মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সর্ব ব্যাপক এই শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় সবাই কোমর বেঁধে নেমেছে। অনেক দেশ আবার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে, যে কারণে তাদের ওপর শুল্কের খড়্গ অতটা মারাত্মক হয়নি। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে তারা ইতিমধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

ট্রাম্পের এই শুল্কযুদ্ধের মূল লক্ষ্য চীন। চীনের উত্থান ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক রকম মরিয়া। সেই সঙ্গে দেশটির বিপুলসংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করেন, চীনের কারণে তাদের বর্তমান দুর্গতি—কারখানা স্থানান্তর হওয়া, ভালো চাকরি হারানো—সব মিলিয়ে মার্কিনরা ভালো অবস্থায় নেই। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্বের সব দেশ এত দিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে; এখন থেকে তা আর হতে দেওয়া হবে না। ফলে ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশর পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে সেই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। দেখে নেওয়া যাক, বড় দেশগুলোর মধ্যে কারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে—

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে এবং সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন—যারা ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে—পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উরসুলা আরও বলেছেন, এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে নিত্যপণ্য, পরিবহন ও ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। এতে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি আছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। শুল্কারোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইইউ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রয়োজনে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে কথা বলে না। গত মার্চ মাসে ইইউর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে মার্কিন শুল্ক আরোপের জবাবে তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

এবার যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের জবাবে ইউরোপ শক্ত অবস্থানেই আছে। আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। সেই ভাষণে পাল্টা পদক্ষেপের রূপরেখা থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে শুল্কমুক্ত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার ইতালির ফ্লোরেন্সে কট্টর ডানপন্থী দল লিগ পার্টি আয়োজিত ভিডিও সম্মেলনে যুক্ত হয়ে ইলন মাস্ক এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা দূর করার পক্ষেও অবস্থান জানিয়েছেন তিনি।

চীন

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের জবাবে এবার প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে চীন। অনেকটা ইটের বদলে পাটকেল মারার ঢঙে ব্যবস্থা নিয়েছে চীন।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ১০ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঁচামালের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দেশটি।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, তা ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়’। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নতুন করে ১৬টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য চীনের বাজার ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারে বিধিনিষেধ আরও বাড়বে।

যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনের ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, নিজ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ‘শুল্ক-ঝড়’ থেকে রক্ষা করার জন্য নতুন শিল্পনীতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত তিনি। পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তির চেষ্টাও চালিয়ে যাবেন তিনি। স্টারমারের মতে, ‘আমরা বিশ্বাস করি না, বাণিজ্যযুদ্ধই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।’

স্টারমার মনে করেন, ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা বাড়বে। যদিও অনেকেই ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে ‘শাপে বর’ দেখছেন। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জোর দেবে। একই সঙ্গে তারা অর্থনৈতিক সংস্কারের পথেও হাঁটবে।

ইতিমধ্যে ব্রিটেনের অন্যতম গাড়ি কোম্পানি জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার জানিয়েছে, তারা এখন আর আমেরিকায় গাড়ি পাঠাবে না। অন্তত এক মাসের জন্য সেখানে গাড়ি রপ্তানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপের সিদ্ধান্ত কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই পথই এখন খুঁজে বের করতে হবে। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার পর যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে ভাবিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এই আবহে আজ সোমবার বড় ঘোষণা দিতে পারেন তিনি। দ্য টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবারের ভাষণে বিশ্বায়নের যুগ শেষ বলে ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

ভারত

বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ বিচার করা হলে দেখা যাবে, অর্থনৈতিক কূটনীতিতে ভারত সবচেয়ে এগিয়ে। সেই ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় থেকেই দেশটি এ বিষয়ে তৎপর। ট্রাম্প আগে থেকেই ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ আখ্যা দেন। ফলে আগেভাগে ব্যবস্থা না নিলে ভারত যে বিপদে পড়বে, সেটা তারা আগে থেকেই জানত। ফলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই বেশ কিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক হ্রাস করেছে ভারত। সেই সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলও ভারত সফর করেছে।

সম্প্রতি ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য যেমন কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরিতে আরও শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে রয়টার্সের আরেক সাংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে রাজি হতে পারে ভারত।

ভারত এ ক্ষেত্রে বেশ কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে ২৬ মার্চ চার দিনের নয়াদিল্লি সফরে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বাধীন ওই প্রতিনিধিদল ভারতে আসার পরই শুল্ক প্রশ্নে ইতিবাচক ও নমনীয় বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

২৬ মার্চ লোকসভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের গড় আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ করা হয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ২০২৩ সালে ভারতের সরল গড় শুল্কহার ছিল ১৭ শতাংশ। ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের পর সরল গড় শিল্প শুল্ক ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

সম্প্রতি লোকসভায় অর্থ বিল পাসের সময়ে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যে ৬ শতাংশ করারোপ করা হতো, সেটাও তুলে নেওয়া হয়েছে। মূলত ইলন মাস্কের এক্স, গুগল ও মেটার ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হতো। বার্তা পরিষ্কার, সুর নরম করেছে নয়াদিল্লি।

এ ছাড়া চলতি বছরের বাজেটে মার্কিন মোটরসাইকেলে শুল্ক হ্রাস করেছে ভারত। তখন মার্কিন ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডসনের আমদানিতে ভারত আরও ১০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হারলে ডেভিডসনের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছিল ভারত। এবারের বাজেটে যা আরও কিছুটা কমানো হয়।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর আগে ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছিল, এ বিষয়ে আলোচনা চায় তারা। সেই আলোচনার জন্য এক থেকে তিন মাস সময় চায় তারা। এই কয়েক মাস তাদের চড়া শুল্কের হাত থেকে নিস্তার দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে তারা। ৪ এপ্রিল ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক টু ল্যামের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়।

ভিয়েতনাম সরকার আগেই জানিয়েছে, বিমান ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ আরও বেশি মার্কিন পণ্য ভিয়েতনামে আমদানির জন্য ব্যবস্থা নেবে তারা। পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানিগুলো যেন সহজে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যেও ব্যবস্থা নেবে তারা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টি ভালোভাবে নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক টু ল্যামের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি চুক্তি করতে চান। এর বিনিময়ে ভিয়েতনাম তাদের শুল্ক শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চায়।’ ট্রাম্প তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরও বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে তাঁর সঙ্গে বৈঠকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি।

বস্তুত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যে কজন বিশ্বনেতা প্রথমেই আলাপ করেছেন, টু ল্যাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যে গড় শুল্ক মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ তারা নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো, ভিয়েতনাম এখন তাদের মধ্যে অন্যতম। যদিও এই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা দীর্ঘ দুই দশক যুদ্ধ করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণার আগে থেকে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেয় ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে তারা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে সাময়িক চুক্তি করেছে। সেই সঙ্গে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করেছে। ইলন মাস্কের স্টারলিংক ভিয়েতনামে নতুন কোম্পানি খুলে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এমনকি ট্রাম্প অর্গানাইজেশন টু ল্যামের নিজ প্রদেশে ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে গলফ কোর্স তৈরি করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক হ র স কর শ ল ক আর প র ইলন ম স ক প রস ত ত এই শ ল ক ব যবস থ অবস থ ন ইউর প য় র জন য কর ছ ন মন ত র বল ছ ন আরও ব র ওপর আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।

শ্রমবাজারে দুর্বলতা

পাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।

মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।

ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।

পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নীতিসুদ কী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।

কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।

নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।

সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ