রূপগঞ্জে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ
Published: 30th, July 2025 GMT
রূপগঞ্জের ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
বই বিক্রির সময় অধ্যক্ষ, পিকআপ চালক ও চোরাই বই ক্রেতাকে হাতেনাতে জনতা ধরলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম মোটা উৎচোকের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর আগেও অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ, কাজ না করিয়ে বিল তোলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে একটি নীল রংয়ের পিকআপ ট্রাক ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে প্রবেশ করে। অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগম স্টোর রুম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণির নতুন সব বই কেজি দরে বিক্রি করেন।
পিকআপ চালক হেদায়েত উল্লাহ ও বই ক্রেতা মিলে সকল বই পিকআপে তুলে ফেলেন। বিকেলের দিকে স্থানীয়রা বই বিক্রির বিষয়টি টের পেয়ে বইয়ের ক্রেতা, অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগম ও বই ক্রেতাকে হাতেনাতে আটক করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলমকে খবর দেন।
পরে সন্ধ্যার দিকে শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বই পূনরায় পিকআপ থেকে নামিয়ে স্টোর রুমে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বই ষ্টোর রুমে নামানোর নির্দেশ প্রদান করলেও মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম অধ্যক্ষ, বই ক্রেতা ও পিকআপ চালকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে, বই বিক্রির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, গত বছরের ৫ আগষ্ট ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠে। আউয়ালের বিরুদ্ধে স্কুলের ১৬ কোটি টাকা দূর্নীতির প্রমান পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পরে সুরাইরা বেগম অধ্যক্ষ হিসেবে ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরই সুরাইয়া বেগম স্কুল এন্ড কলেজটিকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেন।
সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্কুলে ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রিক কাজ করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিল তোলেন। স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ না করে, ব্যক্তিগত অফিসে গোপনে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়। কোন শিক্ষক সুরাইয়া বেগমের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে চাকরিচ্যুত হতে হয়।
গত কয়েকদিন আগে সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সিনিয়র শিক্ষক বিমল দাসকে কোন নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করেন। সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, পর্যাপ্ত বই নেই বলে আমাদেরকে বই দেওয়া হয়নি। অথচ এখন দেখতে পাচ্ছি বই কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাদের আমরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুরাইয়া পারভিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি পক্ষ সব সময় ষড়যন্ত্র করে থাকে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম বলেন, নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার বই বিক্রিকালে জব্দ করা হয়। অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ম্যানেজের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, এ ঘটনাটি আমি শোনা মাত্রই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছি ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে। আগামী তিন দিনের মধ্যে একটি কমিটির মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় রিপোর্ট পাঠিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা অফিসের যদি কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ক ল কল জ র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অফ স র স দ দ ক ন র ব গম র ব র দ ধ বই ব ক র র বই ক র ত উপজ ল প কআপ ঘটন র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে