আমাদের বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি প্রবাদ আছে– ‘যদি জড়াও কোন্দলে, পইড়া যাইবা খোন্দলে।’ আঞ্চলিক ভাষায় ‘খোন্দল’ বলতে বড় কোনো গর্তকে বোঝায়। বহু বছর আগে যখন আমাদের এলাকায় লঞ্চে যাতায়াত করতে হতো, তখন দেখতাম ফেরিওয়ালারা একটি বই বিক্রি করত, ‘কী করিলে কী হয়’ নামে। তাতে মানুষের নানা কর্ম-অপকর্মের প্রতিফল লেখা থাকত। ইংরেজিতে একটি প্রবচন আছে– ‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল।’ বাংলায় বলা যায়– একতাই বল।
কথাগুলো ভাবছিলাম ১২ এপ্রিল সমকালের ‘দলীয় কোন্দলে আট মাসে ৫১ নেতাকর্মী নিহত’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদনটি পাঠ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের মধ্যে রেষারেষি, নেতাদের মধ্যে বিরোধ, মূল সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনের স্বার্থের দ্বন্দ্ব, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত আট মাসে সংঘর্ষে বিএনপির ৫১ নেতাকর্মী নিহত ও চার শতাধিক আহত হয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৮টি সংঘর্ষে এসব নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে দেশে সংঘটিত ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ৮৮টিই বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে ঘটেছে।
খবরটি স্বস্তিদায়ক নয়। বিশেষত, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে যে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে সুরক্ষা দিয়েছেন, মুক্ত পরিবেশে তারা যদি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হন, তাহলে তার পরিণাম শুভ হতে পারে না। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো রাজনৈতিক শক্তি এখন দেশে নেই। এমনকি বিএনপির বাইরের সব দল একত্র হলেও বিএনপির জনসমর্থনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে (যখনই অনুষ্ঠিত হোক) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলটির সরকার গঠনের বিষয়টিও এখন মোটামুটি নিশ্চিত। ঠিক সে সময়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং তৎপ্রেক্ষিতে হানাহানির খবর সংগত কারণে বিএনপির সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের হতাশ করবে। এমনিতে লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিএনপির একশ্রেণির নেতাকর্মীর দখল-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষের মনে দলটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিতে শুরু করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব অপরাধের জন্য প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো– তাদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না।
বহিষ্কার, সদস্যপদ স্থগিত ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দৃশ্যমান করতে পারেননি দলটির নেতারা। এই না পারা, কর্মী-নেতাদের একাংশের বেপরোয়া হয়ে ওঠাকে সচেতন ব্যক্তিরা দলটির জন্য অশুভ সংকেত বলে মনে করছেন। এরই মধ্যে বিএনপির বিরুদ্ধপক্ষ প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে যে, ‘ক্ষমতা’য় না যেতেই যে দলের কর্মীরা এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়, ক্ষমতা হাতে পেলে তারা কী করবে? যারা এমনটি ভাবছেন, তাদের দোষ দেওয়া যাবে না। কেননা, দলটির নেতাকর্মীর একাংশের কার্যকলাপ জনমনে এ সংশয়ের সৃষ্টি করেছে, যা ধীরে ধীরে বদ্ধমূল ধারণায় পরিণত হতে পারে। যদিও বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগবিহীন মাঠে ওয়াকওভার পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেছেন, তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। বিএনপির এক সময়ের মিত্র এবং আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন দলটির বিএনপিবিরোধী প্রচারণা থেকে বিষয়টি অনুধাবন করা যায়।
পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিএনপির জন্য গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। এই কোন্দল কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং রাজনৈতিক তত্ত্বে বলা হয়ে থাকে, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দলের সাংগঠনিক শক্তির বিকাশ ঘটায়। কিন্তু বিএনপিতে এখন যেটা চলছে, তা সাংগঠনিক শক্তির বিকাশের পরিবর্তে বিনাশ ঘটাচ্ছে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা যখন কোন্দলে রূপান্তরিত হয়, তখন তা রূপ নেয় সংঘাতে, ডেকে আনে বিপর্যয়। যদিও বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ সমকালকে বলেছেন, ‘দলের ভেতর প্রতিযোগিতা থাকবে। এটি স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা থেকে কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ কাম্য নয়।’ রিজভী আহমেদ কাম্য নয় বললেও সে ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে বিএনপিতে। দলটিতে এখন প্লাস নয়, মাইনাসের খেলা চলছে। কে কাকে মাইনাস করে জায়গা দখল করবে তা নিয়ে যত গোলমাল।
এ কথা অস্বীকার করার জো নেই যে, দেশব্যাপী বিএনপিতে এখন বিরাজ করছে সর্বনাশা বিভক্তি। দলটিকে যারা পছন্দ করেন এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, এই বিভক্তি তাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একাধিক গ্রুপ পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে আছে। আমার নিজের এলাকা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর-সিরাজদীখান উপজেলায় কমপক্ষে তিনটি পরস্পরবিরোধী গ্রুপ সক্রিয়। সব জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচি তারা পালন করে পৃথকভাবে। এখানে আবার একজনকে বলা হচ্ছে ‘মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের কাণ্ডারি’ হিসেবে। দলটির এক সমর্থক সেদিন বললেন, ‘আমি মনে করি বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী-সমর্থকই একেকজন কাণ্ডারি। সে ক্ষেত্রে একজন বিশেষ ব্যক্তিকে এই আসনের কাণ্ডারি বলা হবে কেন?’ এই কেনর জবাব তো দলটির বাইরের কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে প্রচার করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিকে নাকি দলের হাইকমান্ড থেকে ওই আসনের এমপি প্রার্থী হিসেবে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হয়েছে। তিনি সে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে নিজের আসন পোক্ত করতে অন্যদের জন্য রেড সিগন্যাল জ্বালিয়ে দিয়েছেন। উপজেলা-ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে শুধু নিজের সমর্থকদেরই ঠাঁই দিয়েছেন। ফলে অনিবার্য কারণে জন্ম নিয়েছে কোন্দল। সমকালের প্রতিবেদনে বিএনপির যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তার মূলে রয়েছে এ ধরনের সিগন্যাল।
দীর্ঘদিন নির্যাতিত হওয়ার পর বিএনপির সামনে যে ‘সম্ভাবনার দুয়ার’ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, কোন্দলের খোন্দলে পড়ে তা যেন ধূলিসাৎ না হয়, দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের সেদিকে মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন সচেতন ব্যক্তিরা।
মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত র ন ত কর ম র র জন ত ক ক ন দল র ব এনপ র র জন য খ ন দল দলট র গঠন র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।