সব টিউমার থেকেই কি ক্যানসার হয়
Published: 10th, February 2025 GMT
টিউমার শব্দটি শুনলেই আতঙ্ক হয়, মনে হয় ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু টিউমার আর ক্যানসার এক নয়। সব টিউমার ক্যানসার না-ও হতে পারে। আবার ক্যানসার টিউমার ছাড়াও কখনো ক্ষত, আলসার ইত্যাদি হিসেবে দেখা দিতে পারে, যেমন ব্রেস্ট টিউমার ও ব্রেস্ট ক্যানসার দুটো একই নয়।
টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায়। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ। যখন শরীরে অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক কোষগুলো কোথাও জমে একটি লাম্প বা গোটা বা চাকতির মতো প্রকাশ পায়, তখন একে টিউমার বলে।
টিউমারের ধরন
টিউমার দুই ধরনের হয়। একধরনের টিউমার শুধু এক জায়গায় বৃদ্ধি পেয়ে সেখানেই স্থির থাকে। এদের বলে বিনাইন টিউমার বা নিরীহ টিউমার। আরেক ধরনের টিউমারের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত কিংবা লসিকা দিয়ে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে সেই অংশেরও স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, নতুন করে সেখানে টিউমার তৈরি করে। এগুলোকে বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এ টিউমারই হলো ক্যানসার।
আরও পড়ুনক্যানসার কেন এত বেশি হচ্ছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ক্যানসারের ধরন
আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যানসার হতে পারে। ক্যানসারের শুরু শরীরের কোনো একটি অংশ দিয়ে হয়। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়ায়। তবে টিউমার ছাড়াও ক্যানসার হতে পারে, যেমন ব্লাড ক্যানসার বা লিউকেমিয়া। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কোষগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তে বেশি পরিমাণে জমা হয়। ধীরে ধীরে রক্তের স্বাভাবিক কোষ কমতে আর অস্বাভাবিক কোষ বাড়তে থাকে।
কোলন বা অন্ত্র, খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে টিউমার না হয়ে ক্ষত বা আলসারের মাধ্যমে ক্যানসার প্রকাশ পেতে পারে। মুখের ঘা ক্যানসার হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আলাদা গোটা বা টিউমার দেখা দেয় না।
নারীদের ব্রেস্টে জীবনের যেকোনো সময়ে লাম্প বা চাকতি বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। এর সবই ক্যানসার নয়। কোনোটি নিরীহ টিউমার বা ফাইব্রোসিস্টিক ডিজিজ।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে যেসব ক্যানসার এখন বেশি হয়০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উপসর্গ ও চিকিৎসা
ক্যানসার হলে টিউমারের সঙ্গে বাড়তি কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন ওজন হ্রাস, অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, জ্বর ইত্যাদি। নিরীহ টিউমারের সাধারণত কোনো চিকিৎসা লাগে না। তবে যদি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসার কোষ পাওয়া যায়, তবে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির দরকার হয়।
শরীরে যেকোনো গোটা বা উল্লেখিত ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ও প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাম বা সিটি স্ক্যান কিংবা এমআরআই করে নিশ্চিত হন এটি টিউমার কি না। তারপর সেখান থেকে কিছু কোষ নিয়ে বায়োপসি করে নিশ্চিত হন, সেগুলো ক্যানসারজাতীয় কি না।
অধ্যাপক ডা.
মো. ইয়াকুব আলী, রেডিয়েশন ও মেডিকেল অনকোলজিস্ট, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ