Risingbd:
2025-11-01@23:15:24 GMT

যমুনার করালগ্রাসে বাঘুটিয়া চর

Published: 10th, September 2025 GMT

যমুনার করালগ্রাসে বাঘুটিয়া চর

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের দুর্গম চর বাঘুটিয়ায় পা রাখলেই চোখে পড়ে ভাঙনের দগদগে ক্ষতচিহ্ন। কোথাও ফাঁকা ভিটে, কোথাও নদীগর্ভে হঠাৎ ধসে পড়া বাড়ির ভাঙাচোরা অবশিষ্ট। এক সময় প্রাণচঞ্চল এই চরের মানুষ এখন থাকেন আতঙ্কে। নদীতে কখন তাদের আবাসস্থল বিলীন হবে সেই চিন্তা তাদের।

গত দুই মাসেই ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। দশ বছর আগেও যেখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস ছিল, এখন সেখানে ১৪ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের অনেকেরই ক্ষেত-খামার নেই, আবার কারও নেই মাথা গোঁজার স্থান।

আরো পড়ুন:

দুই মাসে পদ্মার পেটে ২০০ হেক্টর জমি

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে নাব্য সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত 

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‍“বাঘুটিয়া চরের মানুষ প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ হারিয়েছেন জমি, কেউ ঘরবাড়ি, আবার কেউ হারিয়েছেন সন্তানদের পড়ালেখার জায়গা। অভিযোগ-প্রতিবাদ আর সাময়িক প্রতিরোধের মধ্যেই প্রতিদিন যমুনার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে এসব মানুষের স্বপ্ন, আশা আর ভবিষ্যৎ।”

কৃষক শহীন মিয়ার চোখে ছিল অশ্রু। তিনি বলেন, “ড্রেজার বসিয়ে নদীর বুক কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। যমুনায় আমাদের ঘরবাড়ি মিশে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”

একই কষ্টের কথা শোনালেন কৃষক শহিদুল ইসলাম। এই কৃষকের ভাষ্য, “আগে ভাঙন ছিল, কিন্তু এত ভয়াবহ ছিল না। আমার ৪০ বিঘা জমি নদীতে গেছে। দুইটা ঘর করেছিলাম, সেগুলোও নদী খেয়ে ফেলেছে। এখন আর জানি না কোথায় যাব, কিভাবে বাঁচব।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, যমুনায় অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন ভাঙনকে তীব্র করে তুলছে। রাহাতপুর এলাকায় ইজারা দেওয়া বালুমহল ছাড়াও পারুরিয়া এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ইয়াছিন বলেন, “কয়েক দফা স্থানীয়রা বাল্কহেড আটক করলেও কার্যকর ব্যবস্থা হয়নি। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেই ভাঙন অনেকটা কমে যাবে।”

দৌলতপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিয়ান নুরেন বলেন, “নিজভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন বিলীন হয়ে গেছে যমুনায়। পারুরিয়া ও রংদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিদ্যালয় দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে।”

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। চরাঞ্চলে বালু বেশি থাকায় সামান্য পানির চাপেই ভাঙন দেখা দেয়, ফলে প্রতিবছরই নতুন করে ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে।”

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ