ধর্ষণে অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থীর বিচার দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন
Published: 22nd, October 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শ্রীশান্ত রায় নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের কটূক্তি এবং দেশজুড়ে চলমান নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জাবি শাখা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল।
আরো পড়ুন:
খাবার ও পানি সমস্যায় খুবির ছাত্রী হলে ভোগান্তি চরমে
জোবায়েদ হত্যার বিচার দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এ সময় জাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ও শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান লাবীব বলেন, “আমরা এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে একজন ছাত্রীকে রেস্টুরেন্টে ধর্ষণ করা হয়। আর তার চিৎকার চাপা দিতে সাউন্ডবক্স চালানো হয়। আমরা দেখেছি আছিয়া নামের একটি শিশুকেও নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু এসব নৃশংস ঘটনার আসামিরা সহজেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়, যা বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।"
শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, “বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। ফলে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ ধরনের অপরাধ বহুগুণে বেড়েছে, যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সরাসরি প্রতিফলন।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান ইন্টারিম সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনাদের গদিতে বসানোর জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি; সেই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল এই দেশের বিচারব্যবস্থা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য। যদি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হয়, তবে জনগণ আবারো রাস্তায় নামবে।”
জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “যেসব সংগঠন মানবাধিকার ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান- আপনারা আপনাদের হিপোক্রেসি বন্ধ করুন। আপনারা সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করা বন্ধ করুন। নির্যাতিতের পরিচয়, পোশাক বা ধর্ম নির্বিশেষে সব ঘটনার বিরুদ্ধে এক কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন। ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান হতে হবে সর্বজনীন ও নীতিনিষ্ঠ।”
জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ধর্ষণ, খুন ও নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাদের সমাজে ন্যায়বিচারের গভীর সংকটের দিকেই ইঙ্গিত করে। অপরাধীরা যখন বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিচারহীনতাই বুয়েটের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়দের মতো স্বঘোষিত ধর্ষক তৈরি করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা ইন্টেরিম সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা প্রচলিত আইনকে যথেষ্ট শক্তিশালী করুন, দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করুন। কোনো গোষ্ঠীর প্রভাবে যেন ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত না হয়।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আইনজীবীর বিরুদ্ধে বৃদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৬৫ বছরের বৃদ্ধা পারুল বেগম। স্বামী হাফিজুর রহমান মুন্সী মারা যান প্রায় সাড়ে ৪ বছর আগে। স্বামী মারা যাবার আগে মেয়ের বিয়ে হলেও এখন তার সংসারে রয়েছে দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও ৪ নাতী-নাতনী।
কিন্তু স্বামী মারা যাওয়াই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃদ্ধা পারুল বেগমের। সদর উপজেলার গোবরা মৌজার ৫০ শতাংশ জমির দখল নিতে ২০০৩ সালে তারই সৎ ভাবি জেসমিন আরা তাকে আসামি করে গোপালগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপরই শুরু হয় আদালতে দৌঁড়ঝাঁপ। সংসার সামলাবেন নাকি মামলা চালাবেন- এমন দ্বিমুখী সংকটে পড়েন তিনি।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় চবিতে মানববন্ধন
গাজীপুরে শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আদালত তারপক্ষে রায় দিলেও তার আইনজীবী প্রতারণার মাধ্যমে সেই জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই জমি এখন হারাতে বসেছেন।
এ জমি ফেরতসহ প্রতারক অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলমের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা জমি ফেরতসহ প্রতারক অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলমের বিচারের দাবি করে। মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগমসহ তার পরিবারের ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগম বলেন, “সদর উপজেলার ১১৬ নম্বর গোবরা মৌজার ২৮৮৯ খতিয়ানের ৩০৮৯ খতিয়ানের ৮৩৭ নম্বর দলিলের ৫০ শতাংশ জমির মালিক আমি। পরে এ জমির মালিকানা নিয়ে সৎ ভাবি জেসমিন আরা আমার নামে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা চালাতে আমি আমার আপন ছোট ভাইয়ের শ্যালক অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলমের কাছে যাই। মামলায় আদালত আমার নামে রায় দেন।”
তিনি বলেন, “কিন্তু মামলা চলাকালে অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম প্রতারণা করে মামলার বাদী জেসমিন আরার নামে ২২ শতাংশ, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নিজের নামে ৩২ শতাংশ এবং তার স্ত্রী তানিয়া আক্তারের নামে ২৬ শতাংশ জমি লিখে নেন। এছাড়া আমার ছেলের কাছে ভুয়া দলিল দিয়ে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।”
তিনি আরো বলেন, “এ নিয়ে তার কাছে জানতে গেলে উকিলবারের ভিতর আমাকে ও আমার ছেলেকে মারধর করে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার তো পাইনি, উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও জীবননাশের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় আমি আমার জমি ফেরতসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।”
ভুক্তভোগীর ছেলে মো. মানিক মুন্সী বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আমার গর্ভবতী স্ত্রীকেও মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আমাকে জীবন নাশের হুমকি দিলে ভয়ে আমি স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরালয়ে অবস্থান নেই। এ সময় আমার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করে।”
তিনি বলেন, “ওই আইনজীবী আমার কাছে ভুয়া দলিল দিয়ে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি আমি সাড়ে ১৫ লাখ টাকার একটি চেকের মামলা দিলেও ওই আইনজীবী আমাকে না জানিয়ে আসামিদের সঙ্গে রফাদফা করেন। আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।”
ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগমের জামাতা বলেন, “আমার শ্বাশুড়ী আদালত থেকে রায় পেলেও অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম প্রতারণা করে জমি লিখে নিয়েছে। আমরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও কোনো বিচার পাচ্ছি না। জেলা প্রশাসক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানাই, আমরা যেন সুষ্ঠু বিচার পাই।”
এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম বলেন, “এ জমি নিয়ে তারই সৎ ভাবি জেসমিন আরা মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি আমাকে প্রথমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়। পরে আমার কাছে জমি বিক্রি করেন। তার জমি আমি প্রতারণা করে নিয়েছি- এটা পুরোপুরি মিথ্যা।”
তিনি বলেন, “তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছিলো। কিন্তু কাগজপত্রে আমি এসব জমি পাই। পারুল বেগম আমার কাছে জমি বিক্রি করে বিভিন্ন সময় দামবাবদ টাকা নিয়েছেন।”
ঢাকা/বাদল/মেহেদী