‘গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার দিকে হাঁটছে দেশ’
Published: 29th, August 2025 GMT
চব্বিশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশে নতুন করে গণতান্ত্রিক চর্চার পথ খুলে দিয়েছে। দেশ এই মুহূর্তে একটি গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার দিকে হাঁটছে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ‘বেঙ্গল ডেল্টা কনফারেন্স ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিজিবির উদ্বেগ, বিএসএফের আশ্বাস
প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে কম্বাইন্ড ডিগ্রিকে অপরিহার্য বললেন বাকৃবি শিক্ষকরা
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
মালয়েশিয়ার সাবেক শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মাজলি বিন মালিক বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফিরে এসেছে। সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ করছে, এটি খুবই ভালো পদক্ষেপ।”
তিনি আরো বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এসব সংস্কারের সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের যেকোনো দেশের অগ্রগতির জন্যই একটি লিটমাস টেস্ট হিসেবে বিবেচিত হবে।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারদারাজান বলেন, “বাংলাদেশ তার ভবিষ্যতের অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবছে।”
বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস তৈরির পথে হাঁটছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,“ভারত ও বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশ যা করতে পেরেছে, তা নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের দিকে ইঙ্গিত করে।”
সম্প্রতি বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা মার্কিন শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা হয়।
দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত ইতিহাসের পরতে পরতে আমরা বারবার স্বপ্ন দেখেছি।কিন্তু আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। এ কারণে বারবার আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। আমরা আবারও রুখে দাঁড়িয়েছি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং নতুন করে স্বপ্ন দেখেছি।”
মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের অভ্যুত্থান নিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিবার নতুন স্বপ্ন দেখার পরই আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরে, আর আমরা ব্যর্থ হই। চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।”
নেপালের সাবেক মন্ত্রী ড. দীপক গাওয়ালি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের তরুণরা যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, তাদেরকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। দুই দিনব্যাপী বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্সের আয়োজন করেছে ঢাকা ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স (দায়রা)।
সূত্র: বাসস
ঢাকা/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন গণত ন ত র ক
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে: রাষ্ট্র সংস্কার
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাই সংকট এড়াতে কমিশনকে দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কারের নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা সংস্কার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। ঐকমত্য কমিশন যে ঐক্যকে সামনে রেখে প্রায় এক বছর ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, বাস্তবায়নের সুপারিশ সেই ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে।
চ্যালেঞ্জের মূল কারণ হিসেবে বলা হয়, ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেটুকু আলোচনা করেছিল, সেখানে এ প্রস্তাবে উল্লেখিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উপস্থাপন করা হয়নি। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর যদি এ প্রস্তাব জাতির সামনে হাজির করা হতো, তাহলে চ্যালেঞ্জ পরিহার করা যেত।
এতে আরও বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদকে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় গঠনগত ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। কিন্তু যেসব প্রস্তাবে কিছু দল আপত্তি জানিয়েছিল, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় সংস্কার প্রস্তাবে লিপিবদ্ধ আপত্তির বিষয়গুলোকে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে মুছে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মনে করে, দ্রুত ওই সুপারিশ থেকে বের হয়ে না এলে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের ভেতরের যৌক্তিক ক্ষোভ পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষের ভেতর ছড়িয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের মানুষ যখন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের প্রতি অন্যায় আচরণ অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। দেশের মানুষকে স্বৈরাচারী সরকারের চেয়ে উন্নত জীবন উপহার দেওয়ার সুযোগ হারিয়ে যাবে।
সংকট এড়াতে ঐকমত্য কমিশনকে দ্রুত তাদের সুপারিশগুলো নিয়ে পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারা বলেছে, সংবিধান টেকসই ও সর্বজনীন করতে তাড়াহুড়ো থেকে বিরত থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোই সংবিধান সংস্কারের একমাত্র পথ। ঐকমত্য কমিশন সঠিক বিবেচনাবোধকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে সংকট থেকে মুক্ত রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।