দল বেঁধে বেড়ানোর যে উৎসব ছিল, তা আর নেই, কী কঠিন বড় হওয়াটা
Published: 1st, April 2025 GMT
তখন অনেক ছোট ছিলাম। আব্বা ঈদের দিনে আমাদের নিয়ে মসজিদে যেতেন। আব্বার আঙুল ধরে হাঁটতাম। মসজিদের কাছাকাছি যখন যেতাম, তখন দেখতাম সেখানে লেখা থাকত—‘সামনে মসজিদ, আস্তে চলুন’।
ছোটবেলার এই লেখাগুলো মনে যে দারুণ আলোড়ন তুলত, প্রাপ্তবয়সে সে আবেদন অনেকখানি গেল কমে। কিন্তু গেঁথে আছে যাপিত জীবনে একটা সুখের নদী হয়ে। একা হলে এই নদীগুলোতে ঝাঁপ দিই, শিহরিত হই। কম্পন জাগে, চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে আসে। আমি ফেলে এসেছি আমার সেই সব দিনরাত্রি। আমার ঈদ উৎসবে আজ একা হয়ে যাই। অথচ ছোটবেলায় দল বেঁধে বেড়ানোর যে উৎসব ছিল, তা আর নেই। কী কঠিন বড় হওয়াটা!
ছোটবেলায় ঈদে নতুন কাপড় আনলে লুকিয়ে রাখতাম কাঠের দেরাজ, নয়তো স্টিলের আলমারিতে। নতুন কাপড় দেখার জন্য চাচাতো বোনদের সে কী উঁকিঝুঁকি! কিন্তু কিছুতেই কাপড় দেখাতাম না, যদি ঈদ চলে যায়! যদি কাপড়টা পুরোনো হয়ে যায়! আহ, নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ! সময়ের স্রোতে সেই ঘ্রাণটা যেন এখন বদলে গেছে।
আমাদের আব্বা-চাচা মিলে যৌথ পরিবার ছিল। নামাজ শেষ করে সব চাচাতো-মামাতো ভাই আসতেন আব্বা-আম্মাকে সালাম করার জন্য। সালাম শেষে যা পিঠা বানানো হতো, তাই পরিবেশন করা হতো। তার মধ্যে বকফুল মানে সিলেটি ভাষায় ‘নাইকোল পিঠা’ বলা হতো, তারপর লুচি, হান্দেশ, গ্লাসকাটা (কেউ বলেন নুনগড়া), সেমাই, হালুয়া ইত্যাদি নানা জাতের খাবার থাকত।
দুপুরে বড় ডেকচিতে রান্না হতো কোর্মা, পোলাও, মাংস ভুনা। রুটি দিয়ে আমরা মাংস খেতাম। চালের রুটি। এখন বড়বেলায় পিঠা তেমন একটা করি না। আমার ছোট সংসারে পিঠার বালাই নেই। রান্নাও ছোট সস প্যানে, ফ্রাই প্যানে। সেমাই এখন আর খেতে পারি না, তাই বানাইও না। আগে মা-চাচি-বোনেরা মিলে বাড়িতে একসঙ্গে পিঠা বানাতেন। বানানো পিঠাগুলো রাখতেন রসুইঘরের শিকেতে ঝুলিয়ে, যাতে বিড়াল আর আমাদের মতো কিছু দস্যির হাত থেকে রক্ষা পায়।
মাসুদা সিদ্দিকা রুহী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।