রাশিয়ার তেল কেনার জন্য চীনকে শাস্তি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই: ট্রাম্প
Published: 16th, August 2025 GMT
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য চীনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শুক্রবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধে পুতিন রাজি না হলে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার তেল কেনা দেশগুলো ওপর সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন তিনি। চীন এবং ভারত রাশিয়ার তেলের শীর্ষ দুটি ক্রেতা।
আরো পড়ুন:
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে আসেনি যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা
পুতিন যুদ্ধ না থামালে ‘কঠোর পরিণতির’ হুমকি ট্রাম্পের
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
তবে, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে একই রকম পদক্ষেপ নেননি।
শুক্রবার ফক্স নিউজের শন হ্যানিটি ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, আলাস্কায় তিনি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি বৈঠকে বসে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কোনো চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা এখন বিবেচনা করছেন কিনা।
উত্তর ট্রাম্প বলেন, “আমাদের বৈঠক যে ধরনের হয়েছে, তাতে আমার মনে হয়, আমাকে এটি নিয়ে ভাবতে হবে না।”
ট্রাম্প বলেন, “আমাকে হয়তো দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি নিয়ে ভাবতে হবে, কিন্তু আমাদের এখনই এটি নিয়ে ভাবতে হবে না। আমার মনে হয়, আপনি জানেন, বৈঠকটি খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
ট্রাম্প যদি রাশিয়া-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পালন করেন তাহলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ধীরগতির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শি এবং ট্রাম্প একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, যা বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা ও আমদানি শুল্ক কমাতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলে রাশিয়ার বাইরে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে বিদেশে খেলতে যায়’
দারিদ্র্য, সামাজিক বাধা ও চারপাশের কটূ কথা—সবকিছুকে হারিয়ে দিয়েছেন অদম্য ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের ভ্যানচালক বাবার এই মেয়ে এখন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক।
অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের খেলা শেষে লাওস থেকে দেশে ফিরেই এই ফুটবলকন্যা ছুটে এসেছেন জন্মভিটায়। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত বাবা ফারুক ইসলাম। গর্বের সুরে তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে খেলতে যায়।”
সোনালী বেড়ে উঠেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে। বাবা ফারুক ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। মা মেরিনা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সোনালী বড়। অভাবের সংসারে খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়া ছিল দুঃসাধ্য, কিন্তু ফুটবলকে ভালোবেসে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে এসেছেন ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের বাড়ি পর্যন্ত বাবার ভ্যানেই যান তিনি। সোনালী বাড়িতে পা রাখতেই জড়ো হতে থাকেন স্থানীয়রা। মেয়ের সাফল্যে বাবা ফারুক ইসলাম মিষ্টি খাওয়ান সবাইকে।
ফারুক ইসলাম জানান, সম্পদ বলতে তার আছে বসতভিটার ৭ শতক জমি। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান। এই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালালেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণে কখনো পিছপা হননি তিনি। অভাব-অনটনের সংসারে মেয়ের ফুটবল খেলা ছিল একসময় প্রতিবেশীদের কটাক্ষের কারণ। বাঁকা চোখে তাকাতেন গ্রামের মানুষজন, শোনাতেন কটূ কথা। তবে, কোনো বাধাই সোনালীর মনোবল ভাঙতে পারেনি।
সোনালীর বয়স এখন ১৮ বছর। ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয় স্থানীয় গইচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়। সেখান থেকেই অংশ নেন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। পরে ভর্তি হন হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের হয়ে অংশ নেন আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে। তখনই পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমিতে শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন।
২০২৩ সালে তার ফুটবল প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ সুযোগ মেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হওয়ার। বর্তমানে তিনি নবম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি বিকেএসপিতে গোলরক্ষক হিসেবে কঠোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ফেরদৌসি আক্তার সোনালী বলেছেন, “বিকেএসপিতে পড়াকালীন বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ মেলে। এরপর সিনিয়র টিমের সঙ্গে জর্ডানে খেলতে যাই। সেখানে বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হই আমরা। সর্বশেষ এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে লাওসে খেলতে যাই। সেখানে রানার্স-আপ হয়েছি।”
বাবা ফারুক ইসলাম বলেন, “ছোটবেলা থেকেই সোনালীর ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল। অনেকেই নানা কথা বলত। আমার মেয়ে এসবে পাত্তা দিত না। অনেক সময় আমিও নিষেধ করতাম। তারপরও সে ফুটবল নিয়েই পড়ে থাকত। টানাপোড়নের সংসারে তাকে সেভাবে সাপোর্ট দিতে পারিনি। খেয়ে না খেয়ে অনুশীলনে যেত সোনালী। আজ আমার মেয়ে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে, দেশের হয়ে বিদেশে খেলছে— এটা আমার গর্ব।”
সোনালীর মা মেরিনা বেগম বলেছেন, “ফুটবল খেলে আমার মেয়ে অনেক পুরস্কার এনেছে। তার স্বপ্ন ছিল ফুটবলে ভালো কিছু করার। অনেক কষ্ট করে মেয়ে অনুশীলনে যেত। অনেক সময় টাকার অভাবে অনুশীলনে যেতে পারত না। মাঝে-মধ্যে আমরা নিষেধও করেছি, কিন্তু শোনেনি। এখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, সোনালী দেশের ফুটবলকে ভালো কিছু উপহার দেবে।”
সোনালী অনুশীলন করতেন পঞ্চগড় টুকু ফুটবল একাডেমিতে। একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেছেন, “সোনালী দারুন সম্ভাবনাময় মেয়ে। ফুটবলে সফলতা পেতে অনেক কষ্ট করেছে সে। আমি তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম। সে আমার আশা পূর্ণ করেছে। সোনালীর মতো আরো অনেকেই এভাবে উঠে আসুক, এই প্রত্যাশা আমার।”
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেছেন, “আমাদের ইউনিয়নের মেয়ে ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলার আমাদেরও গর্বের। আমরা তার সাফল্য কামনা করি। সোনালী এবং তার দরিদ্র পরিবারের প্রতি প্রশাসন যেন সুদৃষ্টি রাখে, সে অনুরোধ জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, জাতীয় নারী ফুটবল দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগমেরও বাড়ি পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। তারা দুজন পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। ইয়ারজানও অনুশীলন করেছেন টুকু ফুটবল একাডেমিতে।
ঢাকা/রফিক