‘বুলিংয়ের শিকার’ হয়ে মাস্টার্স না করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন তরুণী, কী ঘটেছিল
Published: 16th, September 2025 GMT
‘ঘটনাগুলো আমাকে এত তাড়া করত, আমি কাঁদতাম। আমার ক্লাসে যেতে ইচ্ছা করত না। যৌন হয়রানি নিয়ে অনেকে কথা বলেন। কিন্তু বুলিং-গসিপের মতো মানসিক হয়রানির ভয়াবহতা ততটা গুরুত্ব পায় না।’
কথাগুলো বলেছিলেন এক তরুণী (২৬)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার সময় তিনি কিছু সহপাঠীর মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
তরুণী বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা এতটাই ভীতিকর ছিল যে অনার্সের পর তিনি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেননি। এর পরিবর্তে চাকরিতে যোগ দেন। প্রায় এক বছর চাকরি করেন। মাস্টার্স করার জন্য গত মাসে তিনি বিদেশে চলে যান।
আরও পড়ুনক্যাম্পাসে এখনও নারীদের বুলিং, ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে: জাকসু ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫দেশে থাকাকালে ভুক্তভোগী তরুণী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি ‘বুলিংয়ের শিকার’ হওয়ার বিবরণ দিয়েছিলেন। বিদেশে যাওয়ার পর সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর সঙ্গে আবার কথা হয়।
ওই তরুণী বলেন, নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, এ নিয়ে লোকজনকে যতটা প্রতিবাদী হতে দেখা যায়, বুলিং-গসিপের মতো মানসিক হয়রানি-পীড়নের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।
তরুণী বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা এতটাই ভীতিকর ছিল যে অনার্সের পর তিনি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেননি। এর পরিবর্তে চাকরিতে যোগ দেন। প্রায় এক বছর চাকরি করেন। মাস্টার্স করার জন্য গত মাসে তিনি বিদেশে চলে যান।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীদের বুলিং-গসিপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান ওই তরুণী। তিনি বলেন, মনোবিদের কাছে গিয়ে ছয় থেকে সাতটি কাউন্সেলিং সেশন নিতে হয়েছে তাঁর। তবে তাঁর এই মানসিক হয়রানির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব পায়নি।
তরুণী বলেন, ‘এটা (বুলিং) সেখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। অথচ বুলিদের (হেনস্তাকারী) কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে পারলাম না।’
আরও পড়ুনশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ০২ ডিসেম্বর ২০২৪আমি কতটা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম, বোঝাতে পারব না। মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে দুটি ক্লাস করে আর যাইনি। মা–বাবা অবাক হয়েছিলেন। তাঁদের বলেছি, আমি ‘বুলিড’ হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওদের সঙ্গে আর পড়ব না।ভুক্তভোগী তরুণী‘ওদের সঙ্গে আর পড়ব না’ভুক্তভোগী তরুণী রাজধানীর একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করেন। তাঁর মা–বাবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
তরুণী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি সবার সঙ্গে মেশার চেষ্টা করতেন। তবে কারও সঙ্গেই খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়নি। এর মধ্যে একটি গ্রুপ হয়ে ওঠে ‘এলিট’ (প্রভাবশালী)। এই গ্রুপে মূলত ছেলেরাই ছিলেন। তাঁরা পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। পারিবারিকভাবে সচ্ছল। তাঁরা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তান। তাঁদের সঙ্গে তাঁর মেশা কম হতো।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট কয়েকটি গ্রুপ তৈরি হয় বলে জানান তরুণী। তিনি বলেন, তখন কারও কোনো কাজ ছিল না। ফেসবুকে কাউকে না কাউকে নিশানা করে বুলিং করা হতো। কোভিডের পর সরাসরি ক্লাস শুরু হয়। তখনো এসব বুলিং থামেনি। কারও মধ্যে ‘বসিং’ (হুকুমবাজি) প্রবণতা বেশি ছিল। কাকে পশ্চিমা পোশাকে মানায় না, কার পোশাক পরার ধরন ভালো না, কে কোন সহপাঠীদের সঙ্গে প্রেম শুরু করেছে—এসব নিয়ে ক্লাসে গসিপ (পরচর্চা) চলত। সেই সঙ্গে চলত ব্যাকবাইটিং (কারও অনুপস্থিতিতে নিন্দা করা)।
আরও পড়ুনসাইবার বুলিং কাদের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলে১০ অক্টোবর ২০২৪ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীদের বুলিং-গসিপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান তরুণী। তিনি বলেন, মনোবিদের কাছে গিয়ে ছয় থেকে সাতটি কাউন্সেলিং সেশন নিতে হয়েছে তাঁর। তবে তাঁর এই মানসিক হয়রানির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব পায়নি।তরুণীর ভাষ্য, তিনি খেয়াল করলেন, যা তিনি বলেননি, তা নিয়ে তাঁকে দোষারোপ করা হচ্ছে। বুলিং করা হচ্ছে। যে গ্রুপটা এলিট ছিল, সেই গ্রুপের ছেলেরা ছিল বুলি টাইপের। তিনজন ছেলে বেশি বুলি ছিলেন। তাঁরা গসিপও করতেন বেশি। তাঁরা নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করতেন খুব। বডি শেমিং, স্লাট শেমিং করতেন। একজন ছেলে কথা বলার সময় বাজে দৃষ্টিতে তাকাতেন। একবার একজন শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ‘বেখেয়ালের’ অজুহাত দিতে ‘সরি’ বলেছিলেন।
বছর দুয়েক পর এই ‘এলিট’ গ্রুপের তুলনামূলক ‘নিরীহ’ একটি ছেলের সঙ্গে ভালো লাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে জানান তরুণী। সম্পর্কটিকে তিনি বর্ণনা করেন ‘সিচুয়েশনশিপ’ হিসেবে। তিনি বলেন, সম্পর্কটিকে দীর্ঘ বা স্থায়ী করার ক্ষেত্রে তাঁরা কেউ কারও প্রতি প্রতিশ্রুতবদ্ধ ছিলেন না। শুরুতে তাঁরা বলেছিলেন, সম্পর্ক ভেঙে গেলে তাঁরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। সম্পর্কের এক বছরের মধ্যে ছেলেটি সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তখন তিনি (তরুণী) সম্পর্কটি ভেঙে দেন।
তরুণীর ভাষ্য, এরপর দেখলেন, তিনি ক্লাসে গেলে অনেকে ফিসফিস করেন। তিনি বুঝতে পারতেন, তাঁকে নিয়েই কিছু বলা হচ্ছে। যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেছে, সেই ছেলে, তাঁর বন্ধুসহ কিছু সহপাঠী মিলে তাঁকে নানান ধরনের মন্তব্য করে কোণঠাসা করে ফেলেন। সে সময় তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতেন। ক্লাসে যেতে ইচ্ছা করত না। পড়াশোনা করতে পারতেন না। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করেন।
তরুণী বলেন, ‘আমি কতটা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম, বোঝাতে পারব না। মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে দুটি ক্লাস করে আর যাইনি। মা–বাবা অবাক হয়েছিলেন। তাঁদের বলেছি, আমি “বুলিড” হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওদের সঙ্গে আর পড়ব না।’
আরও পড়ুন‘বুলিং ও র্যাগিং’ রোধে নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ২১ আগস্ট ২০২৪মেয়েটি যে ধরনের অভিযোগ করেছিল, তা প্রমাণ করা কঠিন। ফলে মেয়েটিকে আমি মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার জন্য বুঝিয়েছিলাম। মেয়েটি অন্তর্মুখী। সে তার কষ্টের কথা সেভাবে শেয়ার করতে পারত না।বিভাগের শিক্ষকশিক্ষক যা বললেনতরুণীর অভিযোগ নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগটির শিক্ষক ও তৎকালীন স্টুডেন্ট কাউন্সেলরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের ডেকে তিনি কথা বলেছিলেন। অন্য সহপাঠীদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। তাঁদের কথা ছিল, ‘ব্রেকআপ’ হওয়ার কারণে মেয়েটি বিষণ্ন ছিল।
ওই শিক্ষক বলেন, ‘মেয়েটি যে ধরনের অভিযোগ করেছিল, তা প্রমাণ করা কঠিন। ফলে মেয়েটিকে আমি মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার জন্য বুঝিয়েছিলাম। মেয়েটি অন্তর্মুখী। সে তার কষ্টের কথা সেভাবে শেয়ার করতে পারত না।’
বুলিংয়ের মতো হেনস্তার বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সুযোগ নেই—এমন প্রশ্নে ওই শিক্ষক বলেন, ব্যবস্থা আছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে। শুরুতে তিনি মেয়েটিকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছিলেন। পরে মেয়েটি বিভাগের প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষা হয়ে গেছে।
তরুণী বলেন, অনার্স ও ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি প্রথম মৌখিক অভিযোগ করেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষার পর লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং দুজনের বিরুদ্ধে মানসিক ও মৌখিক হয়রানির অভিযোগ দেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, একটা কমিটি হয়েছে। মাস্টার্সের ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে এখনো ব্যবস্থা নিতে পারে।
মৌখিক অভিযোগ যখন করেছিলেন, তখন সেটাকে আমলে নেওয়া হয়নি বলে দাবি তরুণীর। তিনি বলেন, ফলে হেনস্তাকারীরা নিজেদের আরও ক্ষমতায়িত বোধ করেছেন। তাঁদের কোনো অনুতাপ হয়নি। তাঁরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ‘ব্রেকআপ’ বিষয়টিকে সামনে আনেন। এখানে ‘ব্রেকআপ’ কোনো বিষয় ছিল না।
আরও পড়ুনসাইবার বুলিং থেকে কি নারীদের মুক্তি নেই২০ ডিসেম্বর ২০২২২০২১ সালে পোল্যান্ডের ম্যানেজমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘কনসিকোয়েন্সেস অব বুলিং অন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে আসে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বুলিং হয়।সহপাঠীদের আচরণে হীনম্মন্যতায় ভোগে ৫ শতাংশবেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের অক্টোবরে ‘করোনা-পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সহপাঠীদের দ্বারা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কারণে হীনম্মন্যতায় ভোগেন প্রায় ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
জরিপে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার মোট ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৫৬ শতাংশ।
একই সংগঠন ২০২২ সালের মার্চে ‘তরুণীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শিরোনামে আরেকটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, তরুণীরা তাঁদের দেহের আকৃতি, গঠন ও অবয়ব নিয়ে কথাবার্তায় হেয়প্রতিপন্ন বোধ করেন। বন্ধুবান্ধবের কাছে ‘বডি শেমিং’-এর শিকার হয়েছেন ২২ শতাংশ তরুণী। এই জরিপে এক হাজারের বেশি তরুণী অংশ নিয়েছিলেন।
২০২১ সালে পোল্যান্ডের ম্যানেজমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘কনসিকোয়েন্সেস অব বুলিং অন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর বুলিংয়ের পরিণতি) শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে আসে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বুলিং হয়। বুলিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের তাঁদের অধিকার সম্পর্কে জানা, অভিযোগ করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়া, অন্যদের সচেতন করা, পরিবারকে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভুক্তভোগীকে সহায়তা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গবেষণা প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনসাইবার বুলিংয়ের শিকার নারীরাই বেশি২৯ মার্চ ২০২২বুলিংয়ের মতো ঘটনায় ভুক্তভোগীর মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, ক্লাসে যেতে ভয় পাওয়া, মানসিকভাবে দুর্বল বোধ করা, হীনম্মন্যতা, এমনকি অপরাধবোধে ভোগার মতো প্রবণতা দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে নিজের ক্ষতি করা বা আত্মহত্যায় ঝুঁকতে দেখা যায়। ফলে কেউ বুলিংয়ের অভিযোগ করলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।কামাল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক‘বুলিংয়ের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক কামাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সেল রয়েছে। যৌন পীড়নের ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সেভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। বুলিংয়ের মতো ঘটনায় ভুক্তভোগীর মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, ক্লাসে যেতে ভয় পাওয়া, মানসিকভাবে দুর্বল বোধ করা, হীনম্মন্যতা, এমনকি অপরাধবোধে ভোগার মতো প্রবণতা দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে নিজের ক্ষতি করা বা আত্মহত্যায় ঝুঁকতে দেখা যায়। এ কারণে কেউ বুলিংয়ের অভিযোগ করলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীকে কাউন্সেলিংয়ের মতো মানসিক সহায়তা দেওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলে ও ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) তিনতলায় বিনা মূল্যে মানসিক সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানান অধ্যাপক কামাল চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রচার কম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী এসব সেবা সম্পর্কে জানেন না। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে অবস্থিত নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটে ফি দিয়ে সেবা নেওয়া যায়।
আরও পড়ুনসাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কী করবেন, কোথায় যাবেন১৮ জুন ২০২২.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ট র স কর সহপ ঠ দ র ক হয়র ন র বল ছ ল ন ক উন স ল ব যবস থ প রবণত প রক শ র জন য হয় ছ ল ব ধ কর য় র মত ন তর ণ কর ছ ল তর ণ র দ র বল স কর ন অন র স অপর ধ করত ন র ওপর হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত