নানা স্বাস্থ্য-উপকারিতা ও পুষ্টিগুণের জন্য বর্তমানে অর্গানিক চিয়া সিডস বেশ সমাদৃত। স্বাস্থ্য ভালো এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজকাল অনেকেই বেছে নেন চিয়া সিডসের মতো পুষ্টিকর সুপারফুডগুলো। আর মধুর উপকারিতা তো অনেক প্রাচীন। চিনির বিকল্প হিসেবে বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে মধু। এতে একই সঙ্গে খাবারে প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টতা বাড়ে এবং পাওয়া যায় অনেক উপকারিতা। মধুতে প্রায় ৪৫টির মতো পুষ্টি-উপাদান থাকে। সেগুলোর মধ্যে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সুক্রোজ, মন্টোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, খনিজ লবণ অন্যতম।

অন্যদিকে আঁশজাতীয় খাবার হিসেবে অর্গানিক চিয়া সিডসের কোনো জুড়ি নেই বললেই চলে। পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহানের মতে, অর্গানিক চিয়া সিডে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ওমেগা-৩, ওমেগা-৬, প্রোটিন ও শর্করা রয়েছে, তাই রমজানে এটি অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এটি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে এবং শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। রমজানে মধু খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং এর গুণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইসরাত জাহান বলেন, ‘মধু তাৎক্ষণিক শক্তি উৎপাদনে সহায়ক। আর হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করতেও রমজানে মধুর কোনো বিকল্প নেই। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।’ তাই রমজানে খাবারের তালিকায় স্বাস্থ্যকর কিছু যোগ করতে চাইলে নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন মধু ও চিয়া সিডস। জানা যাক, মধু এবং চিয়া সিডসের কিছু স্বাস্থ্য-উপকারিতা সম্পর্কে।

মধু নিয়ে ‘মধুর কথা’

পানিশূন্যতা দূর করতে মধুর কোনো জুড়ি নেই। সেই সঙ্গে মধু একটি চমৎকার শক্তিপ্রদায়ী খাদ্য। এটি তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। হজমের সমস্যা দূর করতেও মধু বেশ কার্যকর। ইফতারের পর অনেকের দেখা যায় পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। কিন্তু সারা দিনের সব ক্লান্তি দূর করতে এই সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। অনিদ্রা এড়াতে মধু অত্যন্ত কার্যকর। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ঘুম ভালো হয়। সারা দিনের সব চাপ থেকে প্রশান্তি পেতেও মধুর সাহায্যে বানিয়ে নিতে পারেন প্রশান্তিদায়ক পানীয়। এর জন্য বেশি কিছুর দরকার নেই। এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এ ছাড়া এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। তাই যাঁদের রক্তশূন্যতাজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁদের জন্য মধু বেশ উপকারী। সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েও পান করা যেতে পারে মধু।

অর্গানিক চিয়া সিডসের যত গুণ

রমজানে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে শক্তির ঘাটতি, হজমজনিত সমস্যা এবং পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যা দূর করতে চিয়া সিডস হতে পারে একটি কার্যকরী সমাধান। অর্গানিক চিয়া সিডসের রয়েছে অসাধারণ পানিশোষণ ক্ষমতা। এটি শরীরে দীর্ঘসময় পানি ধরে রেখে আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া চিয়া সিডস প্রোটিন, ফাইবার ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় দীর্ঘসময় শক্তি ধরে রাখতেও বেশ কার্যকর। সেই সঙ্গে উচ্চমাত্রার ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্লত্ব দূর করতে ইফতার ও সাহ্‌রিতে রাখা যেতে পারে চিয়া সিডস। রমজানে অনিয়মিত খাবারের কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তবে অর্গানিক চিয়া সিডস খেলে এটি অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের প্রবণতা কমায়। শুধু তা-ই নয়, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে চিয়া সিডস।

রোজায় মধু ও চিয়া সিডস কীভাবে খাবেন

সাহ্‌রিতে এক গ্লাস পানির সঙ্গে চিয়া সিডস ভিজিয়ে রেখে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি সারা দিন শরীরকে উজ্জীবিত রাখবে। ইফতারে শরবত বা ফলের জুসের সঙ্গে মধু ও অর্গানিক চিয়া সিডস মিশিয়ে খেতে পারেন, যা শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। এ ছাড়া কলা, দই, মধু ও চিয়া সিডস মিশিয়ে তৈরি স্মুদি ইফতারে পান করতে পারেন।

খেয়াল রাখা জরুরি, অর্গানিক চিয়া সিডস ও মধু যেন ভালো মানের হয়। সব জায়গায় কিন্তু প্রাকৃতিক মধু ও ভালো মানের অর্গানিক চিয়া সিডস পাওয়া যায় না। তবে ঘরের বাজারের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই বিভিন্ন রকমের সামগ্রীর সঙ্গে পেয়ে যাবেন ইউএসডিএ সার্টিফায়েড চিয়া সিডস এবং প্রাকৃতিক মধু।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স হ য য কর উপক র ত ক র যকর দ র করত ইফত র রমজ ন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ