পিকআপ ভ্যানে করে বারে নেওয়া হচ্ছিল বিদেশি মদ, ধাওয়া দিয়ে ধরল র্যাব
Published: 24th, February 2025 GMT
পিকআপ ভ্যানে করে বিদেশি মদ ঢাকার একটি অভিজাত বারে যাচ্ছিল, পথে র্যাবের তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) দেখতে পান চালক। সেখানে পিকআপ না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে চেকপোস্ট এলাকা ত্যাগ করে পিকআপ ভ্যানটি। পিছু নেয় র্যাব। চেকপোস্ট থেকে বেশ কিছু দূরে ধরা হয় পিকআপভ্যান ও চালককে।
আটক পিকআপ ভ্যানের চালকের নাম মো. ইয়াছিন (২৬)। তিনি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সমুসচূড়া গ্রামের মো.
র্যাব জানায়, ময়মনসিংহ সদরের শম্ভুগঞ্জের রঘুরামপুর টানপাড়া চালতাগাছ মাঠসংলগ্ন এলাকায় গতকাল রোববার রাতে তল্লাশিচৌকি বসায় র্যাব-১৪। শেরপুর ও নেত্রকোনা থেকে আসা বিভিন্ন যানবাহনে র্যাব সদস্যরা তল্লাশি চালাতে থাকেন। দিবাগত রাত একটার দিকে শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাগামী একটি পিকআপ ভ্যান র্যাবের তল্লাশিচৌকিতে না থেমে বেপরোয়া গতিতে অতিক্রম করে। ওই সময় র্যাব-১৪ সিপিএসসি কোম্পানি কমান্ডার মো. সামসুজ্জামান পিকআপ ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ির গতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় পিকআপ ভ্যানের গতি কিছুটা ধীর হওয়ার সুযোগে র্যাবের এক সদস্য পিকআপ ভ্যানে উঠে পড়েন। নেত্রকোনা সড়কে চলতে থাকা পিকআপ ভ্যানটিকে পেছন থেকে ধাওয়া করে র্যাবের অপর দল। কিছু দূর যাওয়ার পর পিকআপ ভ্যানটি থামিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে চালককে আটক ও পিকআপ ভ্যানটি জব্দ করে র্যাব। তবে পিকআপে থাকা অপর সদস্য পালিয়ে যান। এ সময় পিকআপ থেকে ২৫৩ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
কোম্পানি কমান্ডার মো. সামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত থেকে অবৈধভাবে মদ এনে ঢাকার বিভিন্ন বারে সরবরাহ করছিল চক্রটি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তল্লাশির জন্য সড়কে অবস্থান করেন র্যাব সদস্যরা। ওই সময় আমাদের চাপা দিয়ে গাড়িটি চালিয়ে যেতে চেষ্টা করলে ধাওয়া দিয়ে ধরা হয়। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এ কাজ করছিল। চক্রের মূল ব্যক্তি পালিয়ে গেছে, পিকআপ ভ্যানের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প কআপ ভ য ন র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
জমিসংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় সালিশ ডেকে আল-আমিন (২৮) নামে এক যুবককে আটকের পর নগরীর কেওয়াটখালীতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর মা আনোয়ারা বেগম।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন তিনি।
আল-আমিন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির সন্তান। ২০২১ সাল থেকে জমি নিয়ে আনোয়ারা বেগম ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে আনোয়ারা বেগমের অভিযোগ।
আনোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২১ সালে বলাশপুরে স্বামীর পেনশনের টাকায় তিনি জমি কেনেন। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক জমিতে প্রাচীর দেন মনিরুজ্জামান। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা দেন মনিরুজ্জামান।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনিরুজ্জামান কোতোয়ালি মডেল থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম থানায় উভয় পক্ষকে ডাকেন।’’
‘‘শনিবার (২৬ জুলাই) রাত আটটায় থানার মধ্যেই দরবার শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। দরবারে যখন জমির কাগজপত্র আমাদেরগুলো ঠিক প্রমাণিত হয় তখন ওসি আল-আমিনকে তার রুমে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পিছন পিছন আমি গিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। এরপর আল-আমিনকে লকাপে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেন। ছেলে রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাকে জেল পাঠানো হয়েছে।’’ বলে অভিযোগ করেন আনোয়ারা বেগম।
আনোয়ারা বেগম এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেছি। আল-আমিন ক্রোকারিজের ব্যবসা করে পুরো সংসার চালায়। রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সে জড়িত নয়। অথচ ওসি তাকে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মনিরুজ্জামানের টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে গেছি। এই দেশে কোনো বিচার নাই। আমার ছেলে যদি মুক্তি না পায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সে বিপথে গেলে পুলিশ, সমাজ এবং রাষ্ট্র এ জন্য দায়ী থাকবে।’’
‘‘ওসি সালিশের এক পর্যায়ে প্রভাবিত হয়ে আল-আমিনকে সালিশ থেকে আটক করে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। এ সময় হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি,’’ উল্লেখ করে আনোয়ারা বেগম কড়জোরে ঘটনার সঠিক বিচারের পাশাপাশি আল-আমিনের মুক্তি দাবি করেন।
এ দিকে আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫মিনিটে পুলিশের টহল টিম আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড়ে একদল সন্ত্রাসী রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাংচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা করছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরো, ২৫টি কাচের টুকরো জব্দ করে। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল-আমিন যুবলীগ করে। কারণ যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার ছবি রয়েছে।’’
আল-আমিনকে থানায় সালিশ ডেকে পরে আটক করা হয়েছে কিন্তু মামলায় দেখানো হয়েছে তাকে কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘‘এ
বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবে।’’
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘‘আল-আমিনের মা ছেলের মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমি শুনেছি। তার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মিলন//