ফেনীতে পিকআপে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা, নিহত বেড়ে ৬
Published: 17th, February 2025 GMT
ফেনীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পিকআপ ভ্যানের আরো এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন তারই এক স্বজন। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া হাফেজিয়া মাদরাসা এলাকার ঢাকামুখী লেনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলে পাঁচজন শ্রমিক মারা যান।
মারা যাওয়া শ্রমিকরা হলেন- ভোলা জেলার মনপুরা থানার হাজীরহাট এলাকার মো.
আরো পড়ুন:
পিকআপকে ধাক্কা দিল কাভার্ড ভ্যান, নিহত ৫
পদ্মা সেতুতে বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেল অ্যাম্বুলেন্স, আহত ৫
নিহতদের মধ্যে মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন।
আহতরা হলেন- জাহাঙ্গীর (৩০), মনির (৪০), সবুজ (২৫) ও নাগর মাঝি (৪০)। তারা সবাই ভোলা জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্মাণ শ্রমিকদের (রাজমিস্ত্রি) বহন করা একটি পিকআপ ভ্যান ফেনীর দিকে যাচ্ছিল। মহাসড়কের দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া হাফেজি মাদরাসা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হন। স্থানীয়রা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহত মহিউদ্দিনের চাচা শশুর হানিফ মিয়া বলেন, “গুরুতর আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মহিউদ্দিন মারা যান।”
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নুর উদ্দিন নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, “সহদেবপুর এলাকার সবুজের সঙ্গে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যায় আমরা ঙ৮জন শ্রমিক। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ফেনীর লেমুয়ায় এলাকায় আমাদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানটি হঠাৎ করে থেমে যায়। এসময় পেছন থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান আমাদের গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়। গাড়িতে থাকা শ্রমিকরা বিভিন্ন দিকে ছিটকে পড়ে। তখন কাভার্ড ভ্যানটি অনেককে চাপা দিয়ে দ্রুত চলে যায়।”
সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক শফিউল আলম ডালিম বলেন, “যাত্রী নামিয়ে ফেনীর দিকে যাচ্ছিলাম। লেমুয়া এলাকার হাফেজিয়া মাদরাসার সামনে একটি পিকআপ ভ্যান উল্টে থাকতে দেখে থেমে দেখি, অন্তত ৫ জন শ্রমিক মৃত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন। ৬-৭ জনের মতো আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন। আমি আমার গাড়িতে করে দুইজনকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা কাওছার বলেন, “বিকট আওয়াজ শুনে বাড়ি থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে এসে দেখি পিকআপ ভ্যানটি আইল্যান্ডের ওপর পড়ে আছে। গাড়ির আশেপাশে আহতরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছেন।”
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. সাইদুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনায় আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
বোগদাদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে হাইওয়ে থানার পুলিশসহ আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা কয়েকজনকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কাভার্ড ভ্যানের চালক পালিয়ে গেছেন। এখন মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের একপাশে যানচলাচল করছে।”
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন আহত প কআপ ভ য ন এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।