টাঙ্গাইলের আটটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবি তুলেছেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। মনোনয়ন পরিবর্তন না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন একাধিক নেতা। এর মধ্যেই অনুসারীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থীরা।

দুটি আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং তাঁর বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী–সমর্থকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তাঁরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং দলীয় অসন্তোষ না মেটানো গেলে আসন দুটিতে বিএনপিকে চাপে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

তবে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের মতে, কয়েকটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছু কর্মসূচি পালন করলেও এটা ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী আটটি আসনেই আগে থেকে প্রার্থী ঠিক করে মাঠে প্রচার চালাচ্ছে। জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মো.

হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, প্রচারে মাঠপর্যায়ে মানুষের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে জেলার আটটি আসনেই একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদ তিনটি আসনে এবং গণসংহতি আন্দোলন দুটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ ছাড়া সব কটি আসনে প্রার্থী নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরাও প্রচারে সক্রিয়।

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী)

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম (স্বপন)। নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মোহাম্মদ আলীও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুল ইসলামকে (আজাদ) অবশ্য শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরেই বহিষ্কার করে বিএনপি। আসাদুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন দলের জেলা শাখার কর্মপরিষদ সদস্য মোন্তাজ আলী। এনসিপি থেকে পদত্যাগ করা অলিক মৃ এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে আলোচনা রয়েছে।

টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর)

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু এ আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রায় ১৭ বছর পর কারামুক্ত হয়ে এই সাবেক উপমন্ত্রী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এখানে আর কেউ দলীয় মনোনয়ন চাননি।

আবদুস সালাম ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু)। তিনি আবদুস সালামের ছোট ভাই।

জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির জেলা শাখার সেক্রেটারি মো. হুমায়ুন কবির। মাঠে সক্রিয় রয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল)

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম ওবায়দুল হক (নাসির) এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি সহজভাবে নেননি সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান (আজাদ) ও তাঁর অনুসারীরা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মাইনুল ইসলামও মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন না পাওয়া দুই নেতার কর্মী–সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে এক হয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন।

মাইনুল হোসেন বলেন, ‘ওবায়দুল হক ঘাটাইলের সন্তান নন। তাই এটা ঘাটাইলের বিএনপির নেতা–কর্মীরা মেনে নিতে পারেনি। মনোনয়ন পরিবর্তন করা না হলে আমি অথবা লুৎফর রহমান খান যেকোনো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হব।’

ওবায়দুল হক বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আমার পক্ষে মাঠে নেমেছে। মনোনয়ন না পেয়ে দু–একজন কিছু অনুসারী নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’

জামায়াত প্রার্থী করেছে দলের জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মো. হোসনী মোবারক বাবুলকে। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লা হায়দার প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী)

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান ওরফে মতিন। তবে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদও (টিটো) মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ তাঁর পক্ষে রয়েছে। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত সভা–সমাবেশ করছেন।

এদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হতে পারে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে। তিনি এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাঁচবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একবার (২০২৪) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে না থাকলেও দলের কর্মী–সমর্থকদের ওপর তাঁর প্রভাব রয়েছে।

এ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমির খন্দকার আবদুর রাজ্জাক।

টাঙ্গাইল-৫ (টাঙ্গাইল সদর)

বিএনপি এখনো টাঙ্গাইল–৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এখানে দলের অর্ধডজন নেতা মনোনয়নের জন্য মাঠে থাকলেও বেশি সক্রিয় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু) এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। তাঁরা অনুসারী নেতা–কর্মীদের নিয়ে প্রতিদিন সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন।

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের জেলা আমির আহসান হাবীব মাসুদ। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন জোরেশোরে। গণসংহতি আন্দোলন এ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্র ফেডারেশনের জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমানকে (বীথি)।

টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার)

বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আওয়াল (লাভলু)। প্রায় এক ডজন নেতা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও দল মনোনয়ন ঘোষণা করার পর তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

এখানে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েছেন এ কে এম আবদুল হামিদ। তিনি ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি। গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবীর হোসেন মনোনয়ন পেয়েছেন এ আসনে।

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর)

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী। তাঁকে পরিবর্তনের দাবিতে গত শুক্রবার সমাবেশ করেছেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাবের অনুসারীরা।

এখানে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা জামায়াতের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ তালুকদার। এখানে গণসংহতি আন্দোলন আলিফ দেওয়ানকে এবং গণ অধিকার পরিষদ তোফাজ্জল হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছে।

টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর)

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান টাঙ্গাইল–৮ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে অপর দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমান এবং শিল্পপতি সালাউদ্দিন রাসেল এক হয়ে সভা–সমাবেশ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।

সালাউদ্দিন রাসেল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। ওনাদের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।’

এদিকে এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির প্রার্থীকে একদিকে নিজ দলের ‘বিদ্রোহী’ এবং অপর দিকে কাদের সিদ্দিকীর মতো প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হবে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সখীপুর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা কাদের সিদ্দিকীর জন্য নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন।

অবশ্য জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকীকে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক ন দ র য় স বতন ত র প র র থ ব এনপ র প র র থ স ল উদ দ ন ব এনপ র স এ আসন থ ক র ব এনপ র ন এ আসন র রহম ন অন স র মন ত র কম ট র র কর ম আবদ ল করছ ন সদস য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম গণসংযোগ করলেন বিএনপি নেতা ইসরাফিল খসরু

নির্বাচনী প্রচারণায় জমে উঠছে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর পতেঙ্গা) আসন। এই আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। তবে দলের মনোনয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু। তিনি প্রতিদিনই এলাকায় সভা, সমাবেশ ও উঠোন বৈঠক করছেন। গতকাল শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে বারিক বিল্ডিং মোড়ে সমাবেশ করেন ইসরাফিল খসরু।

বিগত ১৭ বছর বিএনপির কেউ মাঠ ছেড়ে যায়নি মন্তব্য করে ইসরাফিল খসরু বলেন, বিএনপি জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। তাই আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রশাসনে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হবে, বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হবে এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি জাতির পুনর্জাগরণের নীলনকশা। এই দফাগুলোর মাধ্যমে দেশে সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা হয়। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এ আসনে দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসরাফিল খসরু ও নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান। ইসরাফিল খসরু বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পরপর চারবার এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমীর খসরু মাহমুদ।

এবারের নির্বাচনে এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এর মধ্যেও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরাফিল খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আশাবাদী। বাকিটা দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে 
  • ৪০টির বেশি আসনে অসন্তোষ, বিরোধ সামলাতে ব্যস্ত বিএনপি
  • চট্টগ্রাম গণসংযোগ করলেন বিএনপি নেতা ইসরাফিল খসরু
  • মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল চেয়ে সমাবেশ-বিক্ষোভ, এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ