বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই শিক্ষার্থী। 

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ১টায় চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

আরো পড়ুন:

জবিতে শিক্ষার্থীদের টানা পঞ্চম দিনের অবস্থান কর্মসূচি

গকসু নির্বাচন: প্রথম দিনে ১৩ মনোনয়ন ফরম বিতরণ

ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চবির সাবেক সমন্বয়ক ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই যোদ্ধা সালমান রহমান সাকিব।

এ সময় আশিকুর রহমান বলেন, “জুলাই পরবর্তী সময়ে রাফি আমাদের আশাহত করেছে। সে আমাদের ভালো বন্ধু-সহযোদ্ধা হিসেবে ছিল। কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আন্দোলনে অন্যরা নেতৃত্ব দেওয়ার পর শেষে এসে সে প্রশাসনের সঙ্গে এককভাবে সমঝোতায় চলে যায় এবং ক্রেডিট নিয়ে নেয়। এছাড়া তার ব্যক্তিগত আরো কিছু সমস্যা আছে।”

তিনি বলেন, “পরবর্তীতে রাফিসহ কেউ যদি আমাদের আন্দোলনে এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবো।”

সালমান রহমান সাকিব বলেন, “রাফি আমার আন্দোলনের আগের ও পরের বন্ধু। তাই রাফির আন্দোলনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থা মনে হয় না বন্ধুদের মধ্যে আমার চেয়ে বেশি কেউ জানে। সত্যি কথা বলতে, আন্দোলনের সময় সে আমাদের থেকে ধার-দেনা করে চলছে। এক শার্ট দুই-তিনদিন ধরে পরেছে। কিন্তু কী এমন হলো যে, আন্দোলনের পর তার জীবনযাত্রার মান পুরোই পরিবর্তন হয়ে গেল।”

তিনি বলেন, “আমি তার কাছে জানতে চাই, তুমি যে এখন এসি রুমে থাক, সেটা কিভাবে? যদিও এটা ব্যক্তি আক্রমণ হয়ে যাচ্ছে, তবুও বলতে হচ্ছে। কারণ, তোমরা এগুলো করছো বিধায় মানুষ আমাদের গালাগাল করছে, দালাল বলছে, জুলাই হয়ে যাচ্ছে হাসির পাত্র। তুমি যেভাবে চলো, তুমি একদিন তোমার হিসাবটা মিডিয়ার সামনে এসে খোলাসা করো, তোমার আয়ের উৎস কি, তোমার জীবনযাত্রা কিসের উপর নির্ভর করে চলে।”

“আন্দোলনের সময় আমরা টাকা ম্যানেজ করে মাইকের ভাড়া দিয়েছি, তার সবকিছু আমরা অবগত ছিলাম। যতদূর পারি আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কী এমন ক্ষণ আসলো যে, তার জীবন পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল। এখন, তার এসি গাড়ি ছাড়া চলে না, এসি বাসায় থাকে, বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর দেয়। তার এসব বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন,” -যোগ করেন সাকিব।

সাকিব আরো বলেন, “তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ যে বন্দরে তার হাত আছে, বন্দরের সঙ্গে সে তদবির করে। আমরা এটা অনুসন্ধান করছি, যদি পাই উন্মোচন করব। তোমাদের কারণে মানুষ আমাদের দালাল বলছে, তোমরা জুলাইকে সস্তা দামে বিক্রি করে দিচ্ছ, এটা আমরা কখনোই মানবো না।”

সংবাদ সম্মেলনে তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, আবাসন ভাতা নিয়ে তারা কয়েকদিন পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু এরপর হঠাৎ গতকাল সোমবার (২৫ আগস্ট) মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। পরে প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় চলে যায়। এই সমঝোতা আর ক্রেডিট নেওয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন খান তালাত মাহমুদ রাফি ও চবি বাগছাসের সদস্য সচিব মাশনুন।

তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “এখানে ক্রেডিট নেওয়ার কিছু নেই। মূলত গতকাল ২০২৩-২৪ সেশনের জুনিয়ররা আন্দোলন করছিল। তো তারা এক পর্যায়ে আমাকে বলে, তারা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবে। আমি তাদের বলি, তোমরা আন্দোলনও করতে পারো, কিংবা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারো, সেটা তোমাদের ইচ্ছে। পরে তারা আমাকে জোরাজুরি করেই আলোচনায় নিয়ে যায়। সেখানে আমি নিরব ভূমিকায় ছিলাম। এখানে তো ক্রেডিট নেওয়ার কিছু নেই।”

ব্যক্তিগত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার কোনো এসি গাড়ি নেই, বাড়িও নেই। আমি স্ত্রী নিয়ে একটা ভাড়া বাসায় থাকি। টাকার উৎস বলতে, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি উভয়ই সরকারি চাকরিজীবী। তারা আমাকে সাপোর্ট করেন। ফ্যামিলি থেকেও সাপোর্ট পাই। আমার ব্যক্তিগত জীবন কীভাবে লিড করব, সেটা তো আমার ইচ্ছা। কোনো অসঙ্গতি দেখলে কেউ তদন্ত করুক, আমাকে জানাক।”

বন্দরের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আগেও কথা উঠেছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেই তো সত্যটা জানা যাবে। আসলে এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাও যদি মনে হয়, তাহলে আপনারা তদন্ত করুন। যারা অভিযোগ দিয়েছে, তারা আমার কাছেরই বন্ধু। আমার বিষয়ে তারা আরো ভালো জানবে।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ আম দ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ