বিভিন্ন অপরাধে বুয়েটের ৮ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার
Published: 4th, February 2025 GMT
অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আট শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ২৭ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর পরিচালক (ডিএসডাব্লিউ) অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “বুয়েটের অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা ৪১টি মিটিং করেছেন। এরপর তারা উপাচার্যকে একটি প্রতিবেদন দেন। সেখানে কিছু সুপারিশ করা হয়। এরপর সেটি শৃঙ্খলা কমিটিতে উত্থাপন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি বুয়েট কর্তৃপক্ষ। তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েও এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গত ৫ আগস্টের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে এসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দেওয়া তথ্য মতে, আটজনকে আজীবনের জন্য এবং ১২ জনকে ৪-৬ টার্মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আর সাতজনকে আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা বাইরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবেন।
ছয়জনকে দুই টার্ম বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তাদের এ শাস্তি স্থগিত থাকবে। তারা স্বাভাবিকভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা যদি আবারো বুয়েটের অর্ডিন্যান্সের কোন ধারা লঙ্ঘন করেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে এ শাস্তি অর্থাৎ দুই টার্ম বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। বাকি ২৭ জনকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সতর্ক করা হয়েছে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভাই খুন করার পর মৃত প্রেমিককে বিয়ে করলেন তরুণী
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজনের পরিচয়। এরপর ধীরে ধীরে ভালো লাগা। পরে মন দেওয়া–নেওয়া। একপর্যায়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেষ সাতপাকে বাঁধা হলো না। ভিন্ন জাতের কারণে ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়। অভিযোগ প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। এতে দমে যাননি প্রেমিকা। প্রেমিকের মরদেহকে বিয়ে করে তাঁর বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। তরুণীর নাম আঁচল মামিদওয়ার (২১)। তাঁর প্রেমিকের নাম সক্ষম তাতে (২০)। মৃত প্রেমিককে বিয়ে করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
আঁচল বলেন, তাঁরা বিয়ে করলে মেনে নেবেন বলে পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে একসঙ্গে ছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছি। আমার ভাইয়েরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরাই আমাদের বিয়ের আয়োজন করবেন; কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
সক্ষমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল বলে জানান আঁচল। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (পরিবারের সদস্যরা) সক্ষমের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন, একসঙ্গে খেতেন। তাঁরা সক্ষমকে আশ্বস্ত করেছিলেন, সব ঠিক আছে। আমরা ভাবতে পারিনি যে এমন কিছু ঘটবে।’
পুলিশের উসকানি
আঁচল অভিযোগ করেন, ধীরাজ কোমলওয়ার ও মহিত আসারওয়ার নামের দুজন পুলিশ সদস্য এ কাজে তাঁর ভাইদের উসকানি দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড ছিল বলে জানা গেছে।
আঁচল বলেন, ‘সক্ষমকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন বেলা ১১টার দিকে আমার ছোট ভাই আমাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সক্ষমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিতে বলে, যা ছিল মিথ্যা। আমি তাতে রাজি হইনি।’
মহারাষ্ট্রের এই তরুণী বলেন, ‘তখন পুলিশ আমার ভাইকে বলে, “তুমি তো মানুষ খুন করার পরেও এখানে আসো। তোমার বোন যাঁর সঙ্গে প্রেম করেন, তাঁকে মেরে ফেলো না কেন?”’
আঁচল বলেন, ‘পুলিশের কথার জবাবে আমার ভাই বলে, “ঠিক আছে, সন্ধ্যার মধ্যেই তাকে মেরে আপনাদের কাছে হাজির হব।”’
সক্ষমকে যেভাবে হত্যা করা হয়
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সক্ষম। তখন আচঁলের ভাই হিমেশ মামিদওয়ারের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়, যা শেষ পর্যন্ত মারামারিতে রূপ নেয়। হিমেশ একপর্যায়ে ২০ বছর বয়সী সক্ষমকে গুলি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গুলিটি তাঁর পাঁজরে লাগে। এরপর হিমেশ তাঁর মাথায় টাইলস দিয়ে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই তাঁকে মেরে ফেলেন।
এ ঘটনায় হিমেশ, তাঁর ভাই সহিল, তাঁদের বাবা গজনান মামিদওয়ার এবং আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
শেষকৃত্য রূপ নেয় বিয়েতে
পরদিন সন্ধ্যায় শুক্রবার সক্ষমের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছিল। আঁচল তখন সক্ষমের বাড়িতে গিয়ে সিঁদুর পরে সক্ষমের মরদেহকে ‘বিয়ে’ করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে সক্ষমের সঙ্গে প্রেম করেছি। কিন্তু জাতপাতের পার্থক্যের কারণে আমার বাবা এ সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিলেন। আমার পরিবার প্রায়ই সক্ষমকে হত্যার হুমকি দিত। আর এখন আমার ভাই ও বাবা সেটাই করে ফেলেছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।’
আঁচল বলেন, এখন থেকে তিনি সক্ষমের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন।
‘জাতপাতের কারণে হত্যা’
আঁচল জানিয়েছেন, পরিবার বলে দিয়েছে তাঁর জন্য বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জাতপাতের কারণে। আমার বাবা ও ভাইয়েরা বলতেন, “আমরা গ্যাংস্টার, সক্ষম তা জানে। সে কীভাবে আমাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়?”’
আঁচল বলেন, সক্ষমের পরিবার তাঁকে মেনে নিয়েছে। তিনি আজীবন তাদের সঙ্গেই থাকবেন। তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
এই তরুণী বলেন, ‘অনেক মানুষ আমার পাশে রয়েছে। জাতের কারণে কাউকে হত্যা করা উচিত নয়।’