কলেজ মাঠের পানি নিষ্কাশন নিয়ে শিক্ষক-স্থানীয়দের সংঘর্ষ
Published: 6th, August 2025 GMT
বরগুনার পাথরঘাটায় কলেজ মাঠের পানি নিষ্কাশনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘর্ষের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, মাইনুল ইসলাম রেজাকে ৮-১০ জন শিক্ষক চারপাশ থেকে ঘিরে রেখে দুইজন তাকে মারধর করছে। এরপর স্থানীয়রা বাঁধা দিলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে বিএনপির ২ পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
গণঅভ্যুত্থান দিবস: ফেনীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ
আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন চিকিৎসক। এছাড়া পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন চারজন। বাকি আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পাথরঘাটা কলেজ মাঠে বৃষ্টির পানি জমে পড়ার কারণে তা পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা অ্যাডভোকেট নুর ইসলাম ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুল আলমের জমির উপর দিয়ে নির্মিত ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন করা হত। তবে কলেজ মাঠের জমি উঁচু ও এর আশপাশের জমি নিচু হওয়ায় প্রায়ই সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে কলেজের আশপাশের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন।
বিরোধের সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুল হকের সঙ্গে কলেজের শিক্ষক জাহিদ হাসান ও বেলালের কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় তারা শামসুল হককে লাঞ্ছিত করেন। প্রতিবাদ করতে গেলে ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম রেজার উপর চড়াও হয়ে তাকে মারধর করেন ওই দুই শিক্ষক। এ নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।
এলাকার ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিশাল কলেজ মাঠের পানি দক্ষিণ দিক নেমে আসছে। এতে তাদের বসতবাড়ি অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কোনোভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
মারধরের শিকার মাইনুল ইসলাম রেজার স্ত্রী বলেন, “আমি আমার স্বামীকে নিয়ে বরিশালে চিকিৎসায় আছি। আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে কলেজের বেলাল হোসেন ও জাহিদ হাসান স্যার মেরে নাকের হাড় ভেঙে দিয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জাহিদুর রহমানের মুঠোফোন কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে বেলাল হোসেনকে কল দিলে তিনি একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেয়।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন কবির মুঠোফোনে বলেন, “শিক্ষকদের ওপর স্থানীয়রা অতর্কিত হামলা করেছে বলে জানতে পেরেছি। কলেজ মাঠের পানি নিষ্কাশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা করছিল স্থানীয়রা। বিষয়টি থানা পুলিশ ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পৃথকভাবে তদন্ত করবেন।”
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর আহতদের উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ কোনো পক্ষ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, “কলেজের ঘটনাটি আমাকে অবগত করা হয়েছে। আহতরা সুস্থ্য হওয়ার পর দেখব।
ঢাকা/ইমরান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ আহত কল জ ম ঠ র প ন কর মকর ত প থরঘ ট কল জ র পর স থ স ঘর ষ উপজ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে জুলাই যোদ্ধাদের ফুল দেওয়া হলো পিওনকে দিয়ে!
শরীয়তপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আহত জুলাই যোদ্ধাদের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী (পিওন) দিয়ে ফুল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন আহত জুলাই যোদ্ধারা।
জেলা প্রশাসকের দাবি, নেজারত ডেপুটি কালেক্টরের (এনডিসি) নেতৃত্বে ফুল দেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগ সঠিক নয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম ও সিভিল সার্জন ডা. মো. রেহান উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১৪ জনের পরিবার ও ৮৩ জন আহতদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
জুলাই যোদ্ধাদের অভিযোগ, ১৪ জন শহীদের পরিবারের হাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার নিজে উপহার তুলে দিলেও ভিন্নতা দেখা যায় আহতদের উপহার ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়ার ক্ষেত্রে। তাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পিওন দিয়ে ফুল দেওয়া হয়।
ফাতেমা ইয়াসমিন নামে নারী জুলাই যোদ্ধা বলেন, “ডিসি বা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আমাদের ফুল দেওয়ার কথা ছিল। তারা আমাদের ডিসি অফিসের পিয়ন দিয়ে ফুল ও উপহার দিয়েছেন। এর আগেও জেলা প্রশাসন আমাদের জুলাই কন্যাদের উপহার দিয়েছেন পিয়ন দিয়ে, তারা ফুল অনেকের হাতের উপর ফেলে দিয়েছে। আমরা কখনোই তাদের থেকে সম্মান পাইনি। তাদের মনোভাব স্বৈরাচারী।”
নারী জুলাই যোদ্ধা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “এখানে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। যারা শহীদ হয়েছেন তারা আমাদেরই সহযোদ্ধা। তাদের পরিবারের হাতে ডিসি নিজে সম্মাননা তুলে দিয়েছেন এটি বেশ ভালো, তবে আমাদের বেলায় কেন আলাদাভাবে দিচ্ছে। এখানে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
জুলাই যোদ্ধা আব্দুর রহমান ডালিম বলেন, “আমরা জানতাম আমাদের জেলা প্রশাসক ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহারসামগ্রী তুলে দেবেন। জেলা প্রশাসক সেই জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন। এটি আসলেই দুঃখজনক। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এটাই আমরা চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, “এনডিসির নেতৃত্বে ফুল দেয়া হয়েছে এবং তিনি নিজেই ছিলেন। যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগ সঠিক নয়।”
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ