স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ডেভিলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে। আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অপারেশনটা চলবে তত দিন পর্যন্ত, যত দিন পর্যন্ত ডেভিল এখান থেকে মুক্ত না হবে।’

গাজীপুরে গত শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ–বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরদিন থেকে শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান। এর নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। গতকাল রোববার পর্যন্ত এই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৩০৮ জনকে। তাঁদের বেশির ভাগই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। চলমান ডেভিল হান্ট অভিযানে এ ধরনের বিষয়ে নির্দেশনা কী থাকবে—জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়, এ জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা, তা কিন্তু আমরা নিচ্ছি। এটা শুধু থানার ওপরে আমরা রাখিনি। এ নিয়ে একাধিক কমিটিও করা হয়েছে, যেন কোনো নির্দোষ মানুষ কোনো অবস্থাতেই সাজা না পান। যারা মিথ্যা মামলা করেছে, আইনের ভেতর থেকেও তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।’

ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় কারা পড়বেন, সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা ডেভিল শব্দটার অর্থ তো জানেন—শয়তান। যারা শয়তান, তাদেরই ধরা হবে। এখন ছোট শয়তান নাকি বড় শয়তান, সেটা দেখব না।’ এ অভিযানে চুনোপুঁটি ধরা পড়ছে, রাঘববোয়ালেরা ধরা পড়ছে না—এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেভিল হান্ট ঘোষণা করার পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। প্রথম দিনই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বড়–ছোট কোনো ভেদাভেদ নেই। যে আসবে এই জালে, সে ধরা পড়বে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের সাম্প্রতিক উত্তেজনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী ও সাংবাদিকদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে পার্শ্ববর্তী দেশের একটা জবাব দিয়েছে। তারপরও আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে বলব, আইন যেন কোনো সময় কেউ নিজের হাতে তুলে না নেয়। এই বিষয়গুলোতে বাহিনীর যারা আছে, তারাই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সে সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী ভালো কাজই করেছে।’

পবিত্র রমজানে জিনিসপত্রের দামের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজানে কিন্তু দুটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। রোজা মুসলমানদের। বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, তাঁদের ধর্মীয় কোনো উৎসব হলে তাঁরা জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেন। কিন্তু এখানে রমজানের সময়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়ানোটাকে তারা সওয়াব হিসেবে নেয় কি না, আমি জানি না। এটা কিন্তু সওয়াবের মধ্যে পড়ে না। এই যে তারা দাম বাড়িয়ে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে, এতে তারা কিন্তু শুধু জনগণের কাছে নয়, ওপরওয়ালার কাছেও দায়ী থাকবে। আমি আশা করছি, এবার জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এবার আমাদের আমদানি খুবই ভালো। ডাল, ছোলা, খেজুর—এগুলোর সরবরাহ কিন্তু খুবই ভালো। আর তেলেও কোনো সমস্যা নেই।’

সারের সংকট নিয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক বলেন, বিএডিসি সার দিতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কোন এলাকায় সংকট, আপনি বলেন। কোনো এলাকায় সংকট হলে ডিসির (জেলা প্রশাসক) সঙ্গে কথা বলেন। এখন কিছু কিছু ডিলার শয়তানি করছে। এ জন্য আমি একটি নির্দেশনা দিয়েছি, যে ডিলারগুলো শয়তানি করবে, কমিশনাররা এগুলো পরিবর্তন করে দেবে। আর কিছু কিছু ডিলার দাম একটু বেশি নিচ্ছে। এদের ক্ষেত্রে সঠিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কৃষকেরা আমাদের প্রাণ। তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলে বেলা একটার পর পর্যন্ত। সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল