ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প
Published: 30th, July 2025 GMT
ফেনী জেলার তিনটি নদীর ভাঙন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পরিচালক তপন কান্তি মজুমদার।
‘মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে ১২৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, নদী খনন, রেগুলেটর, বাঁধ, সেতু, ফ্লাড বাইপাস এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হওয়ার আগে এর অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে নদীতীর বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণে। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। প্রকল্পের ওপর বিস্তারিত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান, ফেনী পুলিশ সুপার মো.
পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সফল করতে অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম প্রকল্পটিকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফেনী জেলার দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মাইলফলক সৃষ্টি হবে।
সভায় বিএনপি, জেএসডি, এবি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন এবং সর্বসম্মতভাবে প্রকল্পটির দ্রুত একনেক অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) ও ফেনী পৌর প্রশাসন গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।
বিএনপি নেতা ভিপি জয়নাল বলেন, সবার উদ্যোগে সম্মিলিত প্রয়াসে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফেনীবাসীর কল্যাণে সবাইকে একাত্ম হতে হবে। একনেকে পাস করতে এই ইউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকতে হবে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘প্রশাসন বলতে আমলাতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাকে জানি। প্রশাসনকে গণমুখী করেছে এই সভা। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই সভার প্রতিফলন হচ্ছে।’
মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, সদস্য মশিউর রহমান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন, বিএনপির জেলা সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুর রহমান প্রমুখ।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে অন্তত ২০০টি ভাঙন হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় প্রাণ গেছে ২৯ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাইতেও ৪২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ২৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ প রকল প ব এনপ র র রহম ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি