মানব পাচার প্রতিরোধ একক কোনো প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প কিংবা মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। সরকার ও সমাজের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ করতে হবে। এ ছাড়া সংঘবদ্ধ পাচারচক্র নিশ্চিহ্ন করতে হলে দেশে শক্ত আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস-২০২৫ পালন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। সুইজারল্যান্ডের সহায়তায় উইনরক ইন্টারন্যাশনালের বাস্তবায়ন করা ‘আশ্বাস’ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।

এবারের বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানব পাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার’। এ প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘সমন্বিত উদ্যোগে বন্ধ হোক নির্যাতন: সম্মিলিত কণ্ঠস্বর ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হোক পরিবর্তন’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করা হয়।

আলোচনায় সরকারি কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমকর্মী, পাচারের শিকার ব্যক্তি ও তৃণমূলের মানব পাচারবিরোধী কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও মানব পাচার প্রতিরোধে সক্রিয় কর্মীদের বক্তব্যে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা উঠে আসে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আমন্ত্রিত অতিথিরা ফিতা কেটে প্রদর্শনী স্টল উদ্বোধন করেন। এসব স্টলে পাচার থেকে বেঁচে ফেরাদের তৈরি করা পণ্য ও পোশাক প্রদর্শিত হয়।

উদ্বোধনী আলোচনার পর ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’  শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা হয়। এতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারি আইনজীবী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পাচার থেকে বেঁচে ফেরাদের প্রতিনিধি এবং মানব পাচার প্রতিরোধে সক্রিয় কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলে আলোচনা হয়। আলোচনায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তা, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং পাচার থেকে বেঁচে ফেরাদের আইনি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার নিয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

এরপর ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও ভুক্তভোগীদের অধিকার রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ’ শীর্ষক আরও একটি প্যানেল আলোচনা হয়। এ আলোচনায় আলোচকেরা সম্মিলিতভাবে মানব পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ এবং ভুক্তভোগীবান্ধব ও মানবিক সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

এ আলোচনায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয় টুলস তৈরি, সাইবার-ট্রাফিকিং প্রতিরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিতের বিষয়গুলো উঠে আসে।

এ আয়োজন ‘আশ্বাস’ প্রকল্পের সারভাইভার লিডার (পাচার থেকে বেঁচে ফেরা), যাঁরা অন্য সব সারভাইভার জন্য একটি আশার আলো হিসেবে কাজ করছেন এবং মানব পাচার প্রতিরোধে সক্রিয় কর্মীরা, যাঁরা মানব পাচার প্রতিরোধে নিজেদের এলাকায় বিশেষ অবদান রাখছেন, তাঁদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মমতাজ আহমেদ, ঢাকায় সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কহিন অশ পিনইয়ানি, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক দাউদ মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব লুৎফুন্নাহার ও প্রাণ–আরএফএল গ্রূপের পরিচালক উজমা চৌধুরী প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় সমাপনী বক্তব্য দেন উইনরক ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিভ বাংলাদেশ ও আশ্বাসের প্রকল্প পরিচালক দীপ্তা রক্ষিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প সমন ব ত গ রহণ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ