়তাও কমে গেছে। এ কারণে অপুষ্টির শিকার শিশুদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই সংকটের প্রকৃত মাত্রা সব পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে গেছে।

অপুষ্টির হাত থেকে অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী নারীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এমএসএফ ৭৫০ জন মায়ের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে অংশ নেওয়াদের অর্ধেকের বেশি মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ১৩ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।

জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির নাইজেরিয়ার প্রধান ডেভিড স্টিভেনসনের তথ্যমতে, দেশটির প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ বর্তমানে তীব্র খাদ্যসংকটে রয়েছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে ডব্লিউএফপি সতর্ক করে বলেছে, মারাত্মক অর্থসংকটের কারণে জুলাইয়ের (চলতি মাসের) শেষ নাগাদ তারা নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৩ লাখ মানুষকে দেওয়া সব জরুরি খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ষ ট হ নত ন ইজ র য় র দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ