বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের এক অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি।

ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের ওই অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সিএনএনের সাংবাদিক বেকি অ্যান্ডারসন। সেখানে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময়–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব—সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে।’

অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকটি অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং দেশ, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা। এগুলো শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের সময় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশ পুনর্গঠন করতে গিয়ে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ প্রশাসন, সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলাদা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে এই কমিশনগুলো। আমাদের একটি কমিশন রয়েছে, যাকে আমরা ঐকমত্য-গঠন কমিশন বলছি। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাব এবং দেখব কোন কোন সুপারিশের বিষয়ে সবাই একমত, যেন আমরা সেটিকে (ঐকমত্য) একটি সনদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি এবং তারপর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন করতে পারি।’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের কারণে তিনি খুবই স্বস্তি বোধ করছেন। হত্যা, গুম, টর্চার চেম্বার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কীভাবে শিক্ষার্থীদের গুলি করা হয়েছে—সবকিছু স্পষ্টভাবে এই প্রতিবেদনে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এখন আর বিশ্বের কাছে গিয়ে বলতে হবে না যে এগুলো বানোয়াট নয়। এ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু 
  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল
  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’