খালাসের পরও ৭ বছর কারাগারের ফাঁসির সেলে বন্দী ছিলেন ইব্রাহিম
Published: 11th, February 2025 GMT
‘কনডেমড সেলে একরকম কষ্টে ছিলাম। বাইরে এসেও তো কষ্ট। মা-ভাই-বোনের মুখের দিকে তাকলে তো বোঝা যাচ্ছে সংসারের অবস্থা! এখন কিছু একটা করতি হবে। করতি তো হবে; আমার তো ক্যাপাসিটি নাই। কী করব, এইটাই তো বুঝে উঠতি পারতিছিনে। নানাবাড়ির খুব সামান্য একটু সম্পত্তি ছিল। সেই সম্পত্তি বেইচে মামলার পেছনে গেছে। কেউ কেউ এখন দেখতে আসতেছে। সবাই ডাকাডাকি করতেছে। এসবের মধ্যেও আমার মাথায় খালি চিন্তা কীভাবে কী হবে।’
কথাগুলো ইব্রাহিম আলী শেখের। ডাকনাম সাগর। ২১ বছর কারাভোগ শেষে গত শনিবার সন্ধ্যায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অবশ্য বছর সাতেক আগেই মুক্ত হতে পারতেন। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। তবে খালাসের সেই আদেশ কারাগারে পৌঁছাতে লেগেছে এতটা বছর।
৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপারের কার্যালয় থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের কাছে ইব্রাহিম আলীর ছাড়পত্র পাঠানো হয়। সেখানে ইব্রাহিমের ঠিকানা লেখা আছে খুলনার বটিয়াঘাটার হাতিরাবাদ গ্রাম।
গতকাল সোমবার চর হাতিরাবাদ গ্রামে ইব্রাহিমদের পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে জানা গেল, তাঁর বাবা মতিয়ার রহমান চর হাতিরাবাদ গ্রামে থাকলেও ইব্রাহিমরা সেখানে থাকেন না। ইব্রাহিমকে পাওয়া গেল বাগেরহাটের ফকিরহাটের লখপুর ইউনিয়নের ভবনা-খড়িবুনিয়া গ্রামে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ইব্রাহিম ভগ্নিপতি নওশের আলী খানের কাছে আছেন।
ভগ্নিপতির ঘরের পাশেই ইব্রাহিমের মা-ভাইয়েরও ঘর। মরা পশুর নদের চরের সরকারি জায়গায় ঘরবাড়ি করেছেন তাঁরা। ২১ থেকে ২২ বছর বয়সে যখন জেলে যান, তখন মায়ের সঙ্গে ইব্রাহিমরা থাকতেন বটিয়াঘাটার আমীরপুর গ্রামে। তাই নতুন ঠিকানায় ইব্রাহিমের এই প্রথম পা রাখা। ২০০৩ সালে যখন ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তাঁর বিয়ের বয়স বছর দুয়েক। সন্তানের বয়স কয়েক মাস। তাঁর জেলে থাকার সময়ে সন্তানের বিয়ে হয়ে গেছে। সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন স্ত্রী।
ইব্রাহিমের বড় ভগ্নিপতি নওশের আলী খান বলেন, ‘এখন ও একেবারে জিরো। স্ত্রী, পরিবার, টাকাপয়সা কিছু নেই। শ্বশুরের আরেকটা বিয়ে হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে আমার শাশুড়ি পরের জায়গায় থাকত। মরা পশুরের দুই পাড়ে চর উঠেছে। আমরা বটিয়াঘাটার অংশে জায়গা না পেয়ে ফকিরহাটের পাড়ে জায়গা পেয়েছি। এখানেই সবাই মিলে থাকছি। জেল থেকে বের হয়ে ইব্রাহিম আমার কাছে থাকছে।’
দীর্ঘকাল পরে ছেলেকে কাছে পেয়ে খুশি ইব্রাহিমের মা কোহিনূর বেগম। হতাশাও আছে। কোহিনূর বেগম বলেন, ছেলে জেলে যাওয়ার পর কী যে খারাপ দিন গেছে! পয়সাকড়ির সমস্যা তো ছিলই, মামলা দেখাশোনার জন্যও কেউ ছিল না। বাবার বাড়িতে একটু জায়গা ছিল, সেটাও বিক্রি করে দেন। ইটের ভাটার কাজ, এর বাড়ি ওর বাড়ি কাজ করেছেন। ছোট ছেলেটা ছোট ছিল, দুটো মেয়ের বিয়ে বাকি ছিল, ইব্রাহিমের মেয়েটাও ছোট ছিল। জানের ওপর দিয়ে অনেক কষ্ট গেছে। ওপরওয়ালার ইচ্ছায় ছেল ফিরে এসেছেন, এতেই তিনি খুশি। তবে সংসার কেমনে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও আছে।
ক্ষোভও কম নয় কোহিনূর বেগমের। বললেন, ‘সাত বছর আগে খালাস পেয়েও জেলে থাকা লাগছে। সাতটা বছর ফাও খাটল। এর কি কোনো সুরহা হবে? ক্ষতিপূরণ তো আর পাওয়া যাবে না।’
কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের বটিয়াঘাটা থানার একটি হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ইব্রাহিম আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে মামলাটি উচ্চ আদালতে গেলে ২০১৭ সালে তিনি খালাস পান। তিনি মোট চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড, বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় যাবজ্জীবন এবং অপর দুটি মামলায় ১০ বছর ও ৭ বছরের সাজা ছিল তাঁর। মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজার মামলায় খালাস পান। আর বাকি দুটি মামলায় সাজাভোগ পূর্ণ হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেও মুক্তির আদেশ না পাওয়ায় তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ইব্রাহিম বলেন, ‘যে মার্ডারের ঘটনার জন্য জীবন থেকে ২১টা বছর চলে গেল, সেখানে আমি জড়িত ছিলাম না। খুন হওয়া ব্যক্তি আমাদের ভাইব্রাদার ছিল। খামাখা সন্দেহে জড়িয়ে গেছি। ওই সময় থেকেই তো কিছু নাই। সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে ছিল। কাজকাম করে খাইতাম। জয়পুর বাজারে নাইটগার্ডের চাকরি করতাম। ভ্যান চালাইতাম। মামলায় নিজে কোনো উকিল দিতে পারিনি। সরকারিভাবে চলছিলাম। তাই হয়তো ভালো ফল পাইনি।’
অন্য মামলাগুলো কীভাবে হলো জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, হত্যা মামলার আরেকটা অংশ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা। পরে সন্দেভাজন হিসেবে আরও দুটো মামলায় নাম দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর ভাষ্য।
জেলে থাকার সময় অন্য একজন কয়েদির সঙ্গে সখ্য হয় ইব্রাহিমের। সেই কয়েদির পরিচিত একজনকে দিয়ে নিম্ন আদালতের রায়ের বিপরীতে উচ্চ আদালতে আপিল করান ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘আমার হয়ে মামলার কাজ করে দেওয়া ওই ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছিলেন আমার খালাস হয়ে গেছে, আমি তাড়াতাড়ি বের হতে পারব। এরপর আমার কাছ থেকে ওকালতনামায় সই করিয়ে নিয়ে যান। কিছুদিন পর শুনি তিনি মারা গেছেন। আমার কাগজপত্র নিয়ে আর তদবির করার তেমন কেউ ছিল না। এর মধ্যে আমাকে খুলনা কারাগারে চালান করা হয়। একসময় শুনি, আমার কাগজপত্র খুলনায় এসেছে। কিন্তু কাগজপত্রের বিষয়ে আর কিছু জানতে পারি না।’
শেষ পর্যন্ত কীভাবে মুক্ত হতে পেরেছেন, সে কথা জানাতে গিয়ে ইব্রাহিম আলী শেখ বলেন, মাস দেড়েক আগে কারাগারে টিভি দেখার সময় একটা হেল্প লাইনের নম্বর দেখে মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের মোবাইলে কথা বলার নির্ধারিত দিন কল করেন তিনি। এরপর তাঁর বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া হয়।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ইব্রাহিমকে খুলনা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। খুলনার জেল সুপার মো.
খালাস পাওয়ার পরও সাত বছর ফাঁসির সেলে থাকার ব্যাপারে খুলনায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ও আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এককথায় এটা অমানবিক। আমরা বলি দেশে আইনের শাসন আছে। অথচ মানুষটা বিচার পেল, কিন্তু বিচারের বাস্তবায়ন বা প্রভাবটা যদি সাত বছর লাগে কার্যকর হতে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে! বিচারের পর সেই রায় কার্যকর হওয়াটা জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশে অনেক সময় এটা হচ্ছে না। বিচারব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা সক্রিয় না থাকলে বিচার পেয়েও যে অনেকে বিচারহীনতায় ভোগে, ইব্রাহিম তার উদাহরণ।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।