বরিশালে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের এক নেতা গ্রেপ্তার, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
Published: 19th, August 2025 GMT
বরিশালে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মো. সুহানকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় নগর ভবনের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, সুহান ফেসবুকে হাতে দাসহ ছবি পোস্ট করেছেন। এ জন্যই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার মো.
এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা তিনটায় তাঁরা কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি মো. নাজমুল হুদা। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও আগামীকাল বুধবার থেকে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।
গত রোববার দুপুরে হাসপাতালের ফটকে বিক্ষোভকালে মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসা কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলন করা ব্যক্তিরা হামলায় জড়িত—এমন অভিযোগ তুলে তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘটে যান ইন্টার্ন চিকিসৎসকেরা। একই দাবিতে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের সামনে তৃতীয় দিনের মতো মানববন্ধন করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দুপুরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর। তাঁর আশ্বাসের ভিত্তিতেই ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মস্থলে যোগ দেন এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে কতিপয় সন্ত্রাসী চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ এমনকি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। সড়কে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেওয়া হচ্ছে, গালিগালাজ করা হচ্ছে। এ জন্যই তাঁরা ক্লাস বর্জন করেছিলেন। তবে বুধবার থেকে তাঁরা ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দাবি করেন, কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও সুহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এর প্রতিবাদ জানান এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুহানকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চান।
পুলিশ জানায়, হাসপাতালের সামনে গত রোববার এক চিকিৎসকসহ তিনজনকে মারধরের ঘটনায় সোমবার রাতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মোহাম্মদ বাহাদুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের নেতা মহিউদ্দিন রনিসহ অজ্ঞাতনামা ৮০ জনকে আসামি করা হয়।
ছাত্র-জনতার ব্যানারে ২২ দিন ধরে বরিশালে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৮ আগস্ট থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ছয় দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক সাড়ে ২৯ ঘণ্টা অবরোধ করা হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালের ফটকের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন করছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বরিশালে এসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাঁরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশালে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না বলে জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা কয়েকজন কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করেছেন, এমন অভিযোগে কর্মচারীরা একত্র হয়ে আন্দোলনকারীর ধাওয়া দেন। পরে তাঁদের অনশন কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এরপর গত রোববার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে যান এবং সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাঁরা হাসপাতালের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং একজন চিকিৎসক ও দুজন কর্মচারীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সোমবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের সময়সীমা বেঁধে দেন। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে নিয়মিত চিকিৎসকেরাও দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। অন্যথায় তাঁরাও অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর বলেন, হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতার কারণে চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে গিয়েছিলেন। তিনি সবাইকে বুঝিয়েছেন—রোগীকে সেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পুলিশের সহযোগিতায় এখন হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন।
স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনকারীরা প্রথমে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। দাবিগুলো হলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোর পদক্ষেপ নেওয়া। পরে বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের ওপর হামলার পর তিন দফার দাবির সঙ্গে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিও যুক্ত করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর চ ক ৎসক র বর শ ল কর ছ ন র স মন ল র পর লনক র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সিডনিতে তিন তারকার হলো দেখা
দূর প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ দেশের চেনা মুখের দেখা মিলে গেলে সেটি কেবল একটি সাধারণ সাক্ষাৎ থাকে না। বরং হয়ে ওঠে দেশের স্মৃতি টেনে আনা এক মুহূর্ত, হয়ে ওঠে একটুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনির এডমন্ডসন পার্ক মলে।
বাংলাদেশের তিন অঙ্গনের তিন পরিচিত মুখ—ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, গায়ক তাহসান খান ও অভিনেতা মাজনুন মিজান সেখানে হঠাৎ একত্র হলেন। ব্যস্ত নগরের ভিড়ে এই তিন তারকার দেখা হয়ে গেল এক ‘অপ্রত্যাশিত’ আড্ডায়।
তিন ভুবনের তারকারা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস সম্প্রতি পরিবার নিয়ে সিডনিতে স্থায়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন নতুন করে জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। অভিনেতা মাজনুন মিজানও অনেক দিন ধরেই পরিবার নিয়ে সিডনিতে বসবাস করছেন।
ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা দেশে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ হলেও সিডনিতে তিনি অনেকটা পর্দার আড়ালেই থাকেন, তবু প্রবাসী বাঙালিদের কাছে তিনি প্রিয়জন।
অন্যদিকে গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান ছিলেন সফররত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে কনসার্ট করছেন তিনি। ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে সফল শো শেষে সিডনির কনসার্টেও হাজারো দর্শকের মন জয় করেছেন। এরপর সামনে রয়েছে মেলবোর্ন ও পার্থে তাঁর পরিবেশনা। সিডনিতে সফল কনসার্টের রেশ এখনো কাটেনি, এরই মধ্যে ঘটে গেল এই মিলন।