সরকারি সিদ্ধান্তের পরও বন্ড সুবিধা পাচ্ছে না আসবাবশিল্প
Published: 29th, July 2025 GMT
সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হিসেবে আসবাবশিল্প নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করার জন্য আসবাবশিল্পকে বন্ড লাইসেন্স দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে বন্ডের বিষয়টি ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে।
এদিকে কাঁচামাল আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ ও ব্যবসায়ের খরচসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পেরে উঠছে না দেশের আসবাব খাত। ফলে আসবাব রপ্তানি ঘুরেফিরে একটি জায়গাতেই যেন আটকে আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা বাড়তি ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খাতটির উদ্যোক্তারা। এর কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি আসবাবের বড় বাজার।
আসবাব খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসবাবপত্র রপ্তানি হুমকিতে পড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারে আসবাবের রপ্তানি বাড়াতে হলে ১০০ শতাংশ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে হলেও কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের আসবাবপত্র রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে আসবাব রপ্তানির ৪৩ শতাংশ বা ১ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তিন বছর আগে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাকশিল্পের পর আসবাব খাতে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ জনবল সম্পৃক্ত। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ। এই খাতে দেশে ৪০ হাজারের বেশি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান আসবাব উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত।
জানা গেছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের মতো ব্যাংক গ্যারান্টির সমপরিমাণ অর্থের বিপরীতে আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে আসবাবসহ চারটি খাতকে বন্ড সুবিধা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। তারপর ২০২৩ সালের মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ১১তম সভায় তৈরি পোশাকশিল্পের মতো অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পে বন্ড ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এই বিষয়টি আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪, রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ এবং ট্যারিফ পলিসি ২০২৩-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
একাধিক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, আসবাবশিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জন্য এখনো আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে আসবাব উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের ওপর শুল্ক অনেক বেশি। বিভিন্ন ধাপে এখন শুল্ক ১০ থেকে ১২৭ শতাংশ দিতে হয়। এতে উচ্চ মানসম্পন্ন আসবাব তৈরিতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
জানতে চাইলে দেশের শীর্ষস্থানীয় আসবাব ব্র্যান্ড হাতিলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম এইচ রহমান বলেন, ‘দেশে কিছু কাঁচামাল পাওয়া গেলেও তা পরিমাণ ও মানে রপ্তানির উপযোগী নয়। তাই কাঠ, বোর্ড ও বিভিন্ন ফিটিংস আমদানি করতে হয়। এতে খরচ ও উৎপাদন সময় বেড়ে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন করে শুল্ক বাড়লে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়বে। এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।’
সেলিম এইচ রহমান আরও বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে গুরুত্ব না দিলে সামনে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। সঠিক কৌশল, সহায়তা ও কার্যকর নীতিমালার মাধ্যমে আসবাব খাত আগামী দিনে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে। তাই আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহকে রপ্তানি নীতি, আমদানি নীতি আদেশ এবং জাতীয় শুল্ক নীতির আলোকে বন্ড সুবিধা প্রদানের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র চ ম ল আমদ ন বন ড স ব ধ আসব ব খ ত ব যবস য় র আসব ব আসব ব র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণে একজন আহত, ৫ বছরে ১০ জন হামলার শিকার
বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ায় আজ শুক্রবার সকালে ভালুকের আক্রমণে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে ১০ জন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের অধিকাংশ ম্রো জনগোষ্ঠীর। ভালুকের কারণে আহত হওয়ার ঘটনায় আবেদন না করায় এই পর্যন্ত কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ার কাইনপ্রে ম্রো (৩৫) পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে জুমখেতে কাজ করতে যান। সেখানে জুমের পাশে কলাবাগানে কাজ করার সময় হঠাৎ কালো রঙের একটি ভালুক তাঁর ওপর আক্রমণ করে। ভালুকটি তাঁর পেটে ও মুখে আঘাত করতে থাকে। তাঁর চিৎকারে আশপাশে জুমের লোকজন এগিয়ে আসেন।
আহত কাইনপ্রে ম্রোর ভাই তনরুই ম্রো জানিয়েছেন, আশপাশের লোকজনের এগিয়ে আসা দেখে ভালুকটি কাইনপ্রে ম্রোকে ছেড়ে দিয়ে বনে পালিয়ে যায়। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে কাইনপ্রে ম্রোকে উদ্ধার করে দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়া জেলা শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে। পাড়াটি রুমা উপজেলার গালেংগ্যা ইউনিয়নে পড়েছে।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহত কাইনপ্রে ম্রোর পেটে ও মাথায় গভীর ক্ষত আছে। এ জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, থানচি তিন্দু ইউনিয়নে মেনপই ম্রো নামের একজন ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথম ভালুকের আক্রমণের শিকার হন। ওই একজনসহ ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৫ বছরে ১০ জন ভালুকের আক্রমণে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে থানচিতে দুজন, রুমাতে তিনজন, আলীকদমে একজন ও বান্দরবান সদর উপজেলা চিম্বুক পাহাড়ে চারজন রয়েছেন। কারও মৃত্যু না হলেও তাঁদের মধ্যে কেউ চোখ হারিয়েছেন, কারও হাত–পা পঙ্গু হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা একজন মারমা ও একজন খুমি ছাড়া অন্যরা সবাই ম্রো।
বন বিভাগের বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবদুর রহমান জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল কেটে উদ্যান বাগান ও জুমচাষ করা এলাকাগুলোতে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাগানের কারণে ভালুক ও অন্যান্য বন্য প্রাণীরা আবাসস্থল ও বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যসংস্থান হারাচ্ছে। জীবনের তাগিদে তারা মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে। বন নির্ভর মানুষকে অন্যভাবে আয়ের সংস্থানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ না হলে বন্য প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে উঠবে না। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা না হলে বন্য প্রাণী ও মানুষ কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না।