বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (শাকসু) রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় আগামীকাল বুধবার থেকে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেন। প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও দাবিদাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেন। তাই শাকসু ব্যতীত বৈধ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন অসম্ভব। এ ছাড়া শাকসু সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়াবে।’

কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.

মুস্তাকিম বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বর্তমান প্রশাসন একাধিকবার মৌখিক আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত শাকসুর ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছে, অতীতের মতো হল দখল, অস্ত্রবাজি ও সহিংসতা আবার ফিরে আসতে পারে। তাই অনতিবিলম্বে শাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’

ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন (শিশির) বলেন, ‘শাকসুর নির্বাচনের কমিশন গঠন ও রোডম্যাপের দাবিতে আগামীকাল বুধবার বেলা দুইটা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরা শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। আশা করি, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য সম্পাদক শাকিল মাহমুদ, ছাত্র মজলিশের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আজাদ শিকদার, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, সমাজবিজ্ঞানের ফয়সাল হোসেন, পদার্থবিজ্ঞানের মুমিনুর রশীদ প্রমুখ।

এর আগে গত রোববার মানববন্ধন করেন একদল শিক্ষার্থী। কর্মসূচি থেকে রোডম্যাপ প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

একই দিন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, শাকসু নির্বাচনের জন্য এখন ক্যাম্পাসে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখন নির্বাচন হলে প্রতিযোগিতা নয়, বরং অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তাঁরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগসহ শাকসুর নির্বাচনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বা দাবির বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। শিক্ষার্থীদের শঙ্কার বিষয়ে বলব, নির্বাচনের কাজ অনেক এগিয়ে গেছে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

টোপাপানায় ম্লান মহামায়া হ্রদের আকর্ষণ

মূল ফটক পেরোলেই সমান্তরাল পিচঢালা রাস্তা। পূর্ব দিকে সেটি উঠে গেছে মহামায়া হ্রদের বাঁধ পর্যন্ত। খাড়া পথ বেয়ে ওঠা ক্লান্ত পর্যটকদের মনে একসময় প্রশান্তি এনে দিত পাহাড়ঘেরা বিস্তীর্ণ মহামায়া হ্রদের টলটলে জলরাশি। মায়াবী সে দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।

মহামায়া হ্রদের বড় অংশজুড়ে এখন চোখে পড়ে টোপাপানার চাদর আর চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা। বাঁধের কিনারজুড়ে ঘাস ও লতাগুল্মের ঝোপ। হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকার দৌরাত্ম্য। টিকিটেও আদায় হচ্ছে বাড়তি টাকা। সব মিলিয়ে মহামায়া ইকোপার্ক এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা হতাশ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকেরা।

মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্কের অবস্থান মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে। সেচ সম্প্রসারণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহামায়া ছড়ার ওপর বাঁধ দিলে পাহাড়ের কোলজুড়ে ১১ বর্গকিলোমিটারের মহামায়া হ্রদ তৈরি হয়। পরে বন বিভাগ এখানকার ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করে মহামায়া ইকোপার্ক। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। গত ২২ জুলাই থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ২ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকায় ১ বছরের জন্য মহামায়া ইকোপার্কের ইজারা পেয়েছে ওয়াসিফা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্ক ঘুরে দেখা যায়, শ খানেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। একদল তরুণ হ্রদের বাঁধে বসে গান করছেন। আশপাশের বেঞ্চে বসে গল্পে মেতেছেন কেউ কেউ। হ্রদের পাড়ে বাঁধা সারি সারি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর কায়াক। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে হ্রদ ঘুরে দেখতে বেরিয়েছে দুটি দল। দুটি দলের কোনো সদস্যকেই দেখা গেল না লাইফজ্যাকেট পরতে। কিছুদূর যেতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট শব্দে উড়ে যেতে দেখা গেল একদল পানকৌড়িকে। হ্রদের বড় একটি অংশজুড়ে টোপাপানার ভারী আস্তরণ।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।

ইজারাদারের নিয়োগ করা কয়েকজন শ্রমিক নৌকা নিয়ে এক পাশে পরিষ্কার করছিলেন সেসব টোপাপানা। বাঁধের পূর্ব পাশজুড়েই ঘাস ও লতাগুল্মের জঙ্গল। ঘাস মারার ওষুধ ছিটিয়ে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলো। এসব দৃশ্য হ্রদ দেখে প্রশান্তি পাওয়ার বদলে বিষণ্ন করে তুলবে যেকোনো পর্যটকের মন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।

নৌকা–বিড়ম্বনা

ইকোপার্ক হওয়ার শর্তে সংরক্ষিত এলাকার প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতি না করে বিনোদন ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষার কথা বলা হলেও মহামায়া ইকোপার্কের চিত্র যেন পুরোই ভিন্ন। বন বিভাগের ইজারার শর্তে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালানো নিষিদ্ধ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেনে চলছে না সে নিয়ম। বরং কোনো প্রকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া চলা এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি ভাড়া।

হ্রদের কিনার জুড়ে ঘাস আর লতাগুল্মের ঝোপ। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেরপু‌রে নাচগানের আসর ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা
  • শাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শিক্ষার্থীরা
  • টোপাপানায় ম্লান মহামায়া হ্রদের আকর্ষণ