Prothomalo:
2025-05-01@04:43:02 GMT

সব টিউমার থেকেই কি ক্যানসার হয়

Published: 10th, February 2025 GMT

টিউমার শব্দটি শুনলেই আতঙ্ক হয়, মনে হয় ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু টিউমার আর ক্যানসার এক নয়। সব টিউমার ক্যানসার না-ও হতে পারে। আবার ক্যানসার টিউমার ছাড়াও কখনো ক্ষত, আলসার ইত্যাদি হিসেবে দেখা দিতে পারে, যেমন ব্রেস্ট টিউমার ও ব্রেস্ট ক্যানসার দুটো একই নয়।

টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায়। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ। যখন শরীরে অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক কোষগুলো কোথাও জমে একটি লাম্প বা গোটা বা চাকতির মতো প্রকাশ পায়, তখন একে টিউমার বলে।

টিউমারের ধরন

টিউমার দুই ধরনের হয়। একধরনের টিউমার শুধু এক জায়গায় বৃদ্ধি পেয়ে সেখানেই স্থির থাকে। এদের বলে বিনাইন টিউমার বা নিরীহ টিউমার। আরেক ধরনের টিউমারের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত কিংবা লসিকা দিয়ে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে সেই অংশেরও স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, নতুন করে সেখানে টিউমার তৈরি করে। এগুলোকে বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এ টিউমারই হলো ক্যানসার।

আরও পড়ুনক্যানসার কেন এত বেশি হচ্ছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্যানসারের ধরন

আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যানসার হতে পারে। ক্যানসারের শুরু শরীরের কোনো একটি অংশ দিয়ে হয়। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়ায়। তবে টিউমার ছাড়াও ক্যানসার হতে পারে, যেমন ব্লাড ক্যানসার বা লিউকেমিয়া। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কোষগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তে বেশি পরিমাণে জমা হয়। ধীরে ধীরে রক্তের স্বাভাবিক কোষ কমতে আর অস্বাভাবিক কোষ বাড়তে থাকে।

কোলন বা অন্ত্র, খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে টিউমার না হয়ে ক্ষত বা আলসারের মাধ্যমে ক্যানসার প্রকাশ পেতে পারে। মুখের ঘা ক্যানসার হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আলাদা গোটা বা টিউমার দেখা দেয় না।

নারীদের ব্রেস্টে জীবনের যেকোনো সময়ে লাম্প বা চাকতি বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। এর সবই ক্যানসার নয়। কোনোটি নিরীহ টিউমার বা ফাইব্রোসিস্টিক ডিজিজ।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে যেসব ক্যানসার এখন বেশি হয়০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উপসর্গ ও চিকিৎসা

ক্যানসার হলে টিউমারের সঙ্গে বাড়তি কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন ওজন হ্রাস, অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, জ্বর ইত্যাদি। নিরীহ টিউমারের সাধারণত কোনো চিকিৎসা লাগে না। তবে যদি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসার কোষ পাওয়া যায়, তবে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির দরকার হয়।

শরীরে যেকোনো গোটা বা উল্লেখিত ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ও প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাম বা সিটি স্ক্যান কিংবা এমআরআই করে নিশ্চিত হন এটি টিউমার কি না। তারপর সেখান থেকে কিছু কোষ নিয়ে বায়োপসি করে নিশ্চিত হন, সেগুলো ক্যানসারজাতীয় কি না।

অধ্যাপক ডা.

মো. ইয়াকুব আলী, রেডিয়েশন ও মেডিকেল অনকোলজিস্ট, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

আরও পড়ুন‘ক্যানসার ধরা পড়েছে, কিন্তু রোগী কে?’ চিকিৎসকের কথা শুনে হতভম্ব আমি যা করলাম০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

কণ্ঠস্বরকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা

ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে, তার ৩৮ শতাংশ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার ওপর। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী মানুষ যেমন গায়ক, অভিনেতা, শিক্ষক, উকিল, ধারাভাষ্যকার, বিক্রয়কর্মী, কলসেন্টারের কর্মী, কণ্ঠশিল্পীদের জন্য কণ্ঠই সবকিছু।

কণ্ঠনালির প্রদাহ

এ প্রদাহ দুই ধরনের। সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস। ভাইরাস, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য কণ্ঠনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার করলে বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।

কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার

অতিরিক্ত চিৎকারের কারণে যেমন স্বর ভেঙে যায়, তেমনি আবার মৌসুম বদলের সময়ও এমন সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাপমাত্রার তারতম্যের সময় কণ্ঠনালি বা টনসিলের প্রদাহের উপসর্গ হিসেবে স্বর ভেঙে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রোগী স্বর ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন: কণ্ঠস্বরের ওপর যাঁদের খুব বেশি চাপ পড়ে (যেমন গায়ক, আবৃত্তিকার, শিশুদের শিক্ষক)। তাঁদের স্বরতন্ত্রীতে ছোট ছোট গোটা হতে পারে (নডিউল)। এ রকম হলে স্বর অস্বাভাবিক রয়ে যায় দীর্ঘদিন। স্বর ভাঙার অন্যান্য কারণ হলো থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসার, স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার ইত্যাদি।

মৌসুমের কারণে কণ্ঠনালির প্রদাহ হলে গলাব্যথা, জ্বর, কাশি ও সর্দির মতো উপসর্গ থাকে।

থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ওজন বৃদ্ধি, শীতপ্রবণতা, দুর্বলতা, বিষণ্নতা, চিন্তায় ও কাজে ধীরতা, চুল পড়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।

ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে ওজন হ্রাস, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

কণ্ঠস্বরের যত্নে যা করতে হবে

● কণ্ঠস্বরের সমস্যা তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

● আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।

● কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানী হোন। অতিউচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলবেন না।

● ধূমপান, অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করুন। 

● ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন এবং অল্প আহার করুন।

● অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। 

● অপ্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার ও কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

● শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে, এটি কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতা বৃদ্ধিকারী যন্ত্র ব্যবহার করুন।

● গলা শুকনো থাকলে অথবা মিউকাস জমে থাকলে জোরে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা ক্ষতিকর। 

● যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয়, তখন মিউকাস তরলকারী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

আমরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি প্রধানত কণ্ঠের মাধ্যমে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাওয়ার বদভ্যাস কণ্ঠস্বরের নানা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই সঠিক কণ্ঠস্বর বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।


অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, অধ্যাপক, ইএনটি হেড নেক সার্জারি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে ক্যানসার স্ক্রিনিং
  • অ্যাডিনোমায়োসিস: নারীদের যন্ত্রণার আরেক নাম
  • কণ্ঠস্বরকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা