ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে ভোটের পরিবেশ নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে এল জামায়াতে ইসলামী। দলটির মতে, এখনো সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি। তাই তা নিশ্চিতে ইসিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

আজ সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বিদ্যমান অবস্থার কিছু তথ্য–প্রমাণ সুনির্দিষ্টভাবে ইসির সামনে তাঁরা তুলে ধরেছেন বলে জানান তিনি।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলেছি। প্রশাসনে কর্মরত বড় বড় কর্মকর্তা এবং ইলেকশনের সঙ্গে রিলেটেড অফিসারদের নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেটা আলোচনার বিষয় ছিল। এরপরে আমরা আলোচনায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার যে অভিযান সেটাকে আমরা খুব ইফেক্টিভ দেখছি না।’

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তা ধরে ইসি সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই সঙ্গে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেও গতকাল জানিয়েছে।

আরও পড়ুননির্বাচনের তফসিল ৮-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

তার এক দিন পর ইসিতে গিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের ঘোষিত যে টাইমলাইন আসন্ন রমজানের পূর্বেই নির্বাচন করার যে প্রতিশ্রুতি, সে ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তারা ইসির কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে ইসির পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে।

জামায়াত একই দিনে গণভোট এবং সংসদ নির্বাচনে আপত্তি জানিয়ে আসছে। দুই নির্বাচন আলাদাভাবে করতে আরও সাতটি ইসলামি দলকে নিয়ে তারা যুগপৎ আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুননির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জামায়াতসহ ৮ দলের১৩ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যালঘু প্রার্থী বাড়াতে পারে জামায়াত

জামায়াতে ইসলামী এর আগে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলের নেতাদের বাইরে কাউকে প্রার্থী করেনি। জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম রুকন পদধারী নেতারা ছিলেন। এবার সেখানে দলটি কিছুটা শিথিল অবস্থান নিয়েছে। ভিন্নধর্মাবলম্বীদেরও এবার প্রার্থী করছে জামায়াত।

জামায়াতে ইসলামী এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক ধাপে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। গত সপ্তাহে তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। এর মধ্যে একটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের সূত্র বলছে, আরও কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আলোচনা চলছে। অন্তত একটি আসনে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনায় আছে, সেই আসনটি কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) হতে পারে। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা (পদ স্থগিত) ফজলুর রহমান, যিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য–কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব থেকে আলোচনায় রয়েছেন।

কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে, যেটি খুলনা-৫ আসনে পড়েছে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে যখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হয়, তখন বেশির ভাগ দলের মতো জামায়াতও গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে। তখন থেকেই অন্য ধর্মের অনুসারীদের জামায়াতের প্রার্থী করার সুযোগ তৈরি হয়।

আরও পড়ুনবিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে এখনো সমঝোতার সুযোগ দেখছে এনসিপি ২ ঘণ্টা আগে

জামায়াতের এই নেতা বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাদের পরামর্শ, জরিপের ফলাফলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরপর জয়ের সম্ভাব্যতা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি আসনে একইভাবে প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যাঁর যাঁর সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন।হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রথম প্রার্থী

জামায়াতে ইসলামী যে তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে খুলনা-১ আসনের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীকে নিয়ে। তিনি জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি। এর আগে আসনটিতে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। গত বুধবার আবু ইউসুফের বদলে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত।

কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে, যেটি খুলনা-৫ আসনে পড়েছে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। এসব সমাবেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষও ছিলেন সরব।

কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াত প্রার্থী করেছে তাঁর নিজ এলাকার বাইরের বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে। এই আসন ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ নামে ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত একবার ছাড়া প্রতিবারই এখানে হিন্দু প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অনেকের ধারণা, সেই হিসাব থেকে কৃষ্ণ নন্দীকে বেছে নিয়েছে জামায়াত।

আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যেই নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজে ফিরতে চায় বিএনপি ৪ ঘণ্টা আগে

এ ছাড়া গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে জামায়াতের নতুন প্রার্থী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ–এর সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অলিউল্লাহ নোমান বেশ কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন। এ আসনে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে।

এর বাইরে লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে আগের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও লালমনিরহাট জেলার আমির মো. আবু তাহের। এর আগে প্রাথমিকভাবে রংপুর মহানগর শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. হারুন অর রশীদকে মনোনয়ন দিয়েছিল জামায়াত।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যাঁর যাঁর সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন। সে জন্য যেসব দল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে চায়, তাদের দলে সব সম্প্রদায়ের লোক থাকতে হবে। জামায়াত সব ধর্মের লোকদের বিষয়ে সচেতন। সময়ের চাহিদা ও জন–আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে এবার প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী কিছু বিষয়কে বিবেচনা করেছে।

চূড়ান্ত হয়নি আসন সমঝোতা

‘এক আসনে এক প্রার্থী’—এই নীতি নিয়ে নির্বাচনে আসন সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে জামায়াতসহ আট দল। অপর দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। কোন আসনে কাকে প্রার্থী করলে জয়ী হতে পারেন, সে বিষয়ে জরিপ করছে দলগুলো। ওই জরিপের ভিত্তিতে জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দলগুলোর আসনভিত্তিক জরিপ চলতি সপ্তাহে শেষ হতে পারে। এরপর কোন দলের কোন নেতাকে কোন আসনে জামায়াত ছাড় দেবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া সম্ভাব্য এই নির্বাচনী সমঝোতায় আরও কয়েকটি দলকে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচিতে থাকা দলগুলোর একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ৮ ডিসেম্বর আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ওই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন লিয়াজোঁ কমিটিতে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করা দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অবৈধ অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জামায়াতের 
  • সংখ্যালঘু প্রার্থী বাড়াতে পারে জামায়াত