শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। তাকে স্বয়ং ভগবান এবং বিষ্ণুর পূর্ণাবতারও মনে করা হয়। গীতায় বলা হয়েছে যে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সজ্জনের রক্ষার জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে তার আগমন ঘটে। পৃথিবীর ভারমোচন তার প্রাথমিক দায়িত্ব হলেও একজন মর্তজীবী মানুষ হিসেবে রাজনীতি, সমাজ, সংসার ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তাকে কর্তব্য পালন করতে দেখা যায়। কৃষ্ণের উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় বৈদিক সাহিত্যে।
ঋগ্বেদে একাধিকবার কৃষ্ণের উল্লেখ আছে। সেখানে তিনি ইন্দ্রবিরোধী একজন অনার্য যোদ্ধা হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। কোথাও তাকে ঋষি, এমনকি অসুরও বলা হয়েছে। ছান্দোগ্যোপনিষদ্ এবং কৌষিতকীব্রাহ্মণে কৃষ্ণকে দেবকীপুত্র বলা হয়েছে। তার গুরু ছিলেন ঘোর-আঙ্গিরস।
কারও কারও মতে, ‘‘এই কৃষ্ণই পৌরাণিক যুগে বাসুদেব কৃষ্ণে পরিণত হয়েছেন।’’ পুরুষের মধ্যে উত্তম যিনি, তিনিই পুরুষোত্তম। শ্রীকৃষ্ণকে পুরুষোত্তম বলা হয়। পুরুষোত্তম তত্ত্বে তিন পুরুষের কথা বলা হয়েছে—ক্ষর পুরুষ, অক্ষর পুরুষ ও উত্তম পুরুষ বা পুরুষোত্তম।
আরো পড়ুন:
খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী, নয়াপল্টনের কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল
আজ হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘‘ক্ষর পুরুষ সর্বভূত, অক্ষর কূটস্থ পুরুষ, আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর থেকেও উত্তম, এই জন্যই আমি পুরুষোত্তম।’ ’
শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা পুরুষোত্তম শব্দের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শ্রীঅরবিন্দের ব্যাখ্যা হলো, ক্ষর হচ্ছে সচল পরিণাম—আত্মার বহুভূত বহুরূপে যে পরিণাম, তাকেই ক্ষর পুরুষ বলা হচ্ছে। এখানে পুরুষ বলতে ভগবানের বহুরূপ বুঝিয়েছেন—পুরুষ এই প্রকৃতি থেকে আলাদা নয়, প্রকৃতির অন্তর্গত। অক্ষর হচ্ছে অচল, অপরিণামী, নীরব, নিষ্ক্রিয় পুরুষ—এটা ভগবানের এক রূপ, প্রকৃতির সাক্ষী; কিন্তু প্রকৃতি ও তার কাজ থেকে এই পুরুষ মুক্ত।
পরমেশ্বর, পরব্রহ্ম, পরম পুরুষই উত্তম, পরিণামী বহুত্ব ও অপরিণামী একত্ব—এই দুই-ই উত্তমের। তার প্রকৃতির, তার শক্তির বিরাট ক্রিয়ার বলে, তার ইচ্ছা ও প্রভাবের বশেই তিনি নিজেকে সংসারে ব্যক্ত করেছেন। আবার আরও মহান নীরবতার দ্বারা নিজেকে স্বতন্ত্র নির্লিপ্ত রেখেছেন।
গীতায় পুরুষোত্তম যেমন সম, শান্ত, নির্গুণ, অনন্ত, অখিল আত্মা, আবার তিনিই গুণপালক, গুণধারক, প্রকৃতি বা কর্মের প্রেরয়িতা, যজ্ঞ তপস্যার ভোক্তা, সর্বলোক মহেশ্বর।
সুতরাং সর্বভূতাত্মৈক্য-জ্ঞানই পুরুষোত্তম-জ্ঞান, সর্বভূতে ভালোবাসাও সর্বশরণে আত্মসমর্পণই পুরুষোত্তমে ভক্তি এবং সর্বলোক সংগ্রহার্থ নিষ্কাম কর্ম পুরুষোত্তমেরই কর্ম—এই জ্ঞান, ভক্তি ও কর্মের মিলন দিয়ে আত্মা সর্বোচ্চ ঐশ্বরিক অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হয়, যিনি একই কালে অনন্ত-আধ্যাত্মিক শান্তি এবং অনন্ত বিশ্বব্যাপী কর্ম উভয়েরই অধীশ্বর, সেই পুরুষোত্তমের মধ্যে বাস করেন। প্রেম আর বিরহের চিরন্তন রূপ নিয়ে যে কয়টি উপাখ্যান বিশ্বসাহিত্যে অমরত্ব লাভ করেছে, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী তার মধ্যে অন্যতম। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বিশাল একটি জায়গা দখল করে আছে এই প্রেমকাহিনী। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য দিয়ে শুরু, তারপর অজস্র পদাবলী রচিত হয়েছে এ প্রেমকাহিনী নিয়ে। এমনকি রাধা-কৃষ্ণের এ প্রণয়লীলা থেকে উদ্ভব হয়েছিল আলাদা ধর্ম-দর্শন। উদ্ভব ঘটেছিল বৈষ্ণব ধর্মমত ও সাহিত্য। এসব সাহিত্য বোষ্টমীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে পড়ে শোনাত সাধারণ মানুষদের। প্রাচীনতম বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন পাই চর্যাপদে, দশম শতাব্দীতে।
বাংলা সাহিত্যের পরবর্তী নিদর্শন পাওয়া যাবে বড়ু চণ্ডীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এ, যা রচিত হয়েছিল দ্বাদশ শতাব্দীতে। বাংলা ভাষায় শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে সুদীর্ঘ একটি কাব্য রচিত হয়েছিল, এতে শ্রীকৃষ্ণের জনপ্রিয়তা বাঙালির মধ্যে যে কতখানি ছিল, তা বোঝা যায়। তবে এ গ্রন্থেরও আগে বাঙালি কবি জয়দেব রাধাকৃষ্ণকে নিয়ে ‘গীতগোবিন্দ’ রচনা করেন, যার ভাষা ছিল সংস্কৃত। এ সবেরই উপজীব্য ছিল রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনি, যা মূলত ভগবত পুরাণবাহিত। বড়ু চণ্ডীদাসের রচনা আধুনিক যুগেও আমাদের হূদয়ে আবেদন সঞ্চারী। রাধা গৃহে রন্ধনকাজে ব্যস্ত, এমন সময় শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি শুনে রাধার আকুল উচ্চারণ ‘কে না বাঁশি বায় (বাজায়) .
বৈষ্ণবধর্ম অতি প্রাচীন হলেও ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলাদেশে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব ও বৈষ্ণবধর্ম প্রচার কেবল বাংলায় নয়, উড়িষ্যা ও উত্তর ভারতেও ব্যাপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে রাধাকৃষ্ণকেন্দ্রিক সাহিত্য, যাকে বৈষ্ণব পদাবলী বলে, তা প্রবল গতিময়তা লাভ করে।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ই প র ষ ত তম প রক ত পর ণ ম ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে