সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রতিদিন ছয়টি জাহাজে প্রায় দুই হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে যাচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতে দৈনিক যেতেন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ জন। জাহাজমালিকেরা জানিয়েছেন, পর্যটকের চাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব জাহাজের টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।

জাহাজমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক বহনের অনুমতি নেই। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

গত ১৩ দিনে অন্তত ২১ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজের পরিচালকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো জাহাজের টিকিট অবিক্রীত নেই। এমভি কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। অন্য পাঁচটি জাহাজের প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করা হয়। তবে নভেম্বর মাসে রাতযাপনের অনুমতি না থাকা ও জাহাজ চলাচল সীমিত থাকায় সে মাসে কোনো পর্যটক দ্বীপে যাননি। চলতি ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ রাখায় পর্যটক বেড়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্র ও শনিবার কক্সবাজার সৈকতে অন্তত দুই লাখ পর্যটক এসেছেন। তাঁদের অনেকেরই সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় সেই ইচ্ছা অনেকের পূরণ হয়নি।

কঠোর নজরদারিতে পর্যটক

সেন্ট মার্টিন যেতে পর্যটকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে।

এ ছাড়া দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরনের মোটরচালিত যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিউআর কোড সংযুক্ত টিকিট ছাড়া কাউকে জাহাজে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটকও যেতে পারবেন না। যাত্রীরা প্লাস্টিক বা পলিথিন বহন করছেন কি না, তা জাহাজে ওঠার আগেই তদারকি হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সেন্ট মার্টিন যাতায়াত ও দ্বীপে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণেও নজরদারি চলছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর যটক অন য য় জ র পর পর ব শ চল চল

এছাড়াও পড়ুন:

হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য সীমান্তে তৎপরতা জোরদার করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চেকপোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ টহল, তল্লাশি অভিযান ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আরও পড়ুনওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল করিম দাউদ১ ঘণ্টা আগে

আজ শনিবার বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়ন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পরিপেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সদর দপ্তর বিজিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন যাতায়াতের পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আততায়ী যেন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ টহল পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতার মাধ্যমেও সীমান্তে নজরদারি করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমানা রক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

বিজিবি একই উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে। জেলার সীমান্তবর্তী কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় যানবাহনে তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অবৈধভাবে ভারতে যেতে না পারে, সে জন্য জেলার সরাইল (২৫ বিজিবি) ব্যাটালিয়ন ও সুলতানপুর (৬০ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গতকাল রাত থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আজ দিনভর তাঁরা সীমান্ত এলাকায় টহল ও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জব্বার আহমেদ জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের কিছু সীমান্ত এলাকায় টহল কার্যক্রম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের (৬০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান জানান, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার রোধকল্পে বিজিবির সদস্যরা সর্বদা সীমান্তে টহল দেন। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ত্রাসীদের অবৈধভাবে পারাপার ঠেকাতে বিজিবি বদ্ধপরিকর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার
  • অনিয়ম রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন
  • নতুন মাদক এমডিএমবি জব্দ, চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪
  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে