রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা। কয়েক দশক ধরে মরা পদ্মা নদী পারাপারে খেয়া নৌকাই ভরসা দৌলতদিয়া ও উজান চরবাসীর। ঝড়-বৃষ্টিসহ নানা কারণে মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে খেয়া নৌকার চলাচল। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায় চরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর জেলার সীমানাঘেঁষে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন। পদ্মাপারের বিস্তীর্ণ এ ইউনিয়নে নানা ধরনের ফসল উৎপাদনের আদর্শ অঞ্চল। পরিবহন সমস্যায় উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। এ ইউনিয়নের একটি গ্রাম দড়াপের ডাঙ্গী। মরা পদ্মা নদী পার হলেই স্কুল-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবুও একটি সেতুর কারণে দড়াপের ডাঙ্গী গ্রামের অসংখ্য শিশু-কিশোরের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে ৭-৮ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নবাসী সরাসরি উপকৃত হবেন। ফরিদপুর জেলা শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামতলার হাট, মমিনখার হাটসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে দুই ইউনিয়নের চর এলাকার বাসিন্দাদের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বদলে যাবে এলাকার কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি। 

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে উজানচর ইউনিয়নের দড়াপের ডাঙ্গী এলাকায় ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া মেলেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো.

কামাল হোসেন জানান, তাদের এ এলাকাটি কৃষিনির্ভর। প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়। পরিবহন সমস্যার কারণে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। মালপত্র পরিবহন করা খুব কষ্টকর। তিনি বলেন, একটি সেতু নির্মাণ করা হলে তাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে চরের হাজার হাজার বাসিন্দার। 

জামতলা দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী ইনসানা আক্তার ও লামিয়া আক্তার জানায়, তাদের মতো চর এলাকার কয়েকশ ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন খেয়া নৌকা পাড়ি দিয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতে যায়। সময়মতো খেয়া ধরতে না পারলে ঘাটে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। আবহাওয়া খারাপ হলে স্কুলেও যাওয়া হয় না। এতে তাদের স্বাভাবিক পড়াশোনা ব্যাহত হয়। 

খেয়াঘাটের মাঝি শাকিল শেখ জানান, ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও সামান্য বাতাসে নৌকা পারাপার বন্ধ থাকে। এ ছাড়া মরা পদ্মা নদীতে থাকা ঘন কচুরিপানার কারণে চলাচলের পথ বন্ধ হয়েও মাঝেমধ্যে পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এখন প্রায় সব জায়গায় ব্রিজ হয়ে গেছে। শুধু এখানে হলো না। চরবাসীর দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখতে পাই। এখানে ব্রিজটি হলে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ থেকে বেঁচে যেত। 

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল জাহাঙ্গীর স্বপ্নিল বলেন, মরা পদ্মা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ হওয়াটা খুব জরুরি। সেখানে এতদিনেও সেতু না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। 

গোয়ালন্দের ইউএনও মো. নাহিদুর রহমান জানান, চর এলাকার মানুষের সুবিধার্থে দরাপের ডাঙ্গী এলাকায় সেতু নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়াসহ সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ