ব্রেকআপের পর সবার আগে কী করবেন
Published: 23rd, October 2025 GMT
ওই ব্যক্তি লিখেছেন—
‘আমার ভয়াবহ অ্যাটাচমেন্ট ইস্যু আছে। আমি যখন কাউকে ভালোবাসি, তার জন্য হৃদয়ের সব দ্বার অর্গলমুক্ত করে দিই। কোনো মানুষকে আমার ভালো লাগলে কখনো তাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে কার্পণ্য করি না।
আমার মতো মানুষদের একটা সমস্যা হলো, এরা কাউকে মেপে মেপে কিছু দিতে পারে না। যা দেয়, হৃদয় উজাড় করে দেয়। আমিও হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসি। তখন বুকের ভেতর আমার ব্যক্তিগত বলে কিছু থাকে না। নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
তখন আমার অস্তিত্ব একরকম বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই মানুষগুলোই যখন জীবন থেকে চলে যায়, রিক্ত হৃদয়ের নিদারুণ হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকি। এত এত বছর জীবনকে যাপন করে বুঝলাম, মানুষের চলে যাওয়াই নিয়তি।
বুঝলাম, মানুষকে ওভাবে ভালোবাসতে নেই। সবার শেষে কাফকার মতো উপলব্ধি হলো, “দেয়ার আর টাইমস হোয়েন আই অ্যাম কনভিন্সড, আই অ্যাম আনফিট ফর অ্যানি হিউম্যান রিলেশনশিপ”।’
১.সবার আগে কী করবেন
নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করে নিন। মন শক্ত করুন। প্রাক্তনের সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করুন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাক্তনের আপডেট চেক করা বন্ধ করুন। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সাময়িক বিরতি নিতে পারেন।
২. একা থাকুন, তবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নয়নিজের অনুভূতি নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে প্রকাশ করুন। রাগ, দুঃখ বা কষ্টের অনুভূতির বিষয়ে মন খুলে কথা বলুন বন্ধু, পরিবার বা বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড গবেষকদের মতে স্ক্রিনমুক্ত এই ৮টি অভ্যাস শিশুর বুদ্ধি বাড়ায়১ ঘণ্টা আগে৩. ‘ব্লেম গেম’ নয়কার কতটা দোষ ছিল, কী হলে কী হতে পারত, কে কতটা অপরাধী—এসব নিয়ে ভাবনার কোনো শেষ নেই। এসব ভাবনায় কোনো সমাধানও নেই। তাই অযথা দুশ্চিন্তা করে সময় নষ্ট করবেন না।
৪. শরীর ও মনের স্বাস্থ্য সবার ওপরেঘর থেকে বের হোন। হাঁটুন। জিমে ভর্তি হয়ে যান। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. মনোযোগ দিন অন্য কোথাওব্রেকআপ নিয়ে বসে বসে না ভেবে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন আপনার পছন্দের বা শখের কোনো কাজে। সিনেমা, সিরিজ, নাটক দেখুন। হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়ান।
আরও পড়ুনদুপুরে খাওয়ার পর এত ক্লান্ত লাগে কেন, কীভাবে এনার্জি ধরে রাখবেন৪ ঘণ্টা আগে৬. তাকান সামনের দিকেঅতীত নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ বাদ দিয়ে সামনের দিকে তাকান। ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক…সেসবে টিকচিহ্ন দিতে দিতে আগান।
৭. হুট করে নতুন সম্পর্কে নয়অনেকে পুরোনো সম্পর্কের ব্যথা কাটিয়ে উঠতে তাড়াহুড়া করে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাতে আবারও ভুল মানুষের প্রেমে পড়ার আশঙ্কা থাকে অনেক। তাই আগে নিজেকে সারিয়ে তুলুন। নিজেকে জানুন যে আপনি ঠিক কী চান।
সূত্র: আর্কেডিয়ান কাউন্সেলিং
আরও পড়ুন‘আগে ওনার খোঁজ পেলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতাম না’২২ অক্টোবর ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটি কার্পাসের ফুল
প্রায় দুই হাজার বছর আগে লেখা রোমান লেখক পেট্রোনিয়াসের স্যাটিরিকান গ্রন্থে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত মসলিন বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর বর্ণনায় মসলিন ছিল যেন হাওয়ায় বোনা কাপড়। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ লিখেছিলেন, মসলিন যেন ভোরের কুয়াশা দিয়ে বোনা। কী চমৎকার সব কাব্যিক উপমা!
যে কাপড়কে নিয়ে এত উপমা, সেই কাপড় আসলে কি হাওয়া বা কুয়াশা দিয়ে বোনা হতো? নিশ্চয়ই না। এ দুটির কোনোটি দিয়েই কাপড় বা বস্ত্র বয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু সে কাপড়ের মাধুর্য ও সৌন্দর্য এমনই ছিল যে তা দেখে এরূপ মনে হতো। আসলে মসলিন বোনা হতো এক বিশেষ ধরনের তুলা থেকে তৈরি করা সূক্ষ্ম বা মিহি সুতা দিয়ে। সে সুতা তৈরি হতো ফুটি কার্পাস তুলা থেকে।
একদিন বিজ্ঞানলেখক আবদুল গাফফার রনি বললেন, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার হাইলজোর গ্রামে কৃষক তাজউদ্দিনের বাড়িতে ফুটি কার্পাসের গাছ আছে। জানালেন, তিনি তাঁর কাছ থেকে ফুটি কার্পাসের একটি চারাও এনেছেন, বাড়িতে লাগাবেন।
তাঁর কথায় কাপাসিয়ার সেই গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু একটু খোঁজখবর নিতেই ওই গ্রামে আর যেতে হলো না, গাজীপুরের শ্রীপুরেই পেয়ে গেলাম সে গাছ। শ্রীপুরের ভবানীপুরে তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজবর্ধন খামারের মাঠের একটি গবেষণা খেতে চাষ করা হয়েছে ফুটি কার্পাস। হেমন্তের এক সকালে সে খামারের কটন অ্যাগ্রোনমিস্ট মো. আবদুল ওয়াহাব সেই খেতের পাশে দাঁড়িয়ে ফুটি কার্পাসের গাছগুলোকে দেখাচ্ছিলেন। বললেন, গাজীপুরের কাপাসিয়া, দিনাজপুর, বাগেরহাট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তিনি ফুটি কার্পাসের চারটি জাত সংগ্রহ করেছেন। গত বছরের ২৯ আগস্ট সেই চারটি জাতের চারা এই খামারে গবেষণার উদ্দেশ্যে লাগানো হয়েছে। প্রতিটি জাতের ৪০টি করে গাছ রয়েছে সেখানে, পাশাপাশি লাগানো জাতগুলোর ফেনোটাইপিক বৈশিষ্ট্য দেখা তাঁর উদ্দেশ্য।
ঘুরে ঘুরে চারটি জাতের গাছগুলোকেই দেখলাম। প্রতিটি গাছই আমার দ্বিগুণ উচ্চতারও বেশি লম্বা, এই এক বছরেই গাছগুলো অনেক লম্বা হয়ে ছোট বৃক্ষের রূপ ধরেছে, অনেক ডালপালা, ডালগুলো খাড়া, শক্ত ডালপালার বাকল ধূসর বাদামি, অমসৃণ। ডালগুলোর মাথায় ফুল ফুটেছে। আবার তুলার গুটিও ধরেছে। কোনো কোনো গুটি পেকে ফেটে তার তুলাও বেরিয়ে পড়েছে। সকাল বলে ফুলের রং ঘিয়ে বা সবুজাভ হালকা হলুদ। বেলা পড়তেই ফুলগুলো গোলাপি হতে শুরু করে। ফুটি কার্পাসের প্রধান গবেষক আবদুল ওয়াহাব জানালেন, ফুটি কার্পাসের গাছ প্রায় ১৫ বছর বাঁচে, গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। এ জন্য একে বলে ট্রি কটন বা গাছতুলা। অন্যান্য তুলার চেয়ে এ গাছের তুলার আঁশ খাটো, শক্ত ও চকচকে উজ্জ্বল। কিছু গাছে দুই দফায় ফুল ধরে। সেপ্টেম্বর থেকে খামারের গাছগুলোয় ফুল ফোটা শুরু হয়েছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে বেশি ফুল ফুটছে, মার্চ-এপ্রিলে আরেক দফায় ফুল ফুটবে, তবে সে সময় কম ফোটে।
জানা গেল, তাঁত বোর্ড এ দেশে মসলিন পুনরুদ্ধারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফুটি কার্পাসগাছের দুষ্প্রাপ্যতা। অথচ একসময় এ দেশে মেঘনা-শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ধরে এ গাছ ছিল অঢেল, চাষ করা হতো। যে কারণে ফুটি কার্পাস তুলা জন্মানো গাজীপুরের এই প্রধান এলাকার নামই কালক্রমে হয়ে যায় কাপাসিয়া। এ দেশে ফুটি কার্পাসের গাছ যখন পাওয়াই যাচ্ছিল না, তখন গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার জনৈক কলেজ অধ্যক্ষ তাজউদ্দীন এলাকায় মাইকিং করে ও প্রচারপত্র ছেপে বিলি করেন। এর ফলে কাজ হয়। ২০১৭ সালের মার্চে গাজীপুরের রাঙামাটি ও কাপাসিয়া গ্রাম থেকে ফুটি কার্পাসগাছের খবর পাওয়া যায়। ওই দুটি জায়গা থেকে ৩৮টি ফুটি কার্পাসের গাছ সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। ফলে বিলুপ্তির শঙ্কামুক্ত এখন ফুটি কার্পাস।