খুলনায় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাকিবুর রহমান ওরফে জিতুসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পু‌লিশ। 

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সঙ্গীতা সিনেমা হলের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া, শাওন ও সোহেল রানা ওরফে উজ্জ্বল শেখ।

আরো পড়ুন:

ঢাকা থেকে নিখোঁজ কিশোরী সুবা নওগাঁয় উদ্ধার 

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার কুতুব উদ্দিন বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আকলের কেন এত মর্যাদা

আকল কী এবং মানবজীবনে এর ভূমিকা কী, তা নিয়ে গ্রিক আমল থেকে আজ পর্যন্ত অনেক আলোচনা হয়েছে। বিতর্কও কম হয়নি।

মানুষের জীবনে এই আকলের অবস্থান বা মর্যাদা আসলে কোথায়? আর একজন মুসলমানের জীবনেই–বা এর গুরুত্ব কতটুকু? মানুষের ভেতর থাকা এই আকলের কাজ কী? আকল কোন কোন বিষয়ে প্রবেশ করতে পারে? আর কোথায় গিয়ে এর ক্ষমতা হার মানে? আকলের সীমানাই–বা কতটুকু?

এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে আমরা এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।

আকল হলো কোনো কিছুর ভালো বা মন্দ গুণ সম্পর্কে জানা। অথবা দুটি ভালোর মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ এবং দুটি মন্দের মধ্যে কোনটি বেশি খারাপ, তা বুঝতে পারা।আকলের অর্থ ও স্বরূপ

‘আকল’ (বুদ্ধি) শব্দটি আরবি ক্রিয়ামূল থেকে এসেছে। এর অর্থ আটকানো ও রক্ষা করা। যিনি নিজের কাজ ও মতামতের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন, তাঁকেই বুদ্ধিমান বা ‘আকিল’ বলা হয়। শব্দটি মূলত উট বাঁধার ধারণা থেকে নেওয়া হয়েছে। উটের পাগুলো ভাঁজ করে বেঁধে রাখাকে আরবিতে ‘আকালতু’ বলে।

বুদ্ধিকে ‘আকল’ (বাঁধন বা নিয়ন্ত্রণ) নাম দেওয়ার একটি বিশেষ কারণ আছে। কারণ, এটি মানুষকে ধ্বংসের পথে যাওয়া থেকে আটকে রাখে বা রক্ষা করে। কোনো কিছু ‘আকল’ করা মানেই তা ভালোভাবে বুঝতে পারা। (ইবনে মানজুর, লিসানুল আরব, আকল ধাতুমূল)

বিখ্যাত অভিধান আল–কামুসুল মুহিত–এ বলা হয়েছে, আকল হলো কোনো কিছুর ভালো বা মন্দ গুণ সম্পর্কে জানা। অথবা দুটি ভালোর মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ এবং দুটি মন্দের মধ্যে কোনটি বেশি খারাপ, তা বুঝতে পারা। (আল–কামুসুল মুহিত, ফিরোজাবাদী, ৩/১৮)

আকলের অর্থগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভাষাবিদেরা শব্দের ক্রমবিকাশ অনুসারেই বুদ্ধির অর্থ করেছেন। তাঁরা এর আভিধানিক অর্থের পাশাপাশি কাজ ও নৈতিক দিকও তুলে ধরেছেন। মূলত আকলের অর্থ দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—

১. তাত্ত্বিক দিক: অর্থাৎ কোনো কিছু বোঝা, উপলব্ধি করা ও জ্ঞান অর্জন করা।

২. ব্যবহারিক বা নৈতিক দিক: ভালো ও মন্দের পার্থক্য বোঝা এবং নিজেকে প্রবৃত্তি থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

উভয় ক্ষেত্রেই মূল বিষয়টি হলো ‘ধরে রাখা’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ’। তা জ্ঞানের বা চিন্তার নিয়ন্ত্রণই হোক অথবা নৈতিক সংযম হোক। (ফাতেমা ইসমাইল মুহাম্মদ, আল–কুরআন ওয়ান নাজারুল আকলি, পৃ. ৪৯–৫০)

আরও পড়ুনইসলামে ‘কলব’ ও ‘আকল’–এর সম্পর্ক১০ নভেম্বর ২০২৫মুসলিম চিন্তাবিদেরা কী বলছেন

ইবনে সিনা বলেন, আকল হলো একটি সাধারণ নাম, যার কয়েকটি অর্থ রয়েছে—

১. মানুষের জন্মগত সুস্থ স্বভাবকেও আকল বলা হয়। এই অর্থে আকলের সংজ্ঞা হলো, এমন এক শক্তি, যা দিয়ে মানুষ ভালো ও মন্দের পার্থক্য করতে পারে।

২. অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ যে জ্ঞান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাকেও আকল বলা হয়। এ ক্ষেত্রে আকলের সংজ্ঞা হলো, মনের ভেতর জমা হওয়া কিছু ধারণা। এই ধারণাগুলোকে কাজে লাগিয়ে মানুষ নিজেদের কল্যাণ ও উদ্দেশ্য হাসিল করে।

৩. আকলের আরেকটি অর্থ আছে। তা হলো, মানুষের চালচলন, কথাবার্তা ও পছন্দের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য থাকা। (গাজালি, মিয়ারুল ইলম ফি ফান্নিল মানতিক, পৃ. ১৬২-১৬৪)

এখান থেকে বোঝা যায়, মুসলিম দার্শনিকেরা যখন আকলের কথা বলেন, তখন এর সব রকম ব্যবহারের কথাই উল্লেখ করেন। কাজের দিক থেকে হোক, দায়িত্বের দিক থেকে হোক বা চিন্তার গভীরতার দিক থেকে, তারা সব দিক বিবেচনা করেন।

আকলের সম্মান সম্পর্কে ইমাম গাজালি বলেন, আকলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য কোনো কষ্টের প্রয়োজন নেই। ইলম বা জ্ঞান হলো আকল ও বুদ্ধির ফল। আকল যদি গাছ হয়, তবে জ্ঞান হলো তার ফল। আকল সূর্য হলে, জ্ঞান তার আলো। যে জিনিস মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য এনে দেয়, তা কীভাবে সম্মানিত না হয়ে পারে? (গাজালি, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ১/৮৮)

সুফি হারিস আল–মুহাসিবি বলেন, সবকিছুরই একটি সারবস্তু আছে। মানুষের সারবস্তু হলো তার আকল। আর আকলের সারবস্তু হলো আল্লাহর তাওফিক (সঠিক পথের দিশা)। একজন ব্যক্তির ইমান যত শক্তিশালী হবে, তার আকলও তত গভীর হবে। (মুহাসিবি, আল–আকল ওয়া ফাহমুল কুরআন, ২০১–২০২)

গ্রিক দর্শনে বুদ্ধিকে যেমন একটি আলাদা ও স্বাধীন সত্তা মনে করা হয়, পবিত্র কোরআনে তেমনটা নয়। এখানে বুদ্ধিকে মূলত চিন্তাশীল মানসিক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।পবিত্র কোরআনে আকলের ধারণা

পবিত্র কোরআনে বুদ্ধিবৃত্তিক বা চিন্তাশীলতার বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। পবিত্র কোরআনে এমন অনেক আয়াত রয়েছে, যা মানুষকে গভীরভাবে চিন্তা, গবেষণা করতে ও মনোযোগ দিতে আহ্বান জানায়। এসব আয়াতে সরাসরি বলা হয়েছে যে আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ নিয়ে আমাদের আকল খাটাতে হবে। এর মাধ্যমেই আমরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারব।

পবিত্র কোরআনে কেবল আকলের ধারণাই দেওয়া হয়নি; বরং শব্দ হিসেবেও এটি বহুবার এসেছে। ‘আকল’ (বুদ্ধি) শব্দটি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ও সমার্থক শব্দগুলো পবিত্র কোরআনে সরাসরি ৩৪ বার, আবার কারও মতে ৪৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে কোথাও ‘আকল’ শব্দটি বিশেষ্য পদ হিসেবে একবারও ব্যবহৃত হয়নি; বরং সেখানে আকলকে একটি কাজ বা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ আকল খাটানো বা অনুধাবন করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এর কারণ হলো, গ্রিক দর্শনে বুদ্ধিকে যেমন একটি আলাদা ও স্বাধীন সত্তা মনে করা হয়, পবিত্র কোরআনে তেমনটা নয়। এখানে বুদ্ধিকে মূলত চিন্তাশীল মানসিক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। (ফাতেমা ইসমাইল মুহাম্মদ, আল–কুরআন ওয়ান নাজারুল আকলি, পৃ. ৬৩)

আরও পড়ুনইসলামে কলবের মর্যাদা ও গুরুত্ব১২ নভেম্বর ২০২৫

পবিত্র কোরআন জ্ঞানার্জনের উপায়গুলোর ওপর খুব গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয় ও আকলের কাজের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উপলব্ধি করাই হলো আকলের মূল কাজ।

পরকালে শাস্তির মুখোমুখি হয়ে কাফেররা আকল না ব্যবহার করার আফসোস করবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তারা বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা আকল প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ১০)

আকলের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক বোঝাতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা আকলসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়; বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৪৬)

আকল ও শরিয়তে বিরোধ নেই

আলেমদের কাছে এটি প্রতিষ্ঠিত যে শরিয়তের দলিল বা বিধান কখনোই সুস্থ বুদ্ধি ও আকলের বিরোধী নয়। শরিয়ত এমন কোনো বিধান দেয় না, যা বুদ্ধি ‘অসম্ভব’ বলে রায় দেয়। তবে হ্যাঁ, এমন কিছু বিষয় থাকতে পারে, যা বুদ্ধিকে অবাক বা বিস্মিত করে দেয়। (শাতেবি, আল–মুয়াফাকাত, ৩/৩১)

এর কারণ খুব পরিষ্কার। শরিয়তের বাণী বা ওহি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আর মানুষের আকলও আল্লাহরই সৃষ্টি। যেহেতু দুটিই একই উৎস থেকে এসেছে, তাই এদের মধ্যে বিরোধ থাকা অসম্ভব। বিরোধ থাকা মানে ত্রুটি থাকা। আর আল্লাহ সব ধরনের ত্রুটি থেকে পবিত্র।

যদি আমরা শুনতাম অথবা আকল প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না।কোরআন, সুরা মুলক, আয়াত: ১০

অন্যভাবে বলা যায়, শরিয়তের বিধানগুলো মানুষের জন্যই পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ মানুষকে আকল দিয়েছেন যাতে তারা এই বিধানগুলো বুঝতে পারে ও পালন করে। যদি শরিয়ত ও আকলের মধ্যে সংঘাত থাকত, তবে মানুষের ওপর ধর্মীয় দায়িত্ব (তাকলিফ) চাপানো সঠিক হতো না। আকলের বিরোধী কিছু মানতে বাধ্য করা মানে, মানুষের ওপর ‘সাধ্যের বাইরের বোঝা’ চাপিয়ে দেওয়া।

যদি ধরে নেওয়া হয় যে ধর্ম ও বুদ্ধির মধ্যে বিরোধ সম্ভব, তবে সেই ধর্ম পালন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হতো না। কারণ, বুদ্ধি যা সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারে না, মানুষ তা আমল করবে কীভাবে? (শাতেবি, আল–মুয়াফাকাত, ৩/২৭)

কেউ হয়তো দাবি করতে পারে যে, ‘আমার আকল শরিয়তের কিছু বিষয় মেনে নিতে পারছে না।’ কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কার আকল কী বলল, তার গুরুত্ব নেই। আসল কথা হলো, কুপ্রবৃত্তিমুক্ত সুস্থ আকল তা মানতে পারছে কি না। অজ্ঞতা, জেদ, অহংকার বা মনগড়া খেয়ালখুশির কারণে কেউ যদি সত্য অস্বীকার করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। (আবদুল্লাহ দারাজ, আল–মুআফাকাতের ব্যাখ্যা, ৩/২৭)

এর বড় প্রমাণ হলো, যুগে যুগে যারা নিজেদের আবেগের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পেরেছে, তারা দলে দলে ইসলামে এসেছে। কারণ তারা দেখেছে, ইসলামের বিধানগুলো একেবারে যুক্তিসংগত।

একবার এক বেদুইন সাহাবিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আপনি কীভাবে বুঝলেন যে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল?’

সাহাবি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তিনি এমন কোনো কাজের আদেশ দেননি, যা শুনে আমার আকল বলেছে, ইশ্! তিনি যদি এটা নিষেধ করতেন। আবার তিনি এমন কোনো কাজ নিষেধ করেননি, যা শুনে আমার আকল বলেছে, ইশ্! তিনি যদি এটা বৈধ রাখতেন। (ইবনুল কাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাহ, পৃ. ৫৭৯)

[email protected]

আবদুল্লাহিল বাকি : আলেম ও সফটওয়্যার প্রকৌশলী

আরও পড়ুনধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক: পশ্চিমা অনুকরণ থেকে মুক্তির পথ২২ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ