Samakal:
2025-09-18@04:52:22 GMT

লভ্যাংশ আয়ে ফের করারোপ কেন

Published: 21st, March 2025 GMT

লভ্যাংশ আয়ে ফের করারোপ কেন

কর-রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য সব সময়ই একটা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। ফি বছর সরকারের বিশাল বাজেট অর্থায়নে কর আদায়ের বাড়তি চাপ তো থাকেই, তার ওপর উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো থেকে বাজেট ও প্রকল্প অর্থায়ন সহায়তা পেতে সরকারকে কর আদায় বাড়ানোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এ শর্ত বাস্তবায়নে চাপ ও দায় কার্যত পড়ে এনবিআরের ঘাড়ে।
এ ছাড়া অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় কর-জিডিপি অনুপাত এবং প্রত্যক্ষ কর আদায় বিশ্বের সর্বনিম্নে বাংলাদেশ। যদিও যে জিডিপি বিবেচনায় কর আদায় কম বলা হয়, সেই জিডিপি যে বিগত সরকারের সময়ের ত্রুটিপূর্ণ পরিসংখ্যানের ওপর গড়া, তা কেউ বিবেচনায় নেয় না।
সরকার, উন্নয়ন সহযোগী বা গবেষণা সংস্থাগুলো যখন বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে চাপ বাড়ায় এনবিআরের ওপর, তেমনি এনবিআরও সেই চাপ যারা কর দেন, সেই করদাতাদের ওপর চাপিয়ে দেয়।
বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চাপ সামলাতে গিয়ে নতুন বা উদ্ভাবনী পথে না গিয়ে সব সময় প্রথাগত রাস্তায় হাঁটে এনবিআর। সংস্থাটির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বহু পুরোনো। যারা কর দেয়, তাদের করের ওপর দ্বৈত করও আদায় করছে, কখনও একই আয়ে তিনবারও কর নিচ্ছে। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ লভ্যাংশ আয়ে কর কর্তন।

লভ্যাংশ আয়ে কর
কোনো কোম্পানি যখন শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে, তখন ওই লভ্যাংশের ওপর বর্তমানে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। শেয়ারহোল্ডারের যদি করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন কোম্পানির কাছে থাকে, তাহলে লভ্যাংশ বিতরণের সময় উৎসে ১০ শতাংশ কর কর্তন করে এনবিআরকে দেওয়ার নির্দেশ আছে। যদি টিআইএন নম্বর না থাকে, তাহলে উৎসে কর কর্তন করা হয় ১৫ শতাংশ।
শেয়ারহোল্ডারদের করপোরেট বা কোনো প্রতিষ্ঠান হলে সে ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ কর্তন করা হয়। এর পর ব্যক্তি যখন আয়বর্ষ শেষে আয়কর রিটার্ন জমা দেন, তখন মোট আয় বেশি হলে প্রযোজ্য হারে উচ্চ করও দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন অর্থ সমন্বয়ের সুযোগ আছে।
কিন্তু এই যে ব্যক্তির লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর কর্তন করা হয়েছে, তা তার বিনিয়োগ করা কোম্পানির কর-পরবর্তী আয় থেকে পাওয়া। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডারের কোম্পানি যে আয়ের ওপর সরকারকে কর দিয়েছে, সেই টাকার ওপর ফের কর বসানো হচ্ছে। এখন শেয়ারহোল্ডার কোম্পানি না হয়ে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি হলে, তাকেও এটাকে আয় ধরে কর দিতে হবে। আবার এই প্রতিষ্ঠান যখন এর ব্যক্তিমালিককে লভ্যাংশ আকারে কর দিতে যায়, তখনও কর দিতে হয়। এভাবে করের চক্রের চাপে পড়েন বিনিয়োগকারী।
এই কর চাপের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ছাড়া বেসরকারি খাতের অতালিকাভুক্ত লাখ লাখ কোম্পানির কোনোটিই শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করে না। মালিকরা নানা প্রক্রিয়ায় কোম্পানির পদে থেকে বেতন-ভাতাসহ নানা খাত বের করে প্রয়োজনীয় অর্থ বের করে নেয়।

একই আয়ে দ্বৈত কর
লভ্যাংশ আয়ে কর কর্তন প্রথা দ্বৈত কর ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্য দেশেও এ ধরনের কর আদায় হয়। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য এ ধরনের আয়ে কর ধার্য না করার বা কম হারে কর ধার্য করার বহু উদাহরণও আছে বহু দেশে।
প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশে লভ্যাংশ আয়ে কর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংয়ে লভ্যাংশ আয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো কর নেই, কারণ কোম্পানির পর্যায়ে ইতোমধ্যে কর প্রদান করা হয়েছে। এসব দেশের শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ হয়। সেই বিনিয়োগে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়ে, সরকারও বেশি রাজস্ব পায়। বাংলাদেশে এর উল্টো।
আবার পাকিস্তানে লভ্যাংশ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর আদায় করা হয়। এটাই এ আয়ে চূড়ান্ত কর। অর্থাৎ পরে শেয়ারহোল্ডারের অন্যান্য আয়ের সঙ্গে এই আয়কে একীভূত করে প্রযোজ্য হারে কর আদায় করা হয় না। নেপালে লভ্যাংশ আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যা চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য হয়। ভুটানে লভ্যাংশ আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়। ২০২০ সালের আগে, ভারতে কোম্পানি লভ্যাংশ বিতরণ করার সময় ‘ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স’ প্রদান করত, যা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য করমুক্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে লভ্যাংশ আয়কে ‘কোয়ালিফায়েড’ ও ‘নন-কোয়ালিফায়েড’ দুই ভাগে ভাগ করা হয় এবং করহার ০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ বা ২০ শতাংশ হতে পারে। যুক্তরাজ্যে ব্যক্তির কর ক্যাটেগরির ওপর নির্ভর করে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করা হয়।

দ্বৈত করে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত
বাংলাদেশে কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া লভ্যাংশের ওপর ফের কর আরোপ করা হয়। এর ফলে একই আয়ের ওপর দু’বার কর পরিশোধ করতে হয়– একবার কোম্পানির লাভের ওপর এবং পরবর্তী সময়ে শেয়ারহোল্ডারের লভ্যাংশ আয়ের ওপর। এতে বিনিয়োগকারীদের মোট লভ্যাংশ আয়ের প্রকৃত পরিমাণ কমে যায় এবং বাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ হ্রাস পায়।

বাজেট বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন নেই
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় দ্বৈত কর পরিহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি তা বাস্তবায়ন করেননি, এনবিআরও সে পথে কখনও হাঁটেনি। অতিরিক্ত কর আরোপ করা হলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যেতে পারে, যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মকাণ্ড শ্লথ হয় এবং সরকার সম্ভাব্য কর রাজস্ব হারায়।

দ্বৈত কর পরিহার কেন গুরুত্বপূর্ণ
দ্বৈত করের বোঝা থাকলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হন। এটি বাজারের গভীরতা বাড়ানোর জন্য একটি বাধা।
এ ছাড়া কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়লে সরকার বেশি কর রাজস্ব পেতে পারে, যা দ্বৈত কর তুলে দিলে আরও বেশি সহায়ক হবে। শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। লভ্যাংশ করহীন হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। 
আবার বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনও তুলনামূলক ছোট এবং অর্থনীতিতে পুঁজি সরবরাহের প্রধান উৎস হয়ে ওঠেনি। বড় ও সমৃদ্ধিশালী অর্থনীতি গড়ার ক্ষেত্রে যা বড় প্রতিবন্ধক, এটা সরকারও স্বীকার করছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের জন্য উৎসাহমূলক করনীতি ও প্রণোদনা দরকার। সবার আগে দরকার দ্বৈত করনীতি পরিহার করা।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনও উন্নয়নশীল পর্যায়ে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারের গভীরতা বাড়াতে হলে দ্বৈত কর পরিহার করা জরুরি। প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের তুলনায় করনীতি আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। সরকারের উচিত শেয়ারবাজার উন্নয়নে কার্যকর নীতি গ্রহণ করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা নির্ভয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আয়কর শ য় রব জ র দ ব ত কর পর হ র পর য য় র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ