রাজনীতিকেরা দুঃখ প্রকাশ করলেই কি মৃত ছেলেকে জীবিত ফেরত পাবেন, প্রশ্ন সন্তানহারা বাবার
Published: 16th, September 2025 GMT
‘সবাই বলছে, রাবার বুলেট, রাবার বুলেট। এটা রাবার বুলেট ছিল না। আপনি যদি আমার ছেলেকে দেখতেন, ওর মাথায় গুলি লেগেছিল, সেখানে একটি গর্ত ছিল।’
এক দমে কথাগুলো বলে যান নরেন্দ্র শ্রেষ্ঠ। তাঁর ছেলে সুলভ রাজ শ্রেষ্ঠ গত সপ্তাহে নেপালে তরুণদের বিক্ষোভ চলাকালে নিহত হয়েছেন। ছেলে হত্যার দায় কে নেবে—প্রশ্ন এই হতভাগ্য বাবার।
নরেন্দ্রর বয়স ৪৫ বছর। তিনি রাজধানীর ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের মর্গের ফটকের বাইরে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগেই তিনি মর্গের ভেতরে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করে এসেছেন। সুলভের বয়স ২১ বছর।
কান্নাচাপা গলায় নরেন্দ্র বলেন, ‘আমি এই দেশের কাছে জানতে চাই, যদি তারা বন্দুক চালাতে পারে, আমার ছেলেকে গুলি করতে পারে, তাহলে আমি আর ওর মা–ও একই কাতারে দাঁড়াব। এখন আমরা কার জন্য বেঁচে থাকব? আমরাও মরে যেতে চাই।’
নরেন্দ্রর পাশে তাঁর এক নারী স্বজন বসে ছিলেন। রোদ থেকে বাঁচাতে অন্য এক ব্যক্তি মাথায় ছাতা ধরে ছিলেন।
নরেন্দ্রর বয়স ৪৫ বছর। তিনি রাজধানীর ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের মর্গের ফটকের বাইরে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগেই তিনি মর্গের ভেতরে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করে এসেছেন। সুলভের বয়স ২১ বছর।অকালে স্বপ্নের মৃত্যুমর্গের বাইরে আরও কয়েকটি পরিবার অপেক্ষা করছিল। তারাও প্রিয়জনদের মরদেহ শনাক্ত করতে এসেছে।
মর্গে প্রাণহীন পড়ে থাকা এসব তরুণের কেউ বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, কেউবা অন্যকিছু। অন্য একজন লেখাপড়ার পাশাপাশি কাঠমান্ডুর একটি হোটেলে কাজ করতেন, তৃতীয় আরেকজন ফরাসি ভাষা শিখতেন।
গত সপ্তাহে নেপালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হন। নিহত এই তরুণেরা সেই দলের। দুই দিনের ওই বিক্ষোভে এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
নরেন্দ্র শ্রেষ্ঠ বলেন, তাঁর ছেলের মাথায় গুলি লেগেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন কার জন্য বাঁচব?’
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞাই ছিল বিক্ষোভ শুরুর মূল কারণ। তবে তার আগের কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল। ৮ সেপ্টেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সকাল থেকেই তরুণেরা রাজপথে নেমে তীব্র বিক্ষোভ শুরু করেন।
নিরাপত্তা বাহিনীকে মাঠে নামিয়ে সরকার প্রথমে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। তাতে ব্যর্থ হয়ে গত সোমবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে বিক্ষোভ বড় আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
তরুণেরা শাসকশ্রেণির প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষুব্ধ জনতা রাজনীতিকদের বাড়ি ও সরকারি ভবনে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। দুই দিনের সেই বিক্ষোভে কে পি শর্মা অলি সরকারের পতন হয়।
১৭ বছর ধরে আমাদের হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। ভূমিকম্পের সময়ও আমরা রোগীদের সামাল দিয়েছি। এ পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ ছিল।রঞ্জনা নেপাল, কাঠমান্ডুর সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তাতদন্তের আশ্বাসবিক্ষোভে যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে কিছু মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপ সারিয়ে নেওয়া শুরুর পর নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগের জবাবে নেপাল পুলিশ বলেছে, দুই দিনের সহিংস বিক্ষোভ চলাকালে কী ঘটেছিল, তারা তা তদন্ত করে দেখবে। নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ কে দিয়েছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দাঙ্গা পুলিশের মুখোমুখি বিক্ষোভকারীরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫