ডিলারের ৩০ কেজি চাল দোকানে মেপে হলো ২৩
Published: 10th, April 2025 GMT
হোমনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জয়পুর ইউনিয়নের ডিলার মোশারফ হোসেন ওজনে কম চাল দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সরকারি সিলমোহরযুক্ত বস্তার পরিবর্তে বাজারের প্লাস্টিকের বস্তায় বালতি দিয়ে পরিমাপ করে চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু নিয়ম ছিল পাল্লা দিয়ে মেপে বা ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র দিয়ে মেপে দেওয়ার। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকে ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কথা, কিন্তু প্রতি বস্তায় সর্বনিম্ন ২৪ কেজি ও সর্বোচ্চ ২৭ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের নিয়োজিত ডিলার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
জয়পুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী ৩৮৫ জনের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল। এ দিন আব্দুল্লাপুর-খন্দকারচর, জয়পুর ও মির্জানগরে চাল বিতরণ করেন ডিলার মোশাররফ হোসেন। তিনি সরকার নির্ধারিত সিলমোহরযুক্ত বস্তা ব্যতীত সুবিধাভোগীদের প্লাস্টিকের বস্তায় ৩ বালতি করে চাল বিতরণ করেন। ১ বালতি ডিলারের মাপ অনুযায়ী ১০ কেজি, ৩ বালতি মানে ৩০ কেজি। কিন্তু চাল নেওয়ার পরে কার্ডধারীদের সন্দেহ হলে পাশের একটি দোকানে ওজন করে সর্বনিম্ন ২৪ কেজি ও সর্বোচ্চ ২৭ কেজি করে প্রতি বস্তায় চাল পান। পরে বস্তাভর্তি চাল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে গিয়ে প্রতিকার চান কার্ডধারীরা।
জয়পুর গ্রামের শাহিন মিয়া সমকালকে বলেন, সন্দেহ হলে পাশের দোকানে মেপে তাঁর বস্তায় ২৪ কেজি চাল পেয়েছেন।
কার্ডধারী শাহ আলমের মেয়ে শাহিনা আক্তার জানান, তাঁর বস্তায় পেয়েছেন ২৩ কেজি চাল।
আব্দুল মালেকের ছেলে শাহিন মিয়ার দাবি, তাঁর বস্তায় ৩০ কেজির জায়গায় ২৫ কেজি চাল দিয়েছেন ডিলার। সবগুলো বস্তায় চাল কম। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে প্রতিকার পেতে এসেছি। কিন্তু এখন চিন্তায় আছি আমাদের কার্ডের লিস্ট থেকে বাদ দেয় কিনা।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিলার মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরিমাপে কম দেই নাই। আমার বিরুদ্ধে একটা গ্রুপ আছে, সেই লোকেরা এগুলো করতেছে।’
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম সমকালকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা জানান, ডিলার ১০ কেজির বালতি দিয়ে মেপে দিয়েছেন, ওখানে মেশিন ছিল সেটা দিয়ে দিলে হয়তো এমন হতো না। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ল ব তরণ ক ৩০ ক জ জয়প র
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।